• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

করোনাযুদ্ধে সাহসী সৈনিক হতে পারে ‘হামের টিকা’!

  স্বাস্থ্য ডেস্ক

১৫ এপ্রিল ২০২০, ১৮:৪৯
করোনা ভাইরাস
করোনা ভাইরাসকে রুখতে সাহসী সৈনিক হতে পারে ‘হামের টিকা’ (ফাইল ছবি)

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে যেন ভেঙেচুরে যাচ্ছে পৃথিবী। বিশ্বব্যাপী ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য সেবার খুঁটি। মহামারিতে রূপ নেওয়া এই ভাইরাসকে বধ করার উপায় এখনো অজানা। প্রতিনিয়ত এই ভাইরাস নিজের চরিত্রই বদলে ফেলছে। এত বেশি নিজেকে বদলাচ্ছে যে এই ভাইরাসের মতিগতি বোঝাই অসম্ভব হয়ে পড়ছে বিশ্বের বাঘা বাঘা ভাইরোলজিস্টদের কাছে। সংক্রমণ রুখতে ভ্যাকসিন তৈরির প্রক্রিয়াও তাই বিলম্বিত হচ্ছে।

তবে আশার কথা এটাই যে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের গবেষকরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। করোনাকে রুখতে আগে তারা শতাব্দী প্রাচীন যক্ষ্মার ভ্যাকসিন বিসিজি পরীক্ষা করে দেখছেন। এবার নতুন করে ‘হামের টিকা’ পরীক্ষা করে দেখছেন। বিজ্ঞানীদের ধারণা অজেয় এই ভাইরাসকে রুখতে হামের টিকা সাহসী সৈনিকের মতো কাজ করবে। যদিও পুরো বিষয়টি এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায়ে আছে।

মহামারিটি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার মাত্র কয়েক মাসেই বিজ্ঞানীরা প্রায় ১১৪টি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করেছেন। এটা অবশ্যই প্রশংসনীয়। ফ্রান্সের পাস্তুর ইনস্টিটিউট নোভেল করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরির জন্য মানব শরীরে শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম তৈরিতে হামের টিকার কার্যকারিতা নিয়ে কাজ করছেন।

গত মাসে, নরওয়ের কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপারেডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই) ইনস্টিটিউট এ বিষয়ে গবেষণার জন্য ৪ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি প্রাথমিক অনুদানের অনুমোদন দিয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে আটটি ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করা হবে। যদিও অনুমোদনের পর্যায়ে কেবল মাত্র দুটি বা তিনটি প্রকল্পের অর্থায়ন করা হবে।

সিইপিআইয়ের অনুমান, একটি কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন তৈরি করতে বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। যেটা রেকর্ড স্বল্পতম সময়ে টিকাদান পর্যায়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উৎপাদিত হতে পারে। তবে ইনস্টিটিউটের ভ্যাকসিন ইনোভেশন ল্যাব-এর প্রধান ভাইরোলজিস্ট ফ্রেডারিক ট্যাঙ্গি বলেছেন, টিকাদানই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র আসল সমাধান। তিনি সামাজিক-দূরত্ব এবং স্ব-বিচ্ছিন্নতার মতো ব্যবস্থাগুলিকে একটি ভেতরে ক্ষত রেখে বাইরে ব্যান্ডেজ করার সঙ্গে তুলনা করেছেন।

ট্যাঙ্গি ভাইরাসটির বৈজ্ঞানিক নাম ব্যবহার করে বিজনেস ইনসাইডারকে বলেন,‘সার্স-কোভি-২’ এর সংক্রামক সম্ভাব্যতা সম্পর্কে আমরা যা জানি, এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে জনসংখ্যার কমপক্ষে ৭০ শতাংশকে টিকা দেওয়া দরকার।

সংক্রামক রোগগুলির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য পাস্তুর ইনস্টিটিউটের একটি সুনাম রয়েছে। ফ্রেঞ্চ বায়োকেমিস্ট যিনি অ্যানথ্রাক্স এবং রেবিজ ভ্যাকসিন তৈরি করেছিলেন লুই পাস্তুরের নামানুসারে। পাস্তুর ইনস্টিটিউট ১৮৮৮ সালে চালু হয়েছিল। মধ্যবর্তী বছরগুলিতে এটি টাইফয়েড জ্বর, যক্ষা, পোলিও, হলুদ জ্বর, এইচআইভি এবং অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগের বিরুদ্ধে কাজ করেছে।

ট্যাঙ্গি বলছিলেন, বর্তমানে ইনস্টিটিউটের প্যারিস ক্যাম্পাসের প্রায় ১৩৩টি বিভাগ কোভিড-১৯ মহামারির ওপর মনোনিবেশ করেছে। জানুয়ারিতে, ফ্রান্সের প্রথম কোভিড-১৯ রোগী সনাক্তের কয়েকদিনের মধ্যে ভাইরাসটির সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্সিং সম্পন্ন করেছিলেন। সেটি ছিল ইউরোপে প্রথম কোনো দেশের করোনা ভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্স উদ্ধার। চীনের উহানে উৎপত্তি হওয়ার পর ভাইরাসটি কিভাবে নিজেকে বদলে ফেলছে সেটা বোঝার জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ ছিল।

ইনস্টিটিউট অন্যান্য ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য হামের টিকার কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন। ট্যাঙ্গির দল একটি একক সার্স-কোভি-২ প্রোটিন অন্তর্ভুক্ত করার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড হামের টিকা সংশোধন করছেন। তারা আশা করছেন যে, এটি বর্তমান এমএমআর ভ্যাকসিনের সমতুল্য একটি প্রটেকশন তৈরি করবে, যেমনটা হাম, গাঁদা এবং রুবেলার থেকে রক্ষার জন্য করা হয়। এটা কার্যকর প্রমাণিত হলে করোনা ভাইরাসকে মানবদেহের মাঝেই রুখে দেওয়া সম্ভব হবে।

আরও পড়ুন : করোনার মাঝে বাজার থেকে ফিরে যা করবেন

লাইভ অ্যাটেনিউটেড ভ্যাকসিনগুলো মানবদেহে একবার পুশ করা হলে সেটা আজীবন শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রটেকশন দেয়। এটি উৎপাদন করাও সস্তা। লাইসেন্সযুক্ত হামের ভ্যাকসিন ব্যবহারের অর্থ হল পরীক্ষার এবং পেটেন্টিং প্রক্রিয়াগুলি দ্রুততর হবে। বিশ্বের প্রতিটি কারখানায় হামের এই ভ্যাকসিনটি তৈরি করতে পারবে।

এই কৌশলটি ব্যবহার করে এরই মধ্যে ইনস্টিটিউটের চিকুনগুনিয়ার প্রোটোটাইপ ভ্যাকসিনের গবেষক দল ভালো ফলাফল পেয়েছে। প্রতি বছর দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকার কয়েক মিলিয়ন মানুষ চিকুনগুনিয়ায় সংক্রামিত হয়। এই রোগের ফলে জয়েন্ট ফোলা, পেশী ব্যথা এবং ফুসকুড়ি হয়। এটি খুব অল্প বয়স্ক, বৃদ্ধ এবং অন্য স্বাস্থ্যগত সমস্যায় যারা ভুগছেন তাদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠে। এবার সেই একই পদ্ধতি ব্যবহার করে হামের টিকার উন্নয়ন ঘটিয়ে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় সফল হওয়ার আশা করছেন পাস্তুর ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। সফল হলে এটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাজারে চলে আসবে।

সূত্র- সায়েন্স অ্যালার্ট।

ওডি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড