• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বেসরকারি খাতের ঋণে নিম্নগতি

  বিশেষ প্রতিবেদক

০৬ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৯:০৩
টাকা (ছবি : সংগৃহীত)
টাকা (ছবি : সংগৃহীত)

বেসরকারি খাতে ঋণ পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে অব্যাহতভাবে বেসরকারি খাতে ঋণের হার কমছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় অক্টোবরে বেসরকারি খাতে ঋণের হার কমেছে প্রায় দশমিক ৬২ শতাংশ। অক্টোবরে ব্যাংক ১০ দশমিক ০৪ শতাংশ ছিল ব্যাংক ঋণের হার। এই হার গত দশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। এর আগে সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি ছিল ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে ৬ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ।

ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার কারণে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমেছে। পাশাপাশি ঋণের চাহিদাও কমেছে বলে ধারণা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্নিষ্ট কর্মকর্তাদের। বেসরকারি খাতে ঋণ যে হারে বাড়ছে, তা মুদ্রানীতির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। এত কম হারে বাড়লে কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

চলতি অর্থবছরের জন্য ঘোষিত মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত অর্থবছরে ছিল ১৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। তবে অর্থবছর শেষে ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়ায় ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসেবে এই অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৬ শতাংশ। জুনে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ। মে মাসে ছিল ১২ দশমিক ১৬ শতাংশ। এর আগের মাস এপ্রিলে ছিল ১২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, মার্চে প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে ছিল ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশ ও জানুয়ারিতে ছিল ১৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর শেষে বার্ষিক ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ২৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। ২০১১ সালে মার্চে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৯ দশমিক ১৩ শতাংশে উঠে।

এদিকে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমলেও সরকারের ঋণ গ্রহণের হার বাড়ছে। এই অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের কথা ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ১ জুলাই থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সরকার ঋণ নিয়েছে ৩৮ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র চার মাসেই সরকার ৮১ শতাংশের বেশি ঋণ নিয়েছে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, আটকে থাকা ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় কোনো কোনো ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা কমেছে। তারল্য সংকটের কারণে ঋণ তেমন বাড়াতে পারছে না। মেয়াদি দুই অঙ্কের সুদ দিয়েও অনেক ব্যাংক এখন কাঙ্ক্ষিত হারে আমানত পাচ্ছে না। এর প্রভাবে ঋণের সুদহার না কমে উল্টো বাড়ছে। আবার সরকারও এখন ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নিচ্ছে। এসবের প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমছে।

চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সার্বিকভাবে আমদানি কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এ ছাড়া দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকের অন্যতম কাঁচামাল তুলা আমদানি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ। বস্ত্র ও তৈরি পোশাকসহ কিছু খাতের কাঁচামাল আমদানি কমেছে। অর্থবছরের প্রথম ৪ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ৭ শতাংশ। রাজস্ব আয়ও খুব কম হারে বাড়ছে। এসব পরিসংখ্যান ব্যবসা-বাণিজ্যের ধীরগতির লক্ষণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রফেসর এম এ তসলিম গণমাধ্যমকে বলেন, ভবিষ্যতের ‘ভয়’ ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করছে। তার মতে, দুই কারণে ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হতে পারেন। প্রথম, দুর্নীতি। দ্বিতীয়ত, রাজনীতি। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, অদূর ভবিষ্যতে দুর্নীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। আর সেক্ষেত্রে তাদের ব্যবসার খরচও বাড়বে। ফলে বিনিয়োগ করে হয়ত রিটার্ন ফেরত পাওয়া যাবে না। এসব কারণে ঋণের চাহিদাও কমেছে।

ওডি/কেএসআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড