অধিকার ডেস্ক ২৬ মার্চ ২০১৯, ১৬:৩১
আফ্রিকা মহাদেশের কৃষিতে চরম বিপর্যয় সৃষ্টির পর এবার বিপজ্জনক ফসলবিধ্বংসী পোকা ‘ফল আর্মিওয়ার্ম’ বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। কিন্তু এই পোকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এখনও বাংলাদেশ প্রস্তুত নয়। এমনকি জানাও নেই এর কার্যকর অস্ত্র কী হতে পারে! ফলে কৃষি সংশ্লিষ্টরা একে কৃষির জন্য বিপদসঙ্কেত হিসেবে দেখছেন ।
আমেরিকা মহাদেশে পোকাটি প্রথম শনাক্ত হয়। এরপরই এরা দ্রুত অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের কৃষিতে এই পোকার আক্রমণ শুরু হয়। এরপর ২০১৭ সালের প্রথম দিকে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলে ফসলহানি করে সে অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি করে।
কৃষিবিদরা জানান, এই পোকার সংক্রমণ দেখা দিলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ফসলের ক্ষেত পুরোটাই নষ্ট হয়ে যায়। আর বাংলাদেশের আবহাওয়া আর যে ধরনের ফসল চাষ হয়, এই পোকার বংশবিস্তারের জন্য এটি আদর্শ জায়গা হতে পারে।
মেহেরপুরের কৃষি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই ভুট্টাসহ বেশকিছু ফসলের ক্ষেতে এই পোকার আক্রমণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কীটনাশক প্রয়োগ করেও এই পোকা নিধন করা যাচ্ছে না। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি ভারতের কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু রাজ্যেও এ পোকার আক্রমণ দেখা যায়।
এই পোকার জীবনচক্র বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এটি দিনে ১০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে। খুব দ্রুত এরা বংশবিস্তার করতে পারে। এটি ভুট্টা, তুলা, বাদাম, তামাক, ধান, বিভিন্ন ধরনের ফলসহ প্রায় ৮০টি ফসলে আক্রমণ করে থাকে। তবে ভুট্টাতে এই পোকার আক্রমণের হার সর্বাধিক।
গত বছর থেকে ভয়ানক এই পোকা দেশের বেশকিছু জায়গায় প্রভাব বিস্তার করে ফেলেছে। এর মধ্যে মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ এবং চুয়াডাঙ্গাতে ফসল ধ্বংস করার খবর পাওয়া গেছে। আবহাওয়া এবং ফসলের ধরনের কারণে বাংলাদেশ এই পোকার আদর্শ স্থান হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা। এ দেশের অধিকাংশ ফসলই ঘাসজাতীয় এবং পোকা এসব ফসলেই বেশি আক্রমণ করে থাকে। ফলে আমাদের দেশের ফসলের ক্ষেতে পোকাটির বিস্তারের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এই পোকাগুলো শুককীট থাকা অবস্থায় গাছের পাতা ও ফল খেয়ে থাকে। প্রথম দিকে এদের খাদ্য চাহিদা অনেক কম থাকে, তবে তারা বড় হলে খাদ্য চাহিদা প্রায় ৫০ গুণ বাড়ে। একসময় এরা রাক্ষুসে হয়ে ওঠে। ফলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। এমনকি এরা এক রাতের মধ্যেই সব ফসল বিনষ্ট করে ফেলতে পারে।
জানা গেছে, ডিম ও পুত্তলি অবস্থায় বিভিন্ন উদ্ভিদজাত উপাদান যেমন বীজ, চারা, কলম, কন্দ, চারা সংলগ্ন মাটি ইত্যাদির মাধ্যমে পোকাটি বিস্তার লাভ করতে পারে। পূর্ণাঙ্গ পোকা অনেক দূর পর্যন্ত উড়তে পারে। এমনকি এরা ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে কয়েক শত কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তারলাভ করতে পারে।
এর জীবনচক্রে চারটি ধাপ রয়েছে- গ্রীষ্মকালে ৩০ থেকে ৩৫ দিন এবং শীতকালে ৭০ থেকে ৮০ দিনে তারা জীবনচক্র সম্পন্ন করে। এর মধ্যে ডিম ৩ থেকে ৫ দিন, শুককীট ১৪ থেকে ২৮ দিন, পুত্তলি ৭ থেকে ১৪ দিন এবং পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় ১১ থেকে ১৪ দিন অতিবাহিত করে। সাধারণত পাতার নিচের দিকে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে শুককীট বের হয়ে পাতা বা ফল খাওয়া শুরু করে।
এই পোকাটি আমেরিকা ও কানাডায় শনাক্ত হলেও কীটনাশক দিয়ে একে দমন করা সম্ভব হয়নি বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। দেশের কয়েকটি অঞ্চলের কৃষকরা ফসল বাঁচাতে এই পোকা বের করে খুঁজে সুচ ও স্বর্ণা দিয়ে মেরে ফেলছে। তারা অন্য কোনো উপায়ও খুঁজে পাচ্ছে না।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আখতারুজ্জামান বলেন, বিধ্বংসী এই পোকাটি ফসলের শতভাগ ক্ষতি করতে পারে। কীটনাশক দিয়ে এই পোকা দমন করা বেশ কষ্টকর। একে দেখা মাত্রই হাত দিয়ে মেরে ফেলতে হবে। সেটি না হলে তা দ্রুত বংশবিস্তার করবে অথবা একে জমিতে প্লাবন সেচ দিতে হবে।
তবে এই পোকা মাটির নিচে থাকলে কিছুটা নির্মূল করা সম্ভব বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। সেটি না হলে ভয়ানক অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। ইতোমধ্যেই কৃষি বিভাগ বিষয়টি নিয়ে বেশ তৎপর রয়েছে। পোকাটি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সেজন্যও তারা কাজ করছে। পাশাপাশি এই পোকা দমনে কৃষকদের মধ্যে ফেরোমন ফাঁদ সরবরাহ করা হচ্ছে।
অন্যদিকে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কীটতত্ত্ব বিশেষজ্ঞ বলেন, বাংলাদেশের ‘আর্মিওয়ার্ম’ প্রতিরোধে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। এই অবস্থায় যদি কোনোভাবে দেশজুড়ে এ পোকার বিস্তার ঘটে, তাহলে সে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এই পোকা দমনে শিগগিরই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে কৃষিতে যেকোনো সময় বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলেও তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
ওডি/টিএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড