• বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঈশ্বরদীতে শীতকালীন আগাম সবজি চাষে ব্যস্ত কৃষকরা

  রিয়াদ ইসলাম, ঈশ্বরদী, পাবনা

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৮:১১
পাবনা
মূলা ক্ষেতের যত্ন নিচ্ছেন কৃষকরা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

অধিক লাভের আশায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে পাবনার ঈশ্বরদীতে। এ বছর উঁচু জমিতে শীতকালীন বিভিন্ন জাতের সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় কৃষক পরিবারগুলোতে ব্যস্ততা বেড়েছে।

শুধু নিজেদের চাহিদাই নয়, বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এসব সবজি। শীতের শুরুতে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বিভিন্ন জাতের সবজি পাঠাবে এ উপজেলার কৃষকরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো ফসল আগাম চাষ হলে বাজারে চাহিদা বেশি থাকে। তাই মুনাফাও অনেক বেশি হয়। এ বছর উঁচু জমিতে সবজি চাষে ঝুঁকছেন তারা। অল্প সময়ে কম খরচে অধিক মুনাফা লাভের জন্য ফুলকপি ও বাঁধাকপির জুরি নেই। পানি জমে না এমন উঁচু জমি কপি চাষের জন্য উপযুক্ত।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আগাম সবজি চাষে বেশ আলোড়ন তুলেছেন উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বিশ্বাসের স্ত্রী নুরুন্নাহার। তিনি অন্যের জমি লিজ নিয়ে গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে বিভিন্ন ধরনে সবজি চাষ করে নিজেদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি জেলার অর্থনৈতিক উন্নতিতে ব্যাপক অবদান রাখছেন এবং ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পেয়েছেন। তিনি বসতবাড়ির আঙ্গিনায় এবং বাড়ি পাশে ৫ বিঘা জমি লিজ নিয়ে সারা বছর বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করছেন। ক্ষেত থেকে সরাসরি ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের পাইকাররা ট্রাকে ভরে সবজি ক্রয় করে নিয়ে যান।

নুরুন্নাহার বলেন, সবজির কদর সারা দেশেই রয়েছে। তবে তা আগাম চাষ করতে পারলে আরও বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করলে কীটনাশকমুক্ত সবজি চাষ করা সম্ভব। সবজি ক্ষেতে পোকামাকড় আক্রমণ করবেই। সে জন্য কীটনাশক ব্যবহার না করেই আধুনিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে পোকামাকড় দমন করা সম্ভব।

সবজি ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহার অনেকটাই কম থাকায় সবজি গুনগত মানে সেরা হওয়ায় চাহিদাও অনেক বেশি বলে মন্তব্যে করে তিনি বলেন, শীতকালীন সবজির বাজার ধরতে তারা ফুলকপি ও বাঁধাকপির চারা রোপণ করেছেন। কার্তিক মাসের শেষ দিকে তাদের সবজি বাজারে উঠবে। এজন্য নার্সারি থেকে সবজি চারা সংগ্রহ করে ২০ থেকে ২৫ দিন আগে রোপণ করেছেন। সাড়ে তিন বিঘা জমিতে প্রায় ১০-১৫ হাজার কপির চারা রোপণ করা হবে। প্রতিটি চারার পেছনে তাদের খরচ হবে প্রায় পাঁচ থেকে সাত টাকা। আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিটি কপি ক্ষেতেই বিক্রি হবে ১৫ থেকে ২০ টাকা মূল্যে। কপি ক্ষেত থেকে মাত্র তিন মাসে সাড়ে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন ওই এই কৃষক।

নুরুন্নাহারের সবজি বিপ্লব দেখে ওই এলাকায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে সবজি চাষির সংখ্যা। বড়বাড়ি ব্লোকেই রয়েছেন প্রায় অর্ধশত সবজি চাষি। যারা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ করছেন।

ওই এলাকার কৃষক কামাল ও মাজেদুল ইসলাম জানান, সবজি চারা রোপণের আগে জমি তৈরি করে কিছু দিন রাখা হয়। এতে কপির চারা রোগ-বালাই প্রতিরোধের ক্ষমতা সঞ্চয় করে এবং গাছগুলো সবল হয়। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন তারা। তবে এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ায় তাদের নিজের চারাগুলো নষ্ট হয়নি। ফলে উৎপাদন খরচ কিছুটা কম হওয়ার আশাবাদী তারা।

শুধু ছলিমপুর এলাকায় নয় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে সবজি চাষ হচ্ছে। সবজি চাষের ব্যাপকতার জন্য মুলাডুলি, লক্ষ্মীকুন্ডা, সাহাপুর ও পাকশী ইউনিয়নে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে বিভিন্ন জাতের সবজি। শীতের শুরুতে ট্রাকে ট্রাকে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন জেলায় যাবে এ সবজি।

মুলাডুলি ইউনিয়নের পতিরাজপুর সরদারপাড়া গ্রামের সবজি চাষি করিম মিয়া বলেন, সবজি চাষের জন্য জমি প্রস্তুত। আগামী দুই সপ্তাহ আগে মূলা বীজ ও কপির চারা রোপণ করেছেন। কপি চারা রোপণ থেকে ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে ফসল বাজারে তোলা যায়। এ বছর তিন বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষের করেছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর এ জেলায় সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাতের বিভিন্ন সবজি চাষ হয়েছে। চলতি বছরও সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে চলতি সপ্তাহে প্রায় এক হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে রবি ১৮-১৯ জাতের আগাম সবজি চাষ হয়েছে। মার্চে মধ্যবর্তী পর্যন্ত এ রোপণ ও বপন চলবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ বলেন, কৃষকরা যে ফসলে মুনাফা পায়, সেটাতেই ঝুঁকে পড়েন। শুধু এ উপজেলায় নয়, সারা দেশে সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই কৃষকরা অধিক মুনাফা লাভের আশায় আগাম সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক মো. আজাহার আলী বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজনের নিয়মিত মনিটরিংয়ে আধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন বাড়ায় কৃষকদের মুনাফাও বেড়েছে কয়েকগুণ।

চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষাবাদ করে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখছে বলেও জানান তিনি।

ওডি/এমবি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড