সাতক্ষীরায় লবণ সহিষ্ণু আখ চাষে সফলতা

একসময় সাতক্ষীরা জেলার ৭ উপজেলার ৮ থানার মধ্যে তালা, পাটকেলঘাটা, কলারোয়া ও দেবহাটা থানায় আখ চাষের জন্য প্রচুর সুনাম ছিল। কিন্তু লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় না থাকায় আখের চাষ ধীরে ধীরে কমতে থাকে। তবে এবার পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে অবস্থিত আখ গবেষণা ইন্সটিটিউটে সমুদ্র উপকূলীয় জেলাগুলোর লবণাক্ত এলাকাতে উচ্চমাত্রার লবণ সহিষ্ণু নতুন ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ চাষ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ জাতের আখ চাষ করে কৃষকরা সফল হয়েছেন।

সদর উপজেলার বালিথা গ্রামের আখ চাষি মো. কবির রহমান বলেন, অধিকাংশ জমিতে লবণাক্ত হওয়ার কারণে দানাদার জাতীয় ফসল আগের মত আর ফলে না। তবে এবার আখ গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে লবণ সহিঞ্চু নতুন ৩৯ জাতের আখ রোপণ করে সাফল্য অর্জন করেছি। গত ডিসেম্বরে আখের ডোগা রোপন করার পর এখন দেখি ক্ষেতে বড় বড় ঝাড়ে পরিণত হয়েছে। এছাড়াও আখে কোনো ধরণের রোগবালাই পাওয়া যায়নি।’

ঈশ্বরদীর পাবনা আখ গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরামর্শে শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের আখ চাষি আব্দুর জব্বার তার ৩ বিঘা পরিমাণ জমিতে লবণ সহিঞ্চু নতুন ৩৯ জাতের আখ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আগে যদি জানতার এমন ভালো ফলন হবে তাহলে আরও বেশি জমিতে আখের চাষ করতাম।

বিএসআরআই-এর সমন্বিত গবেষণা কার্যক্রম প্রকল্পের পরিচালক উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সমজিত কুমার পাল বলেন, ‘প্রকল্পের অধীণে লবণাক্তপ্রবণ সাতক্ষীরা সদর, তালা, কালিগঞ্জ, আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলাতে লবণ সহিষ্ণু জাতের আখ চাষ করা হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে কৃষিতত্ত্ব ও ফার্মিং সিস্টেম বিভাগ বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইন্সটিটিউট ইশ্বরদী, পাবনা।'

তিনি আরও বলেন, এই নতুন ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ যেমন উচ্চমাত্রার লবণ সহ্য করতে পারবে তেমনি অন্যান আখের তুলনায় এ জাতের আখ বেশি ফলন দেবে। এটি বিঘা প্রতি সর্বোচ্চ ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতি বিঘা জমির আখ বিক্রি হবে কমপক্ষে ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকা। ফলে কৃষক লাভবান হবে এ লবণসহিঞ্চু জাতের আখ চাষ করে। ৩৯ ও ৪৬ জাতের আখ ১৫ থেকে ১৬ মাত্রার লবণ সহ্য করতে পারবে অনায়াসে। তাছাড়া রোগবালাইয়ের প্রাদুর্ভাব খুবই কম।'

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, ‘এ বছর সাতক্ষীরা জেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। তারমধ্যে সদর উপজেলায় ৫ হেক্টর, কলারোয়ায় ২ হেক্টর, তালায় ৭৫ হেক্টর, দেবহাটায় ৩৫ হেক্টর, কালিগঞ্জে ২৫ হেক্টর, আশাশুনিতে ৫ হেক্টর এবং শ্যামনগর উপজেলাতে ৪ হেক্টর পরিমাণ জমিতে ফসলটি চাষ করা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় উপকূলীয় জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে আখের চাষ কমে যাচ্ছে। কিন্তু লবণসহিঞ্চু নতুন ৩৯-৪৬ জাতের আঁখ চাষে সাফল্য এসেছে সাতক্ষীরায়। আশা করা যায় এ জাতের আখ চাষের আগামীতে জেলার সব অঞ্চলের কৃষকরা লাভবান হবে।'