ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
সরকারি ভাবে গম ক্রয় শুরু এবং উৎপাদন খরচ না ওঠায় গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকেরা। বিগত কয়েক বছর সরকারের কাছে গম বিক্রি করতে না পারাসহ ক্রমাগত লোকসানে পরে এখন অন্য ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন তারা।
কৃষি বিভাগও বাজারে দাম না পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে গম উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। তবে এ অবস্থা কাটাতে উন্নত জাতের গম আবাদের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।
ঠাকুরগাঁওয়ে কৃষিজাত ফসলের অন্যতম আবাদ ছিল গম। সারা দেশের গম উৎপাদনের পাঁচ ভাগের এক ভাগ গম উৎপাদন হতো ঠাকুরগাঁও জেলায়। শীত দীর্ঘ মেয়াদী থাকাসহ আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ জেলায় গমেরও বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু সরকারের ঘোষিত ন্যায্য দরে সংগ্রহ অভিযানে গম দিতে না পারা, বাজার নিম্নমুখী হওয়ায় ক্রমাগত লোকসান গুণতে হয়েছে চাষিদের। তাই এ জেলায় গমের আবাদও কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। কৃষকদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচ না ওঠায় গমের আবাদ থেকে মুখ ফেরাচ্ছেন কৃষকেরা। তাই এখন বিকল্প ফসল উৎপাদনে ঝুঁকছেন তারা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও গ্রামের কৃষক মোবারক বলেন, গত বছর গমের আবাদ করেছি পাঁচ বিঘা জমিতে এবার তা কমিয়ে এক বিঘা জমিতে চাষ করেছি।
সদর উপজেলার নারগুন গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, গমের ফলন কমছে। তারপর গম বিক্রি করে দাম কম পাই। খরচও ওঠেনা।
ওই উপজেলার কালমেঘ গ্রামের চাষি আলী আকবর বলেন, সরকারের গম সংগ্রহে কৃষকরা গম দিতে পারে না। সরকার গমের উচ্চ দাম ঘোষণা করলেও এর সুফল পায় সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। তাই গম চাষে আগ্রহ তেমন নাই।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি বছর জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে গম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও আবাদ হয়েছে ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৭ হাজার হেক্টর কম। আর এবার এ থেকে গম উৎপাদন হবে এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। আর গেল বছর গমের আবাদ হয়েছিল ৬৭ হাজার হেক্টর জমিতে, এতে উৎপাদন হয় দুই লাখ ২৩ হাজার মেট্রিক টন গম। সেই হিসাবে গত বছরের চেয়ে এবার এ জেলায় গম উৎপাদন কম হবে ৫৮ হাজার মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, শীতের দীর্ঘতা কমছে। জলবায়ুর পরিবর্তনে উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পাচ্ছে আর বাজারে দাম কম থাকায় চাষিরা গম চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। তবে, উন্নত জাতের গম চাষের আগ্রহ সৃষ্টি করতে কৃষি বিভাগের উদ্যোগ আছে বলে জানায় কৃষিবিদ আফতাব হোসেন।
গমের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করে চাষিদের গম আবাদে উৎসাহ প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা না করলে আগামীতে এ জেলায় গম আবাদে ভাটা পড়বে। ফলে গম উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ঠাকুরগাঁওয়ে গম চাষে আগ্রহ বাড়াতে কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সদর উপজেলার বেগুনবাড়ি পাইকপাড়া এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে কৃষিবিদগণ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী উষ্ণতা বেড়েছে, ফলে গমের উৎপাদন কমছে। গম উৎপাদন হ্রাস পাওয়া ও নানা রোগবালাইয়ের কারণে গম চাষ থেকে কৃষকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু উদ্ভাবকরাও উষ্ণতা সহিষ্ণু কিছু জাতের গম বীজ আনছেন। যার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে গমের আবাদ বাড়ানোর পরামর্শ দেন কৃষিবিদগণ।
এ সময় কৃষকদের বারী-৩০ জাতের গমের প্রদর্শনী প্লটের গমের ক্ষেত ও ফলন মাড়াই করে দেখানো হয়।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড