নিজস্ব প্রতিনিধি
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি) ফেজ-২ প্রকল্পের মাধ্যমে গঠিত সিআইজি সমবায় সমিতির কৃষক ও কৃষাণীরা আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। শেরপুরের নকলা উপজেলাটি একটি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত।
এই ১০টি এলাকার প্রতিটিতে ৩টি করে নারী ও ৭টি করে পুরুষ কৃষকদের নিয়ে সিআইজি সমবায় সমিতি গঠন করা হয়। প্রতি সমিতিতে সদস্য সংখ্যা ২০ জন করে। এতেকরে প্রতিটি ইউনিয়নের ২০০ জন কৃষক ও কৃষাণীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণসহ যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পেয়ে আসছেন। ফলে উপজেলায় ১০০টি সিআইজি কৃষক সমবায় সমিতির ২ হাজার সদস্য কৃষক পরিবার আজ আর্থিক ভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তারা সবাই বাড়ির আঙিনায় শাক সবজি চাষসহ বিভিন্ন শস্য উৎপাদন করে সফল হয়েছেন। বিশেষকরে এই প্রকল্পের আওতায় কৃষিতে নারীদের অংশ গ্রহন প্রশংসনীয়। উপজেলার প্রতিটি এলাকার নারীরা পুরুষদের সাথে পাল্লাদিয়ে কৃষি কাজ করছেন। ফলে নকলায় কৃষিতে উন্নয়ন হয়েছে। তাদের উৎপাদিত শাক সবজি ও অন্যান্য শস্য আবাদে কীটনাশকের পরিবর্তে জৈবসার ব্যবহার করে নারীরা এলাকায় সাড়া ফেলেছেন।
ভূরদী কৃষিপণ্য উৎপাদক কল্যাণ সংস্থার সদস্য তাহমিনা, রিপা, নাছিমা, চরকৈয়া এলাকার সিআইজি সমিতির সদস্য ছালেহাসহ অনেক নারী ও পুরুষ সদস্য জানান, কোন একসময় ওই এলাকায় শাক সবজি চাষ করা কষ্টসাধ্য ছিল, তাই তারা শাক সবজি চাষে তেমন আগ্রহীও ছিলেন না। তবে এখন তারা শাক সবজিসহ বিভিন্ন শস্য আবাদ করে উপজেলায় একনামে পরিচিতি পেয়েছেন। তারা বলেন, প্রতিটি ব্লকে কর্মরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা গ্রামের নারী ও পুরুষ কৃষকদের একত্র করে নারী পুরুষদের জন্য আলাদা সিআইজি সমবায় সমিতি গঠন করে দেন। তারা আমাদের বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষের জন্য উৎসাহিত করেন। এতে আমরা সফলতা পেয়ে আমাদের মাঠেও শাক সবজিসহ বিভিন্ন শস্য আবাদ করা শুরু করে সফল হইয়েছি। এখন উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম (এনএটিপি) ফেজ-২ প্রকল্পের সহযোগিতায় নারীরা নিজ নিজ বাড়ির আঙিনায় ও বসতবাড়ীর আশপাশে বছরব্যাপী বিভিন্ন শাক সবজি চাষসহ নানান জাতের শস্য উৎপাদন করছেন। এতে নকলার কৃষক --কৃষাণীরা উল্লেখ্যযোগ্য সাফল্য পেয়েছেন। এখন তাদের আর বাজারের বিষাক্ত শাক সবজি কিনে খেতে হচ্ছে না। তাতে স্থানীয়রা একদিকে নিরাপদ শাক সবজি পাচ্ছেন, অন্যদিকে সিআইজি সমিতির সদস্যদের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে, স্বাাবলম্বী হয়েছেন তারা। উপজেলার অন্তত ২ হাজার নারী-পুরুষ এই প্রকল্পের মাধ্যমে সার্বিক সহায়তা পেয়ে বছরব্যাপী শাক সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
চন্দ্রকোনা ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে এখানকার নারীদের উৎসাহ প্রদান করে বছরব্যাপী বিভিন্ন শাক সবজি চাষে আগ্রহ তৈরি করেছি। নারীরা বাড়ির আশপাশের পতিত জমি আবাদ করে বছরব্যাপী নানান জাতের সবজি উৎপাদন করছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে বেশ টাকা আয় করছেন তারা। সিআইজি সমিতির সদস্যদের সফলতা দেখে অন্যান্য কৃষকরাও আগ্রহী হয়েছেন। কেউ কেউ ইতোমধ্যে সফলতা পাচ্ছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ ও কৃষিবিদ শেখ ফজলুল হক মণি জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে শাক সবজিসহ ফসল আবাদ করলে যেকোন জমিতে আশানুরূপ ফসল পাওয়া সম্ভব। নকলার বিভিন্ন এলাকার নারীরা এটার উজ্জল প্রমাণ দিয়েছেন। তারা এনএটিপি-২ এর মাধ্যমে বছরব্যাপী শাক সবজি ও বিভিন্ন ফসল চাষ করে ভালো ফলন পেয়ে সফল হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাস বলেন, শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফল ও ফসল পেতে নিজেদের বাড়ির আঙিনায় আবাদ বাড়াতে আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলেছি। ফলে এখন নকলার প্রতিটি বাড়িতে নিরাপদ শাক সবজি, বিভিন্ন ফল ও ফসল চাষ হচ্ছে। চাষকৃত নিরাপদ শাক সবজি বা ফল নিজেরা খেতে পারছেন, অন্যদিকে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, নারীরা গৃহস্থালীর কাজের ফাঁকে কম্পোস্ট সার ব্যবহার করে নিরাপদ শাক সবজি, ফল ও ফসল চাষে লাভবান হচ্ছেন। এনএটিপি-২ প্রকল্পের মাধ্যমে নকলা উপজেলাসহ সারাদেশের অগণিত কৃষকদের জীবনে ব্যাপক সফলতা এসেছে। চলমান এনএটিপি প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ শস্য, ফল ও ফসল উৎপাদনের এই প্রক্রিয়া চলমান থাকলে সারাদেশে নিরাপদ শাক সবজি এবং বিভিন্ন ফল ও ফসল উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হবে বলে তিনি আশা করছেন।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড