• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বাণিজ্যিকভাবে মৌচাষে আগ্রহ বাড়ছে জয়পুরহাটের চাষিদের

  জয়পুরহাট

২০ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৫৫
মৌচাষ (দৈনিক অধিকার)

অগ্রহায়ণ মাস থেকেই মধু সংগ্রহের মৌসুম শুরু হয়েছে আর এখন শীতের পৌষে ভরা মৌসুমে চলছে প্রাকৃতিকভাবে মধু সংগ্রহ। মৌমাছি আর কৃষকের ব্যস্ততা যেন প্রকৃতির নয়নাভিরাম সরিষা ফুলের হলুদ রঙে একাকার হয়েছে এলাকা। আর সেখানে অজ সহস্র ফুল থেকে মধু আহরণ করে মৌচাকে জমা করছে মৌমাছির দল। এতে মৌচাষিরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। পাশাপাশি সরিষার পরাগায়নের জন্য মৌমাছি বড় ধরনের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। মৌমাছির মধু সংগ্রহের মাধ্যমে শতকরা ২০-৩০ ভাগ পর্যন্ত পরাগায়নের বৃদ্ধি পায় এবং সরিষার ফলনও ভালো হয়। এতে কৃষক বাড়তি উপার্জনসহ পরাগায়নের মাধ্যমে জমিতে বাড়তি ফসল উৎপাদন করছে।

মধু সেবন মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী ও ওষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় বাজারে রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা। তার মধ্যে নির্ভেজাল মধুপ্রেমীর সংখ্যা আরও বেশি। জয়পুরহাটে বানিজ্যিকভাবে মৌচাষে আগ্রহ বাড়ছে ক্ষুদ্র উদ্যোগক্তাদের। বেকার যুবক ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা মৌচাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন গ্রামে, বাড়িতে, পাশের জমিতে ও সরিষা ক্ষেতের পাশে প্রায় ৮০০টি বক্সে মৌমাছির চাষ হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত মধুর গুণগত মান ভালো হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলসহ দেশ-বিদেশের ছোট-বড় কোম্পানিগুলোতে ।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ভাদসা জলিল পাড়া গ্রামের শাহজাহান আলী ও তার স্ত্রী নিজের চেষ্টায় ১৯৯৯ সালে বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজ বাড়িতে ৪টি বক্সে প্রথম শুরু করেন মৌ-চাষ। তার দেখাদেখি জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেড়েই চলেছে মৌচাষ। সদর উপজেলার পুরানাপৈল দস্তপুর, শালগ্রাম জামালপুর, ভাদসা, মোহাম্মদাবাদ, আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ভিকনী ও হরিপুরসহ জেলার ৫০ থেকে ৬০টি গ্রামে প্রায় ২৫০ জন মৌয়াল মৌচাষে যুক্ত আছে। এ মৌসুমে প্রতি বক্সে মধু উৎপাদন হয় ৪০ থেকে ৫০ কেজি আর এতে খরচ হয় ১ হাজার থেকে ১৫০০ টাকা। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে মধু উৎপাদন হবে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ মন। চাষিদের কাছ থেকে খুচরা প্রতিকেজি মধু বিক্রি হচ্ছে ৩শ থেকে ৪শ টাকা।

সদর উপজেলার ভাদসা জলিল পাড়া গ্রামের মৌচাষি শাহজাহান আলী, পুরানাপৈল ইউনিয়নের দস্তপুর গ্রামের আপেল মাহমুদ, আক্কেলপুর উপজেলার গোপিনাথপুর ইউনিয়নের ভিকনী গ্রামের আনোয়ার হোসেন ও হরিপুর গ্রামের তাহের আলী জানান, এখানকার উৎপাদিত মধু জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট-বড় কোম্পানিতে সরবরাহ হচ্ছে এবং দেশের বাহিরেও চলে যাচ্ছে। তবে মধুর নির্ধারিত বাজার মূল্য না থাকায় ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা। তাই সরকারীভাবে অথবা কোম্পানির মাধ্যমে নির্ধারিত দামে মধু কিনলে আরও লাভবান ও আগ্রহী হবেন এখানকার মৌচাষিরা।

মধু কিনতে আসা ক্রেতা রানা হোসেন, মিজানুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকেই জানান, এখানে প্রাকৃতিকভাবে ভেজালমুক্ত মধু স্বল্প দামে কিনতে পেরে আমরা বেশ খুশি ।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় বলেন, জেলার অনেক জায়গায় সরিষার ক্ষেতের পাশে মৌচাষ হচ্ছে। এর ফলে সরিষা ক্ষেতে মৌমাছি পরাগায়নের কারণে সরিষার ফলন ভালো হয় এবং মধু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

জয়পুরহাট বিসিকের উপব্যবস্থাপক মো. আকতারুল আলম চৌধুরী দৈনিক অধিকারকে বলেন, এবার জয়পুরহাটে প্রায় ২০০ জন মৌচাষি রয়েছে। তাদের ঋণ সহায়তা, নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং প্রায় ৮০০ বক্স সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারের অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। এই চাষ করে সহজেই এলাকার যুবক, কৃষক ও স্বল্প আয়ের মানুষেরা প্রচুর লাভবান হচ্ছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড