• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বেনাপোল কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ৩ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা 

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

১৪ জুলাই ২০২০, ১০:২৯
বেনাপোল কাস্টমস হাউজ
বেনাপোল কাস্টমস হাউজ (ছবি : সংগৃহীত)

দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দরের বেনাপোল কাস্টমস হাউজ গেলো ২০১৯-২০ র্অথবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৩৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থবছরের শুরুতেই রাজস্ব আয়ে পিছিয়ে ছিল এ কাস্টমস হাউজ। এরপর করোনায় এ পথে ভারতের সঙ্গে টানা আড়াই মাস আমদানি বন্ধ থাকায় রাজস্ব আহরণে নেমে আসে আরো ধস।

শনিবার (১১ জুলাই) লক্ষ্যমাত্রার পরিসংখ্যানের বিষয়টি নিশ্চিত করেন কাস্টমসের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার।

কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানি হওয়া পণ্যের উপর ৬ হাজার ২৮ কোটি ৩৪ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়। এসময় অর্থবছর শেষে (জুলাই থেকে জুন) লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ রাজস্ব আদায় করেছে মাত্র ২ হাজার ৬৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এখানে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ৩ হাজার ৩৯২ কোটি ২২ লাখ টাকা। এসময় ভারত থেকে বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার ৬২৮ মেট্রিকটন।

এর আগেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বেনাপোল কাস্টমস হাউজে ৫ হাজার ১৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ৪০ কোটি টাকা। তখনও ঘাটতি ছিল ১ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। এ অর্থবছর ভারত থেকে আমদানি পণ্যের পরিমাণ ছিল ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৩ মেট্রিকটন।

এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ১৭৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। এসময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৪ হাজার ১৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হক লতা জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ বন্দর দিয়ে সবাই ব্যবসা করতে চায়। কিন্তু অবকাঠামোগত উন্নয়ন সমস্যায় সুষ্ঠু বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সপ্তাহে ৭ দিন বাণিজ্যসেবা চালু থাকলেও ব্যবসায়ীরা তার সুফল পাচ্ছেন না। বাণিজ্য প্রসার করতে হলে বৈধ সুবিধা প্রদান ও অবকাঠামো উন্নয়নের বিকল্প নেই।

কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছেন, শুল্ক ফাঁকি রোধে কড়াকড়ি আরোপ করায় আমদানি কমে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। তবে ব্যবসায়ীদের বৈধ সুবিধাগুলো বাড়াতে কর্তৃপক্ষ আন্তরিক হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

বেনাপোল বন্দর ব্যবহারকারী সাধারণ ব্যবসায়ীরা জানান, কাস্টমসে আমদানি পণ্য পরীক্ষণের নামে হয়রানি বেড়েছে। টাকা না দিলে নমুনা ঢাকায় ল্যাবরেটরিতে পাঠাতে চায় না। পণ্য পরীক্ষণের ভালো ব্যবস্থা আর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর থাকলে হয়রানি পোহাতে হত না। ঝামেলা এড়াতে এ পথে আমদানি কমিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া অসৎ ব্যবসায়ীরা এ পথে ভায়াগ্রার মত মাদক আমদানিও করছেন।

তারা আরো জানান, আমদানি পণ্য কাস্টমস কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সুনিদিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া আবার বিজিবি সদস্যরা তা আটক করেছে। সেখানে ২/৩ দিন পণ্য চালান আটকে থাকছে। আমদানি- রপ্তানি বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিজিবি আর কাস্টমসের মধ্যে পরস্পরের সমন্বয় দরকার। এসব কারণেও বাণিজ্যে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

বাণিজ্যের সঙ্গে সংশিষ্ট ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, বন্দর ও কাস্টমসের বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, শুল্ক ফাঁকি ও পণ্য খালাসে হয়রানি রাজস্ব ঘাটতির কারণ। এছাড়া বাণিজ্য তদারকিতে নিয়োজিত সংস্থ্যাগুলোর মধ্যে পরস্পরের সমন্বয়ের অভাব। এতে ব্যবসায়ীরা এ পথে বাণিজ্যে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় সরকারের যেমন রাজস্ব আয় বাধাগ্রস্ত হয়েছে তেমনি লোকসান গুনেছেন ব্যবসায়ীরাও। বৈধ সুবিধা নিশ্চিত হলে আবার গতি ফিরবে বাণিজ্যে।

বেনাপোল কাস্টমস হাউজের যুগ্ম কমিশনার শহিদুল ইসলাম জানান, করোনার কারণে প্রথমত আড়াই মাস ধরে আমদানি বন্ধ ছিল। এ কারণে রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে। এছাড়া পণ্য চালান খালাসে আগের চেয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বেড়েছে এ কাস্টমসে। শুল্ক ফাঁকি বন্ধে কড়াকড়ি আরোপ করায় কিছু ব্যবসায়ী এ বন্দর দিয়ে আমদানি কমিয়েছেন। বিশেষ করে রাজস্ব বেশি আসে এমন পণ্য কম আমদানি হচ্ছে। এতে রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছে।

জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এ পথে ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। দেশে স্থলপথে যে পণ্য আমদানি হয় তার ৭০ শতাংশ হয় বেনাপোল বন্দর দিয়ে। এছাড়া প্রতিবছর এ বন্দর দিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য আমদানি হয়ে থাকে। যা থেকে সরকারের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। বন্দরে আমদানি পণ্যের ধারণক্ষমতা ৫০ হাজার মেট্রিকটন, কিন্তু এখানে সার্বক্ষণিক পণ্য থাকে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিকটন। বর্তমানে বন্দরে ২৮টি পণ্যাগার, ৮টি ওপেন ইয়ার্ড, একটি ভারতীয় ট্রাক টার্মিনাল, একটি রফতানি ট্রাক টার্মিনাল ১টি ট্রান্সশিপমেন্ট ইয়ার্ড ও একটি ভারতীয় ট্রাক চ্যাচিজ টার্মিনালের মাধ্যমে বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা হচ্ছে। তবে এসব উন্নয়ন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।

ওডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড