শেরপুর প্রতিনিধি
শেরপুরে সর্বত্রই লেবুর আবাদ দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী, পাঠাকাটা, টালকী, অষ্টধর ও চন্দ্রকোনা ইউনিয়নগুলোর উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে বেলে বা বেলে-দোআঁশ মাটিতে লেবু চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। নামে মাত্র শ্রম ও উৎপাদন খরচ কম। ফলে লাভ বেশি পাওয়ায় লেবু চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। ইতোমধ্যে লেবু বিক্রি করে বাড়ি-গাড়িও করেছেন অনেকেই।
বর্তমানে দেশে অনেক জাতের লেবু চাষ হচ্ছে। এরমধ্যে কাগজি লেবু, পাতি লেবু, এলাচি লেবু, বাতাবি লেবু ছাড়াও নতুন জাতের বীজহীন (সিডলেস) হাইব্রিড লেবু ব্যাপকহারে চাষ হচ্ছে। সিডলেস লেবুতে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা অন্য আবাদ ছেড়ে ঝুঁকছেন এ লেবু চাষে। সিডলেস লেবু চাষ করে মাত্র ৪ বছরেই লাখপতি হয়েছেন নকলা উপজেলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের উত্তর বাছুরআলগা গ্রামের লুৎফর রহমান, তার ছোট ভাই মোস্তাক আহমেদ ও ভগ্নীপতি আবদুল হাসেমসহ উপজেলার অনেকে।
লেবু চাষি লুৎফর রহমান জানান, ২০১৬ সালে ৭৫ শতাংশ জমি বন্ধক নিয়ে ৩০৬টি সিডলেস লেবুর কলম করা চারা রোপণের মাধ্যমে লেবুচাষ শুরু করেন তিনি। চারা কেনা, রোপণ, জমি বন্ধক নেওয়া, জমি তৈরি, সেচ ও সারসহ অন্যান্য খরচ মিলে প্রথম বছর তার লক্ষাধিক টাকা ব্যয় হয়। পরের বছর ওইসব গাছে ফলন আসা শুরু হয়। ২০১৭ সালে তিনি ২ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেন। এভাবে ২০১৮ সালে তিনি প্রায় আড়াই লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন।
বর্তমানে তার বাগান রয়েছে দেড় একর জমিতে। এ বছর রোজার প্রথম দিকে লেবুর দাম ভালো থাকায় ৩ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দাম কমে যাওয়ার পরেও আরও অন্তত লাখ টাকার লেবু বিক্রি করা সম্ভব বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, লেবুর আয়ে তিনি জমি, বাড়ি ও গাড়ি করেছেন। এছাড়া লেবু চাষের মাধ্যমেই ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখা ও সংসার খরচ চলে তার। তার এমন সফলতা দেখে ছোট ভাই সিডলেস লেবুর বাগান করে সফল হয়েছেন।
আরও একজন লেবুচাষি আবদুল হাসেম জানান, তার ৭০ শতাংশ জমির লেবু বাগান থেকে তার মাসিক আয় হচ্ছে ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ হিসাব মতে বছরে তার আয় হয় ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা, যা অন্য কোনো আবাদে অসম্ভব।
চাষিরা জানান, এ সকল লেবুর বাগান পরিচর্যায় স্ত্রী ও সন্তানরা সহযোগিতা করায় শ্রমিক ব্যয় কম হয়। রোপণের বছর বাদে প্রতি বছর একবার ডালপালা ছাটা, মাটি কোপানো, প্রতি ৩ মাসে একবার নিড়ানি ও ২ থেকে ৩ মাস অন্তর সেচ ও সামান্য জৈব সার দিতে হয়। ফলে একরে বার্ষিক খরচ হয় মাত্র ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা। আর এক একর জমির লেবুতে আয় হয় কমপক্ষে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকা। তাছাড়া নিজের উৎপাদিত কলম চারা দিয়ে নতুন বাগান তৈরি করা ছাড়াও প্রতিটি কলম করা চারা ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে বিক্রি করতে পারেন।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, লেবুচাষ লাভজনক হওয়ায় এরই মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অসংখ্য বাগান গড়ে উঠেছে। অধিক লাভজনক এ লেবু বাড়ির আঙিনাসহ পতিত জমিতে চাষ করেও যে কেউ স্বাবলম্বী হতে পারেন। তাই কৃষি বিভাগ থেকে লেবু বাগানের মালিকদের নিয়মিত পরার্মশ সেবা দেওয়া হচ্ছে।
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড