অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক
গ্যাস ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ও সিস্টেম লস বা পদ্ধতিগত ক্ষতি কমিয়ে আনতে কাজ করছে জ্বালানি বিভাগ। গ্যাস কোম্পানিগুলোর আর্থিক ক্ষতি কমিয়ে আনাও এর উদ্দেশ্য। বিশেষত তিতাসের আওতাধীন এলাকায় অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদের মাধ্যমে সিস্টেম লস কমাতে চায় বিভাগটি। এ জন্য গ্যাসের অবৈধ পাইপলাইন ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু গত অর্থবছরে সংস্থাটির আওতাধীন উল্লেখযোগ্য গ্যাস পাইপলাইন ও অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ করা হলেও সিস্টেম লস কমেনি। বরং গত বছর তিতাসের সিস্টেম লস হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে।
তিতাস দাবি করছে, অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদ হলেও পুনরায় সেটি জোড়া লাগানো হয়। যে কারণে মূলত তিতাসের গ্যাস চুরির বিষয়টি কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। পাশাপাশি গ্যাস ক্রয়-বিক্রয়ে যে পার্থক্য থাকে তা সিস্টেম লস হিসেবে কম-বেশি হয়ে থাকে।
তিতাসের বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে তিতাসের সিস্টেম লস ছিল ২ শতাংশ। ওই অর্থবছরে তিতাস ৩০৮ দশমিক ৩২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অপচয় হিসেবে উল্লেখ করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তিতাসের সিস্টেম লস একই থাকলেও অর্থবছরের গ্যাসের অপচয় বেড়ে যায়। গত অর্থবছরে ৩২৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অপচয় হিসেবে দেখায় তিতাস।
যদিও হিসাব অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে তিতাসের আওতাধীন যে পরিমাণ অবৈধ পাইপলাইন ও সংযোগ উচ্ছেদ করা হয়, তাতে ওই সময়ে তিতাসের সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে নেমে আসার কথা। কিন্তু পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। গ্যাসের অপচয় রোধের চেয়ে সিস্টেম লসে গ্যাসের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে।
তিতাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, সিস্টেম লসের বড় কারণ অবৈধ সংযোগ। এসব অবৈধ সংযোগ এখন তিতাস গ্যাস ও জ্বালানি বিভাগের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। অনেক এলাকায় বৈধ লাইনের পর ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত অবৈধ লাইন চলে গেছে। কেবল নারায়ণগঞ্জ এলাকায় সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে ছয় থেকে সাত কোটি ঘনফুট গ্যাসের বিল বকেয়া থাকছে।
জ্বালানি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৫ লাখ ১ হাজার ৫৮টি অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৪টি অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। এ সময়ে ৯২৬ কিলোমিটার অবৈধ গ্যাস লাইন অপসারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিতাসের ছিল ৮৪২ কিলোমিটার।
তিতাস গ্যাস বিতরণ কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, এখনো নারায়ণগঞ্জ ও সাভারে অনেক অবৈধ গ্যাস পাইপলাইন থাকলেও তা অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তিতাসের তথ্য অনুযায়ী, গ্যাস ক্রয় ও বিক্রয়ের পর হিসাবে যে পরিমাণ গ্যাসের ঘাটতি থাকে তা সিস্টেম লস হিসেবে দেখানো হয়। এ নিয়মে সংস্থাটি সিস্টেম লস দেখিয়ে আসছে। গত তিন অর্থবছর আগে তিতাসের সিস্টেম লস ২ শতাংশের নিচে থাকলেও বর্তমানে তা ২ শতাংশের ওপরে। এ সময়ে সিস্টেম লস বাবদ ২ হাজার কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি হয়েছে। এ তিন অর্থবছরে সংস্থাটির অন্তত ১ হাজার ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস বেহাত হয়েছে। এ গ্যাস কোথায় কীভাবে অপচয় হয়েছে, তার সঠিক কোনো হিসাব নেই সংস্থাটির কাছে। মূলত স্ক্যাডা সিস্টেম (সিস্টেম লস হিসাব করার পদ্ধতি) না থাকায় আসলে ঠিক কী পরিমাণ গ্যাস ব্যবহার ও গ্রহণ করা হচ্ছে, তার সঠিক নিরূপণ করার ব্যবস্থা নেই তিতাসের। যে কারণে অনুমান করেই বছরের পর বছর সিস্টেম লস দেখিয়ে আসছে সংস্থাটি।
তিতাসে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সিস্টেম লসের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তাদের দাবি, গ্যাস চুরি, অবৈধ সংযোগ ও তিতাসের আওতাধীন দুর্ঘটনায় গ্যাস নষ্ট হয়ে গেছে। তবে অভিযোগ রয়েছে সিস্টেম লসের নামে মূলত তিতাসের কর্মকর্তারা অবৈধভাবে গ্যাস বিক্রি করে অর্থ হাতিয়ে নেন। তাদের যোগসাজশে মূলত বিপুল পরিমাণ গ্যাস বেহাত হয়ে যায়।
তিতাস গ্যাসে প্রতি বছর সিস্টেম লস জালিয়াতির মাধ্যমে গ্যাস বেহাত হওয়ার বিষয়টি অবগত জ্বালানি বিভাগও। যে কারণে জ্বালানি বিভাগ তত্পর হয়ে অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও দেখা গেছে।
তিতাসের চেয়ারম্যান ও জ্বালানি বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, প্রকৃতপক্ষে তিতাস গ্যাসের সিস্টেম লস কমাতে আমরা অবৈধ সংযোগ ও পাইপলাইন উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। আগের তুলনায় সিস্টেম লস কমে আসার কথা। তবে যে পদ্ধতিতে তিতাসের সিস্টেম লসটা দেখানো হয়, তা সঠিক নয়।
প্রসঙ্গত, গ্রাহক সংখ্যা ও বিতরণ এলাকা বিবেচনায় দেশের সবচেয়ে বড় গ্যাস বিতরণকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান তিতাস। সংস্থাটির আওতায় ২৮ লাখ ৭৫ হাজারের বেশি গ্রাহক রয়েছে। বৃহত্তর ঢাকা ও ময়মনসিংহ এলাকাজুড়ে তিতাস গ্যাসের কার্যক্রম বিস্তৃত।
ওডি/এএম
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড