• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রার ১০শতাংশও পূরণ হয়নি

  ইউসুফ আলী, ফেনী

০১ নভেম্বর ২০২০, ১৭:৫১
বিভিন্ন ব্যাংকের লোগো (ছবি : দৈনিক অধিকার)

ফেনীতে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছেনা ব্যাংকসমূহ। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের ৩৯টি শাখা মিলিয়ে ২৫৫ কোটি ২৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ থাকলেও বিতরণ হয়েছে ২৩ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিতরণ হয়েছে ৯.১৯ শতাংশ। আর আদায় করেছে ৭শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত ৭টি ব্যাংকের মধ্যে কৃষি ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। জেলায় অবস্থিত ব্যাংকসমূহের তথ্য পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।

সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ৭টি শাখায় ১৬৫ কোটি ২০ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বিতরণ হয়েছে ১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯.৪০শতাংশ। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ৩৩ লাখ ৭২ হাজার, অগ্রণী ব্যাংক ৪ লাখ ৩৫ হাজার, জনতা ব্যাংক ৬৫ লাখ ২৭ হাজার, কৃষি ব্যাংক ১০ কোটি ৪০ লাখ, রূপালী ব্যাংক ৬৮ লাখ ৮৮ হাজার, বিআরডিবি ২ কোটি ৬৭ লাখ ২৪ হাজার, কর্মসংস্থান ব্যাংক ৬৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা বিতরণ করেছে। বেসরকারি ৩২টি ব্যাংকের ৯০ কোটি ৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ থাকলেও বিতরণ হয়েছে ৭ কোটি ৯১ লাখ ৯৪ হাজার টাকা। যা লক্ষ্যমাত্রার ৮.৭৮শতাংশ। ইসলামী ব্যাংক ৩ কোটি ৮০ লাখ ৯২ হাজার, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ১২ লাখ, সাউথ ইষ্ট ব্যাংক ১৭ লাখ ৩৮ হাজার, উত্তরা ব্যাংক ১৫ লাখ ৫০ হাজার, আইএফআইসি ব্যাংক ১৩ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংক ৩ লাখ, ট্রাস্ট ব্যাংক ১ লাখ, এক্সিম ব্যাংক ৪৬ লাখ ১ হাজার, ইউসিবিএল ৪০ লাখ, ওয়ান ব্যাংক ২৮ লাখ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৪০ লাখ, এনসিসি ব্যাংক ৬০ লাখ, পূবালী ব্যাংক ১৭ লাখ ৫০ হাজার, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৫০ লাখ ৩ হাজার, ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ১৬ লাখ ৬০ হাজার, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৬ লাখ, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১০ লাখ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৩৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ডেইরি খাতে ৩ কোটি ৫৬ লাখ ৬৩ হাজার, পোল্ট্রি খাতে ২ কোটি ৬০ লাখ, মৎস্য চাষে ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৩ হাজার টাকা রয়েছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, বেসরকারি খাতের ১৪টি ব্যাংক কৃষি খাতে কোন ঋণই দেয়নি। অথচ মেঘনা ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এবি ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক ১২৭ কোটি ৪৮ লাখ ১ হাজার টাকা বিতরণের লক্ষ্য ঠিক করেছিল।

সূত্র আরও জানায়, ২০-২১ অর্থ বছরে আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যাংকসমূহ ৭০ হাজার ২শ ৩২ জন গ্রাহকের কাছ থেকে আদায় করেছে ১২ কোটি ৪৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ৮ কোটি ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ও বেসরকারি ব্যাংক ৩ কোটি ৯৪ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। আদায়ের হার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৭ শতাংশ ও বেসরকারি ব্যাংকে ১৮শতাংশ।

এদিকে ডাল, তৈলবীজ, মসলা জাতীয় ফসল ও ভুট্টা খাতে সরকারের পক্ষ থেকে ৪শতাংশ হারে ঋণ দেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে ফেনীতে কৃষি ব্যাংক ছাড়া অন্য কোন ব্যাংক এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেনি। জানা গেছে, কৃষি ব্যাংক জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা লক্ষ্য ঠিক করলেও বিতরণ করেছে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা। যা বিতরণের হার ৪শতাংশ। এছাড়া সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক এ খাতে কোন ঋণ বিতরণ করেনি।

কৃষি ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, কৃষি-পল্লী ঋণ খাতে জেলার ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে শীর্ষ ঋণ খেলাপি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। ভাই ভাই এন্টারপ্রাইজ, ইসরা পেপার বোর্ড মিলস, মেসার্স মিরাজ এন্টার প্রাইজ, মেসার্স ইমন মৎস্য খামার, হালিমা ফার্নিচার, এস.এ এন্টার প্রাইজ, মেসার্স হাজী স্টোর, এস.এন এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স জহির ডেইরি, মেসার্স আবদুছ সালাম পোল্ট্রি, আবুল হোসেন, কে.এন ডেইরি ফার্ম, মেসার্স সাইকা পোল্ট্রি, মেসার্স সুফিয়া মৎস্য খামার, মেসার্স শাহজাদী ডেইরী ফার্ম, মেসার্স আবুল খায়ের পোল্ট্রি ফার্ম, রোকেয়া বস্ত্র মহল, মাষ্টার সামছুল হক ও একরামুল হক মানিক, আবুল কালাম মিয়াকে ইতিমধ্যে নোটিশও দিয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন ব্যাংকের ২ হাজার ৮শ ৭৩টি সার্টিফিকেট মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ সব মামলার বিপরীতে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ১৫ হাজার ৬৩৮ টাকা পাওনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসনের জেনারেল সার্টিফিকেট কর্মকর্তা এনএম আবদুল্লা আল মামুন জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের একাধিকবার নোটিশ দেয়া হলেও তারা সাড়া না দেয়ায় সহজে নিষ্পন্ন হয়না। অনেকের দেয়া ঠিকানা পরিবর্তন হয়ে যাওয়ায় তাদের পাওয়া যায়না।

যমুনা ব্যাংক ফেনী শাখার ব্যবস্থাপক শহীদুল আলম চৌধুরী ঋণ বিতরণ না করার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ব্যাপারে তারা চেষ্টা করছেন।

ইসলামী ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ফেনী শাখা প্রধান মোহাম্মদ নুরুল করিম জানান, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন। বিনিয়োগে ব্যাংকের লভ্যাংশের পরিমাণ সকল ক্ষেত্রে ৯শতাংশ হওয়ায় কৃষি খাতও আনুপাতিক হারে বেশিই প্রাধান্য পাচ্ছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ ও আদায়ে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা রয়েছে।

ফেনীতে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ কমিটির সদস্য সচিব ও সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিসের ডিজিএম বশির আহমেদ জানান, কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের অর্থ বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত। সেইক্ষেত্রে অর্থ বছরে শুরুতে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড