জয়পুরহাট প্রতিনিধি
জয়পুরহাটের কচুর লতি এখন দেশের বাজার ছাড়িয়ে বিশ্ববাজারে। আর এর মাধ্যমে শুধু বাংলাদেশকেই নয়, বরং এখন জয়পুরহাটের পরিচয় বহনে দেশের পাশাপাশি বিশ্বের বুকেও বেশ ভুমিকা রাখছে কচুর লতি। দেশের এই অর্থকরী ফসল হিসাবে মর্যাদা লাভ করায় এখন জেলা ব্র্যান্ডিং হিসাবেও স্থান পেয়েছে এ জেলায়। অন্য ফসলের তুলনায় লাভজনক বেশি হওয়ায় কৃষকরা এই ফসল চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক বেশি। কচুর লতি দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন ইউরোপ, আমিরিকা, সৌদি আরবসহ দেশের প্রায় ২৫টি দেশে এই লতি রফতানি করা হচ্ছে।
জয়পুরহাটের পাচঁবিবি উপজেলার পাটার পাড়া গ্রামের সর্বপ্রথম কচুর লতি চাষ করা কৃষক আমির উদ্দিন দৈনিক অধিকারকে বলেন, আমিই প্রথম এখানে কচুর লতি চাষ শুরু করি। প্রথমে আমি এক বিশ শতাংশ জমিতে এই লতির চাষ শুরু করি। তারপর এটি অন্য ফসলের তুলনায় এটি বেশি লাভজনক হওয়ায় আমি পরের বছর আরও দুই বিঘা জমিতে লতি লাগায়। আর তাতেও ফলন ও দাম ভালো পাই। আমার এই ফসলে লাভবান হওয়া দেখে এলাকার আতোয়ার, শফিকুল, আব্দুর আত্তার তারাও তাদের জমিতে এর চাষ শুরু করে। এরপর এলাকা থেকে লতির বিজ নিয়ে এখন পাঁচবিবি উপজেলাসহ জয়পুরহাট জেলার এখন অনেক কৃষকই এই লাতির চাষ করছে।
পাটারপাড়া গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এই ফসলটিতে খরচ কম লাগে এবং ফলন ও দাম উভয় ভালো পাওয়া যায়, তাই আমরা অন্য ফসল বাদে লতিরাজ কচুই চাষ করি। আমাদের এক বিঘা জমিতে কচুর লতি চাষ করতে মোট খরচ হয়েছে ১২হাজার টাকার মতো সেখান থেকে লতি বিক্রি করেছি ৫৫হাজার টাকা। সেখান থেকে হাজার দশেক টাকা বিক্রি হবে বলে ধারনা করছি।
সমস্যাবাদ গ্রামের লতি চাষি আব্দুল সালাম বলেন, অন্য ফসলের তুলনায় সেচ, ঔষধ, আর পরিচর্যাও অনেক কম করতে হয়। অর্থাৎ কম খরচে বেশি লাভ হয় তাই আমরা এই এলাকার মানুষেরা অন্যান্য ফসল চাষ না করে এই কচু চাষ করি। তিনি বলেন আমাদের এলাকার অনেকেই এই লতি চাষ করে সাবলম্বী হয়েছেন। শুধু তাই নয় এই লতি আমাদের দেশকে যেমন পরিচিত করাতে ভূমিকা রাখছে তেমনি আমাদের জয়পুরহাটকেও বিশ্বের বুকে পরিচিত করে তুলছে।
অন্যদিকে এই কচুর লতি বেচাকেনার জন্য ও তা প্রক্রিয়াজাত করনে প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কাজ করে এর মাধ্যমেই স্বল্প আয়ের মানুষেরা তাদের ছেলে মেয়েদেরকে পড়াশোনাসহ তাদের সংসার চালাচ্ছে। এই বাজারে কাজ করতে আসা আল আমিন বলেন, আমি এই বাজারে লতি বাছায়ের কাজ করছি প্রায় পাঁচ বছর ধরে। এখান থেকে যা পাই তা দিয়েই আমার সংসার ভালোভাবেই চলে যায়।
তবে ব্যবসায়ী ও কৃষকদের কিছু অভিযোগ ও রয়েছে তারা বলেন, শুধু কৃষি বিভাগের পরামর্শ ছাড়া অন্য কোনো প্রকার সহায়তা পাচ্ছেন না তারা। আবার এই বটতলী বাজরটাও অস্থায়ী। তারওপর এই বাজারটি বপাইকারদের জিম্মি থাকায় আমরা কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছি আমাদের ন্যার্য মূল্য পাওয়া থেকে।
তারা আরও বলেন, এখানে যদি সরকারিভাবে একটি বাজারজাত করনের প্রক্রিয়াকরনের ব্যবস্থা কিংবা এখানে যদি সবজি সংরক্ষনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে আমরা আমাদের নায্য মূল্য পেতাম।
পাচঁবিবি পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, রফতানিযোগ্য কচুর লতি চাষে কৃষকদের পাশাপাশি ব্যবসায়ী ও তৃণমূল পার্যায়ে শ্রমজীবিরাও লাভবান হচ্ছেন আর তাই তাদের কথা মাথায় রেখে এই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকে স্থায়ীকরনের লক্ষে এখানে একটি আধুনিক মানের বাজার গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে এখানে কচুর লতি রফতানি প্রক্রিয়াজাতকরণ জোন করার একটি প্রস্তাবনা ইতি মধ্যেই জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় দৈনিক অধিকারকে জানান, কচুরলতি অত্যান্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর সবজি, সেই সঙ্গে ঢাকাসহ সারা বিশ্বে এর চাহিদা ও অনেক। বর্তমানে বিশ্বের ২৫টি দেশে এই লতি রফতানি করা হচ্ছে। আর এই লতি চাষ করে এই এলাকার প্রায় পাঁচ শতাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের তৈরী হয়েছে। এ বছর জয়পুরহাটের পাচঁবিবিতে ১২শ হেক্টর জমিতে কচুর লতির আবাদ করা হয়েছে। আগামী থেকে এই লতিরাজ কচুর চাষ বৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড