মো. কামরুল ইসলাম মোস্তফা, চন্দনাইশ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
মৌসুম শুরু হতেই বাজারে আসতে শুরু করেছে স্বাস্থ্যসম্মত চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারা। স্বাদে-পুষ্টিতে ভরপুর চন্দনাইশের কাঞ্চন পেয়ারার কদর রয়েছে দেশব্যাপি।
চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভা, কাঞ্চনাবাদ, হাশিমপুর ও ধোপাছড়ি ইউনিয়নের পাহাড়ী এলাকায় ব্যাপকভাবে এই পেয়ারার চাষ হয়। তবে সবচেয়ে বেশি চাষ হয় কাঞ্চনাবাদ ইউনিয়নে। এ কারণেই মূলত এখানকার এই পেয়ারা কাঞ্চন পেয়ারা নামে পরিচিতি লাভ করেছে।
চন্দনাইশে উৎপাদিত পেয়ারা আকারে বড়, দেখতে সুন্দর, বিচি কম, রসালো, পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ ও সু-স্বাদু হওয়ায় এই পেয়ারা চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা এসে এই পেয়ারা কিনে ট্রাকে করে নিয়ে গিয়ে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরবরাহ করেন। শুধু তাই নয়, ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশের বাইরে তথা- মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন ও কুয়েতে রপ্তানি হয়।
চন্দনাইশ উপজেলার প্রায় সহস্রাধিক বাগানে কয়েক কয়েক হাজার মানুষ পেয়ারা চাষের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলে জানা গেছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে উৎপাদিত পেয়ারা জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা চার মাস ধরে পাওয়া যায়।
প্রতি বছর মৌসুম শুরু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাট-বাজারগুলোতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের আনাগোনা বেড়ে যায়। পেয়ারা বহন ও বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ১৫-২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, দোহাজারী পৌরসভা, বাগিচাহাট, গাছবাড়িয়া কলেজ গেইট, খান হাট, রৌশন হাট, বাদামতল, কাঞ্চননগর রেল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় প্রতিদিন ভোর থেকে পেয়ারার পাইকারি বাজার বসে। এখানকার চাষিরা অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে গভীর রাতে দল বেঁধে পাহাড়ের পাদদেশে পেয়ারা সংগ্রহ করতে বাগানে চলে যান। ভোরের আলো ফুটতেই কাঁধে করে পেয়ারার ভার নিয়ে পাঁচ/ছয় কিলোমিটার মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে অস্থায়ী বাজারে আসেন পেয়ারা বিক্রির উদ্দেশ্যে।
লালসালু কাপড় দিয়ে মোড়ানো পুঁটলিতে বাঁধা অবস্থায় থরে থরে সাজানো থাকে পেয়ারার ভারগুলো। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা ভার কিংবা শ' হিসেবে কিনে নিলেও বাজারে খুচরা বিক্রি করেন ডজন হিসেবে। বড় সাইজের প্রতি ডজন পেয়ারা ৮০-১০০ টাকা, মাঝারি সাইজের পেয়ারা ৬০/৭০ টাকা এবং ছোট সাইজের পেয়ারা ৪০/৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচলরত কোনো যানবাহন থামলেই পেয়ারা হাতে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতারা দৌড়ে যায় সেটির কাছে। যাত্রীরাও লোভ সামলাতে না পেরে স্বাচ্ছন্দ্যে কিনে নিচ্ছেন স্বাস্থ্যসম্মত কাঞ্চন পেয়ারা। মৌসুমের শুরু হওয়ায় বর্তমানে দাম কিছুটা বেশি। মাঝামাঝি সময়ে দাম কমলেও মৌসুমের শেষ দিকে আবারো পেয়ারার দাম বেশি হবে বলে জানান কয়েকজন পেয়ারা বিক্রেতা।
দক্ষিণ চট্টগ্রামে উৎপাদিত পেয়ারা সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার নির্মাণ ও সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পেয়ারা জুস কারখানা স্থাপণের দাবি জানিয়ে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা কৃষকলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবাব আলী বলেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামে উৎপাদিত পেয়ারা সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পাইকারি বাজারে পেয়ারা কিনতে আসা পাইকাররা সিন্ডিকেট করে নিজেদের ইচ্ছামত দামে পেয়ারা কিনে নিয়ে যায়। কোনো কোনো সময় পাইকারের বেঁধে দামে পেয়ারা বিক্রি করতে অস্বীকৃতি জানালে ওই দিন পেয়ারা নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় চাষিদের। হিমাগার না থাকায় সংরক্ষণের অভাবে এক প্রকার বাধ্য হয়েই পাইকারদের বেঁধে দেওয়া দামে পেয়ারা বিক্রি করতে হয় চাষিদের। এতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন পেয়ারা চাষিরা।
চন্দনাইশ উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মিলন কান্তি দাশ, রিনা আঞ্জুমান বানু ও লিটন দাশ জানান, কৃষি অফিস থেকে প্রতিবছর চাষিদের প্রচুর পরিমাণে পেয়ারা চারা বিতরণ করা হয়। পাহাড়ের পাদদেশে জমা হওয়া নতুন পলিমাটিতে পেয়ারার চাষ হয়। এই পলি খুবই উর্বর, ফলে পেয়ারা গাছের গোড়ায় কোনো ধরনের রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয় না। গাছে কোনো ধরনের কীটনাশকও ছিটানোর প্রয়োজন হয় না। গাছে ফুল আসার আগেই বাগান মালিকদের মালচিং পদ্ধতি অবলম্বন এবং পাহাড়ি ছড়ার পানি থেকে সেচ দেওয়ার পরামর্শ দিই আমরা। জৈব সারে উৎপাদিত বিধায় কাঞ্চন পেয়ারা স্বাস্থ্যসম্মত। চাষিরা ডাঁটা ও পাতাসহ এই পেয়ারা সংগ্রহ করে থাকেন। তাই ফরমালিন ও রাসায়নিক দ্রব্য মেশানো ছাড়াই চাঁর-পাঁচ দিন অনায়াসে সংরক্ষণ করা যায় এ পেয়ারা।
ওডি/এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড