• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মুন্সীগঞ্জে আলুর বাম্পার ফলন, ন্যায্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় চাষিরা

  মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি

১৬ মার্চ ২০১৯, ১৫:২৭
আলু
মুন্সীগঞ্জে আলুর বাম্পার ফলন (ছবি : দৈনিক অধিকার)

মুন্সীগঞ্জে এ মৌসুমে মার্চ মাসের শুরুতে আলু উত্তোলনের উৎসব শুরু হয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ও মার্চের শুরুতে অনুকূল আবহাওয়ার কারণে অনেক কৃষক আগেই আলু উত্তোলন করেছেন। তবে আবহাওয়ার দুশ্চিন্তা কাঁটিয়ে, নতুন করে আলুর ন্যায্যমূল্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন দেশের বৃহত্তর আলু উৎপন্নকারী জেলা মুন্সীগঞ্জের আলুচাষিরা।

জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল আলু জন্য দেশজুড়ে বিখ্যাত মুন্সীগঞ্জ। যার খ্যাতি দেশ-বিদেশজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্রমতে, জেলায় ৭৮ হাজার কৃষক পরিবার রয়েছে। এসব পরিবারের প্রায় ৪ লাখ ৬৮ হাজার সদস্য কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। অধিকাংশ পরিবারই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আলু আবাদে সংযুক্ত রয়েছে। পর পর চার মৌসুম আলু আবাদ করে লোকসানের মুখে পড়ে এ জেলার আলুচাষিরা। আলু আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে জেলার অনেক চাষি। বিগত কয়েকবছরের লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার জন্য অনেকেই ঋণ ও সুদে টাকা নিয়ে আলু আবাদ করেছেন। এ বছর লোকসানের মুখে পড়লে সহায়-সম্বল হারিয়ে পথে বসবে অনেক চাষি, এমনটাই জানালেন আলুচাষি কুদ্দুস বেপারী।

জেলার দিঘীরপাড়, শিলই, হাসাইল, বাংলাবাজার চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের সঙ্গে আলু তোলার কাজে কৃষাণি ও শিশুরাও নেমে পড়েছে মাঠে। আলু তোলার পর বস্তাবন্দি করা থেকে শুরু করে কোল্ডস্টোরেজ কিংবা বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।

আলুচাষি মোতালেব বেপারী জানান, মার্চের শুরুতেই জেলা সদরসহ বাকি উপজেলাগুলোতেও আলু উত্তোলনের শুরু হয়। এছাড়া এবার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। বিগত ৪ বছর লোকসানের মুখ দেখলেও এবার আলু চাষিরা আশায় বুক বেঁধে আছেন। ন্যায্যমূল্য পেলে বিগত মৌসুমের লোকসান কিছুটা পূরণ করা সম্ভব।

আলুচাষি আদম হোসেন জানান, গেল ৪ বছর মুন্সীগঞ্জে আলু চাষ করে বস্তা প্রতি ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা লোকসান হয়েছে তাদের। বিগত ৪ বছরও আলুর বাম্পার ফলন হয়েছিল। কিন্তু কৃষকরা আলুতে ন্যায্য দাম পায়নি। কৃষকরা আলু উৎপাদন করে লোকসানের কবলে পড়ে সর্বশান্ত হয়েছিল বলেও তিনি জানান।

আলুচাষি কাশেম মাদবর জানান, ৩০০ থেকে ৩১০ টাকা মণ প্রতি আলু বিক্রয় হচ্ছে। এখনো পাইকার জমিতে নামেননি। আশা করি দুয়েকদিনের মধ্য পাইকারদের দেখা মিলবে, তবেই আলুর ন্যায্যমূল্য পাব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হুমায়ুন কবির জানান, এবার চলতি মৌসুমে মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার চরাঞ্চলসহ ৬ উপজেলায় ৩৮ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত বছর আলু আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। গত মৌসুমে ১৩ লাখ ৫১ হাজার ১শ ২৯ মেট্রিকটন আলু উৎপন্ন হয়। তবে এ মৌসুমে ভালো ফলন হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলায় ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টন আলু বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়। জেলার ৭৪ টি হিমাগারে ধারণ ক্ষমতা ৫ লাখ মেট্রিকটন। বাকি আলু বিভিন্নভাবে সংরক্ষণসহ কম মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

গত ৪ বছর দেশের বিভিন্ন জেলায় আলু উৎপাদন চাহিদার চেয়ে বেশি হওয়ায় মুন্সীগঞ্জের আলু ব্যবসায়ীরা বস্তাপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা লোকসানের শিকার হয়েছেন।

অন্যদিকে প্রতি মৌসুমে আলু রোপন ও উত্তোলনকে কেন্দ্র করে উত্তরবঙ্গ থেকে অনেক নারী-পুরুষ শ্রমিক মুন্সীগঞ্জে কাজের জন্য চলে আসেন। তাদের চাহিদা থাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে উত্তরবঙ্গের শ্রমিকরা আলু রোপন ও উত্তোলন পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জে ৬ মাস অবস্থান করেন। আবার কেউ কেউ আলু রোপনের পর বাড়ি ফিরে যায় এবং উত্তোলনের সময় আবার মুন্সীগঞ্জে আসেন। এ আলু উত্তোলনকে সামনে রেখে মুন্সীগঞ্জ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ১৮ হাজার শ্রমিক কাজ করবে। তারা অভিযোগ করেন, প্রতিদিন আমাদের মজুরি দেওয়া হয় ২০০-৩৫০ টাকা। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিকদের মজুরি দেওয়া হচ্ছে ৪০০-৫০০ টাকা করে। শ্রমিকদের মজুরির বৈষম্য নিয়ে তারা হতাশা প্রকাশ করেন।

বিগত ৪ বছরের লোকসানের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে নাকি এ বছর আলুর ন্যায্যমূল্য পাবে মুন্সীগঞ্জের আলু চাষিরা। এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনরাত্রি পার করছে মুন্সীগঞ্জের আলুচাষিরা।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড