• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

‘বাজেটে প্রধান চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান’

  রাহুল বিশ্বাস মুন্না

০১ জুন ২০১৮, ১০:০৪

সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আগামী বাজেটে কর্মসংস্থানই হবে বড় চ্যালেঞ্জ। বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইআইডি) প্রাক-বাজেট জরিপে এ তথ্য উঠে আসে। এপ্রিল মাসে দেশের ৬৪ জেলায় মোট ৩,৮৪৬ জন উত্তরদাতার অংশগ্রহণে এই গবেষণা কর্মটি পরিচালিত হয়। এতে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আগামী বাজেটে কর্মসংস্থানসহ ৫টি খাতকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে অগ্রাধিকার দেয়ার সুপারিশ তুলে ধরেন।

কর্মসংস্থান ছাড়া জরিপে আরো যে ৪টি বিষয় গুরুত্ব পেয়েছে সেগুলো হচ্ছে: শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং চিকিৎসা, রাস্তাঘাট তৈরি ও মেরামত, কৃষি কাজে ভর্তুকি বিগত অর্থবছরের বাজেট ব্যয়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা ও আগামী বাজেটে সাধারণ মানুষের অগ্রাধিকার চিহ্নিত করতে ব্র্যাক ও ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেটিকস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইআইডি) যৌথভাবে এই গবেষণা পরিচালনা করে।

জরিপে উত্তরদাতারা যে বিষয়গুলোর ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন সেগুলো হলো শিক্ষা খাতে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, ভাতা ইত্যাদি প্রদান (২৫%), বই ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ (২৪%), নতুন স্কুল-কলেজ-মাদরাসা স্থাপন (১৮%), স্বাস্থ্য খাতে কম খরচে চিকিৎসা ব্যবস্থা (৪২%), নতুন হাসপাতাল/ক্লিনিক তৈরি (১৯%), দুস্থদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা (১২%), কৃষিখাতে স্বল্পমূল্যে উপকরণ প্রদান (৬৩%), স্বল্প সুদে ক্ষুদ্রঋণ সুবিধা (১৬%), ফসল বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা (৫%), সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বয়স্ক ভাতা (৩৫%), আশ্রয়হীনের আশ্রয়ের ব্যবস্থা (১৭%), বিধবা ভাতা (৯%), দুর্যোগ খাতে দুর্যোগ-পূর্ববর্তী পূর্বাভাস ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ (৪৭%), দুর্যোগকালীন ও পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা ও স্বাস্থ্যসেবা (১০%), বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস মোকাবেলার জন্য বাঁধ নির্মাণ (৯%) এবং অভিবাসন খাতে স্থানীয় পর্যায়ে সরকারি অফিসের সহায়তা বাড়ানো (৩৪%), সহজ ঋণ সুবিধা (২১%), এবং গ্রাম পর্যায়ে সরকারি তথ্য সুবিধা বাড়ানো (২০%)।

নির্বাচনী বছরের বাজেটে রাজস্ব আয় কমে গিয়ে টাকার প্রবাহ বৃদ্ধি পেতে পারে বলে বাজেট বিষয়ক এই গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে। গত কয়েক বছরের বাজেট ও বাজেট ব্যয়ের প্রবণতা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়: আগামী অর্থবছর ২০১৮-২০১৯-এর বাজেট হবে নির্বাচনী বাজেট। এই বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তি কম হতে পারে বলে এবং যেহেতু প্রথম ৬ মাসে সরকারের খরচ বৃদ্ধি পাবে সেহেতু অভ্যন্তরীণ ঋণ যেমন ব্যাংক-ঋণ গ্রহণ বেড়ে যেতে পারে। এতে করে দেশের সার্বিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

বিগত বছরের ব্যয় পর্যালোচনা ও আগামী বাজেটে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার আলোকে এই গবেষণায় ৩টি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হচ্ছে:

১. ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন চাহিদার সঙ্গে সামাজিক ক্ষেত্রের বাজেট বরাদ্দ সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। এসডিজি অর্থায়নের জন্য সরকারের নির্ধারিত ৫টি উৎস থেকে অর্থায়ন নিশ্চিত করতে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ও সেটা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ পরিকল্পনা থাকা জরুরি।

২. বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়নে বেসরকারি খাতকে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে।

৩. বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর্যায়ে উন্নীত হওয়ার কারণে সামনে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। তাই অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকারি অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের যথাযথ ব্যবহার, অর্থায়নের স্বচ্ছতা আনয়ন এবং উন্নয়ন প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।

বলার অপেক্ষা রাখে না বিনিয়োগের সাথে কর্মসংস্থানের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দেশে শিক্ষিত-অর্ধশিক্ষিত ও অশিক্ষিত মিলে কোটি কোটি কর্মক্ষম মানুষ বেকার জীবন যাপন করছে। এর সাথে শিল্প, কলকালখানা বন্ধ হয়ে নতুন বেকারের তালিকা কেবল বেড়েই চলছে। এই কোটি কোটি বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের জন্য এবারের বাজেটে তেমন কোনো দিক নির্দেশনা নেই। ফলে দেশে আগামীতে বেকার মানুষের সংখ্যা কোথায় দাঁড়াবে তা চিন্তাও করা যায় না। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কোন স্তরে পৌঁছাবে তা এখনই টের পাওয়া যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ১৫ পার্সেন্ট ভ্যাটে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে না। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, জিনিসপত্রের উপর ভ্যাট-ট্যাক্স বসবে দাম বাড়বে না- এমন আহাম্মকী কথা বিশ্বের কোন দেশের কোন মানুষ শুনেছে কিনা আমাদের জানা নেই।

অর্থনীতিবিদ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, সুন্দর সুন্দর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক বছরের মধ্যে রাতারাতি সবকিছু পরিবর্তন করে ফেলা আদৌ সম্ভব হবে কী? স্বপ্নের ফানুস উড়ানো এক ধরনের প্রবঞ্চনার শামিল। কাজেই অতি উচ্চাভিলাসী হয়ে সাধারণ মানুষের জীবন যাপনকে এক মহাসংকটে ফেলার বাজেট কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড