• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

চালের মজুদ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও ৭ টাকা দর বৃদ্ধি

  অর্থ-বাণিজ্য ডেস্ক

২০ মার্চ ২০২০, ১২:৩২
চাল
চাল (ছবি : সংগৃহীত)

রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ভোক্তাদের অতিরিক্ত চাহিদার কারণে সব ধরনের চালের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা বেড়ে গেছে। আর পাইকারি বাজারে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়ে গেছে। অথচ সরকারি গুদামে পর্যাপ্ত মজুদ আছে চাল এবং বাজারগুলোতে চালের সরবরাহও ভালো।

জানা গেছে, চালের বাজারে ভাইরাসকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত চাহিদা রয়েছে। এই চাহিদা পুঁজি করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। আর বাড়িয়ে দিচ্ছেন সব ধরনের চালের দাম।

এ মুহূর্তে ১৭ লাখ ৩৯ হাজার ৪৯৫ মেট্রিকটন খাদ্যশস্য মজুদ আছে। গত বছর এ সময়ে ১৫ লাখ ৪৪ হাজার ৫২৩ মেট্রিকটন ছিল। এর মধ্যে ৩ লাখ ১৯ হাজার মেট্রিকটন গম আছে। বিগত অর্থবছরে ৩ কোটি ৭৪ লাখ মেট্রিকটন চালের উৎপাদন ছিল। এছাড়া বর্তমানে ১৪ দশমিক ২০ লাখ মেট্রিকটন চাল সরকারিভাবে মজুদ রয়েছে।

ভোক্তারা বলছেন, আজ না হয় কাল করোনা ভাইরাস দেশে বড় আকার ধারণ কর‍তে পারে। ইতোমধ্যে একজন মারা গেছে। সামনে কত মানুষ মারা যাবে তা কেউ বলতে পারে না। এছাড়া দিন দিন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

করোনা ভাইরাসের কারণে শিবচরকে লকডাউন করা হয়েছে। কাল কোথায় হবে সেটা কেউ জানে না। যদি কোনো যানবাহন না চলে ও আন্তঃজেলা যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম আরও বেড়ে যাবে। তখন কম দামে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কোথায় পাবে সাধারণ জনগণ।

তারা আরও বলেন, সরকার বলছে মজুদ আছে। কিন্তু সরকার কি উন্নত দেশের মতো বাড়ি বাড়ি পণ্য পৌঁছে দেবে। সেটা তো দেবে না। ন্যায্য মূল্যে ট্রাকে করে যা বিক্রি করে, তা আনতে গেলেও জনসমাগমে যেতে হবে। সংগ্রহ তো আমাদেরই করতে হবে। তখন নিরাপত্তা দেবে কে। তাই খাদ্যের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য একটু বেশি কিনে রাখছি। বাজার মনিটরিং করে সরবরাহ ঠিক রাখা উচিত সরকারের। সরবরাহ ঠিক থাকলে দামও স্বাভাবিক থাকবে।

বাবুবাজারের চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বলেন, গত ২ থেকে ৩ দিনে পাইকারি বাজারে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে সব রকমের চালের দাম বেড়ে গেছে। কারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে চাল মজুদ করছে। যার মাসে ১ বস্তা চাল লাগতো, সে ৪ বস্তা চাল কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বিগত ২ দিনে হরিলুটের মতো আড়তে চাল বিক্রি হয়েছে। এর ফলে সাময়িক সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে।

যদিও বছরের এই সময় চালের দাম একটু বেশি থাকে। কারণ এখন ধানের মৌসুম নয়। কিন্তু করোনার প্রভাবে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে নতুন চাল বাজারে আসবে। তখন সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেছেন, করোনাকে পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা যদি বাজে কথা ছড়ায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে চালের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। এরপরও ঘাটতি দেখা দিলে বাইরে থেকে পণ্য সরবরাহ করা হবে। তবুও আমরা পণ্যের দাম কোনোক্রমেই বাড়তে দেব না।

আরও পড়ুন : করোনার জন্য ঋণগ্রহীতাদের বিশেষ ছাড়

রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি সরু চাল ৫২ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি সাধারণ মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৫ টাকা ও উত্তম মিনিকেট ৫৬ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা দুইদিন আগে ৪২ থেকে ৫৫ টাকা ছিল। এছাড়া উত্তম নাজিরশাইল ৬০ থেকে ৬২ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর সাধারণটা ৫৪ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৪৮ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হতো।

খুচরা বাজারে মাঝারি মানের পাইজাম ও লতা ৪২ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হতো। ৩৩ থেকে ৩৬ টাকার ২৮ চাল প্রতিকেজি ৪০ থেকে ৪৪ টাকায়, ৩৪ থেকে ৩৭ টাকার ২৯ চাল প্রতিকেজি ৪২ থেকে ৪৪ টাকা এবং মোটা স্বর্ণা ও ইরি চাল ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ, দুইদিন আগেও মোটা স্বর্ণা ও ইরি চাল ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।

এ দিকে, পাইকারি বাজারে ৪৮ টাকার প্রতিকেজি মিনিকেট ৫০ টাকা দরে, ৫৩ টাকার নাজিরশাইল ৫৫ টাকায়, ৫৬ টাকার বাসমতি চাল ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে বেড়েছে অন্যান্য জাতের চালের দরও।

ওডি/এওয়াইআর