• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কৃষকের দৈনিক মজুরি ৩৮৬ টাকা

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

২১ জুলাই ২০১৯, ১২:২৭

দেশের কৃষকদের কাজের ন্যুনতম মজুরি এখনো নিশ্চিত হয়নি। তারা রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে গড়ে দৈনিক ৩৮৬ টাকা মজুরি পান। আর এই টাকা দিয়ে সে তার প্রতিদিনেএরখরচ মেটাতে হয়। আবার তারা প্রতিদিন কাজও পান না। সপ্তাহে পাঁচ দিন কাজ পেলে বাকি দুই দিন বেকার বসে থাকেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রথমবারের মতো সম্প্রতি কৃষি ও পল্লি পরিসংখ্যান প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আর এই প্রতিবেদনেই কৃষিশ্রমিকদের মজুরির দৈন্যদশার এ চিত্র উঠে এসেছে। বিবিএস দেশের সব জেলার পল্লি এলাকার ৫৭ হাজার ৬০০ পরিবারের ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এখন পর্যন্ত দেশে এ ধরনের জরিপ করা হয়নি, তাই মজুরির তুলনামূলক চিত্র পাওয়া যায়নি। ১৫ বছরের বেশি বয়সী কৃষিশ্রমিকদের এ প্রতিবেদনের হিসাবে আনা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সপ্তাহে এক দিন মজুরির বিনিময়ে কাজ পেলেই তাঁকে কৃষিশ্রমিক হিসেবে ধরা হয়। বর্তমানে দেশে এমন কৃষিশ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ৭৭ লাখ। আর কক্সবাজারে কৃষিশ্রমিকদের সবচেয়ে বেশি মজুরি দেওয়া হয়। সেখানে একজন কৃষিশ্রমিক দৈনিক ৫০৭ টাকা মজুরি পান। আর একজন কৃষক চুয়াডাঙ্গায় সবচেয়ে কম মজুরি পায়।সে দৈনিক ৩১২ টাকা মজুরি পায়।

জরিপের তথ্য অনুযায়ী, কৃষিশ্রমিকেরা দেশের গড় মাথাপিছু আয়ের চেয়ে অনেক কম মজুরি পান। বাংলাদেশের মানুষের বার্ষিক মাথাপিছু আয় ১ লাখ ৬০ হাজার ৬০ টাকা। আর সেখানে তাদের দৈনিক মাথাপিছু আয় হয় ৪৩৮ টাকা।

দেশের মোট আয়কে কর্মক্ষম নারী-পুরুষ, ছাত্রছাত্রী, শিশু, প্রবীণসহ সব নাগরিকের মাথাপিছু ভাগ করে দেওয়া হয়। এই হিসাবে কর্মজীবীদের পাশাপাশি কর্মজীবী নন, এমন মানুষও আছেন। অথচ এ দেশের পৌনে এক কোটি কৃষিশ্রমিক খেতখামারে কাজ করেও এর চেয়ে অনেক কম মজুরি পান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গত এক দশকে কৃষিশ্রমিকের প্রকৃত মজুরি কমেছে। গ্রামে কাজের সুযোগ না পেয়ে যেসব অদক্ষ শ্রমিক শহরে আসেন, সেখানেও তাঁরা মজুরি কম পান। এর মানে, কৃষি ও অকৃষি খাতে প্রকৃত মজুরি কমেছে। সার্বিকভাবে কৃষিশ্রমিকদের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। যে মজুরি পান, তা দিয়ে কৃষিশ্রমিকের পক্ষে মানসম্পন্ন জীবন যাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিবিএসের জরিপের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে কৃষিশ্রমিক আছেন সাড়ে ৭৭ লাখ।

বিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ দেশে নারী কৃষিশ্রমিকেরা পুরুষ শ্রমিকের চেয়ে দিনে গড়ে ৪২ টাকা কম আয় করেন। নারীরা মজুরি পান মাত্র ৩৪৬ টাকা। আর পুরুষেরা পান ৩৮৮ টাকা। চট্টগ্রাম বিভাগের কৃষিশ্রমিকেরা সবচেয়ে বেশি মজুরি পান। ওই বিভাগে দিনে ৪৫৪ টাকা মজুরি পাওয়া যায়। আর সবচেয়ে কম মজুরি মেলে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে। সেখানকার কৃষিশ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৩৪৭ টাকা।

বিবিএসের প্রকল্প পরিচালক আখতার হাসান খান এই মজুরি প্রসঙ্গে বলেন, দৈনিক মজুরি হিসেবে ৩৮৬ টাকা ঠিকই আছে। ফসল তোলার সময় ৮০০ টাকায়ও কৃষিশ্রমিক পাওয়া যায় না। আবার বছরের অন্য সময়ে ৩০০ টাকায় শ্রমিক পাওয়া যায়। আবার আরেক শ্রেণির কৃষিশ্রমিক আছেন, যাঁরা বছরভিত্তিক চুক্তিতে কাজ করেন। ওই শ্রমিকেরা কৃষকের বাড়িতে তিনবেলা খাবার পান। তাঁদের নগদ মজুরি বেশ কম। এসব কারণে গড় মজুরি কম।

পল্লি এলাকায় সব পেশার মানুষের সংখ্যা ৪ কোটি ৭০ লাখের বেশি যার মধ্যে কৃষি খাতে আছেন ২ কোটি ৪৩ লাখ জন। আর সেবা ও শিল্প খাতে যথাক্রমে ১ কোটি ৪৪ লাখ ও ৮১ লাখ ৮৭ হাজার লোক নিয়োজিত আছেন।

আবার কৃষি খাতে নিয়োজিত নারী-পুরুষের মধ্যেও নানা বিভাজন আছে। যেমন-কৃষি খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিদের তিন ভাগের এক ভাগই ক্ষেত খামারে খেটে খাওয়া মানুষ। যাদের সংখ্যা সাড়ে ৭৭ লাখ। আর ৮১ লাখ লোক নিজের জমিতে চাষাবাদ করেন। এছাড়া দেড় লাখের মতো মানুষ কৃষি খাতসংশ্লিষ্ট কাজ করেন। জরিপে দেখা গেছে, গ্রামের পরিবারগুলোর আয়ের উৎসগুলো বদলে গেছে। সেখানে একটি পরিবারের মাসিক আয় ১৬ হাজার ৮৯৩ টাকা। তবে অকৃষি খাত থেকে এই আয়ের দুই-তৃতীয়াংশই আসে। আর কৃষি খাত থেকে আয় আসে ৩৮ শতাংশ বা সাড়ে ৬ হাজার টাকা।

দুই-তৃতীয়াংশ কৃষিতে

বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে,দেশে পল্লি এলাকায় পৌনে তিন কোটি পরিবার আছে। এদের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ পরিবারই কৃষিকাজ ও পশুপালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে। প্রতি পরিবার গড়ে আড়াই বিঘার মতো জমিতে চাষ করে থাকে। তবে পৌনে ৩ কোটি পরিবারের মধ্যে ১ কোটি ৮৩ লাখ পরিবারের জমির মালিক কোনো নারী সদস্য নন।

বিবিএসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এছাড়া অর্ধেকের বেশি কৃষক পরিবারকে নিজের বাড়িতেই ধান, চালসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য বিক্রি করতে হয়। স্থানীয় হাটবাজারে গিয়ে কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারেন মাত্র ১৮ শতাংশ পরিবারের সদস্যরা। যেহেতু কৃষকদের বাজারে গিয়ে পণ্য বিক্রির সুযোগ কম, তাই বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি করতে হয়।

ওডি/টিএফ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড