• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শতবর্ষ আগের এক মহামারি

  ফিচার ডেস্ক

৩০ মার্চ ২০২০, ১৬:৩৪
মহামারি
শতবর্ষ আগে মহামারির প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তি (ছবি : সংগৃহীত)

১৯১৮ সাল। শতবর্ষ আগের একটি বছর। পৃথিবী আক্রান্ত হয়েছিল মহামারিতে। রোগের নাম স্পেনিশ ইনফ্লুয়েঞ্জা।

এখন যেমন, তখনো তেমনি, মহামারি আকার ধারণ করা রোগের ঔষধ ছিলনা। অর্থাৎ যে রোগের প্রতিষেধক নেই, সেই রোগই মহামারি হয়ে ছড়িয়ে পড়তো । স্পেনিশ ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রতিষেধকও সে আমলে ছিলনা। বিশ্বের দেশে দেশে সে রোগ মহামারির আকার ধারণ করে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।

দেখা গেছে, প্রতিষেধক আবিষ্কারের আগে কলেরা, ম্যালেরিয়া, কালাজ্বর, প্লেগ মহামারিতে তছনছ করে দিয়েছিল পৃথিবীকে। লক্ষ কোটি মানুষ মারা গিয়েছিল সেসব প্রলয়ঙ্করী মহামারিতে।

টিকা, ভ্যাকসিন, ঔষধ আবিষ্কৃত না হওয়ায় মহামারির বিরুদ্ধে একমাত্র প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ছিল রোগটিকে ছড়াতে না দেওয়া। মানুষকে যতসম্ভব সরিয়ে রেখেই কমানো হতো মহামারির প্রকোপ ও বিস্তার।

অতীতের মতো বর্তমানেও সঙ্গরোধ ও বিচ্ছিন্নতাই হলো প্রতিষেধকহীন রোগের মহামারি ঠেকানো একমাত্র পন্থা। বর্তমানে অচেনা ও ভয়ঙ্কর করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধেও তাই লকডাউন ও সঙ্গরোধের ব্যবস্থা পুরো বিশ্বব্যাপী নেওয়া হচ্ছে।

কেমন ছিল সে আমলের সঙ্গরোধ? স্পেনিশ ইনফ্লুয়েঞ্জার বিরুদ্ধে তখনকার মানুষ কেমন প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল? পত্রিকায় প্রকাশিত একটি বিজ্ঞাপনের বিবরণে সে চিত্র জানা যায়।

'পাবলিক নোটিশ' শিরোনামে কর্পোরেশন অব সিটি অব কেলৌনা'র তরফে মেয়র ডি. ডব্লু. সোদ্যারল্যান্ড বিজ্ঞপ্তিটি ১৯ অক্টোবর ১৯১৮ সালে ইস্যু করেন এবং তা প্রকাশ করেন কয়েকদিন পর, ৭ নভেম্বর ১৯১৮ সালে প্রকাশিত একটি পত্রিকায়।

ইস্যু হওয়ার প্রায় দেড় সপ্তাহ পরে এহেন জরুরি বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশ পাওয়া থেকে অনুধাবন করা যায় যে, পত্রিকাটি একটি সাপ্তাহিক কিংবা পাক্ষিক ছিল। কারণ, শতবর্ষ আগে একটি রাষ্ট্রের রাজধানীর বাইরে অন্যত্র দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ না হওয়াই সম্ভব। ছাপাখানা ও সাংবাদিকতার অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা সে আমলে আজকের মতো সর্বত্র সুলভ হওয়ার কথা নয়।

বিজ্ঞাপনে বলা হয়, স্পেনিশ ইনফ্লুয়েঞ্জার বিস্তার প্রতিরোধের জন্য সকল সরকারি-বেসরকারি স্কুল, চার্চ, থিয়েটার, সিনেমা হল, বিনোদনকেন্দ্র, সভা-সভাবেশস্থল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। দশ বা দশের অধিক কোনও জনসমাবেশও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখেনা, শতাব্দী প্রাচীন প্রেক্ষাপটে আজকের মতো ইন্টারনেট, অনলাইন পোর্টাল, টিভি ইত্যাদি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার অস্তিত্ব ছিলনা। মুদ্রিত পত্রিকাই ছিল জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে কোনও কিছু প্রচারের একমাত্র মাধ্যম।

যে শহরের মেয়র বিজ্ঞাপনটি প্রকাশ করেন, সেই কেলৌনা হলো কানাডার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী রাজ্য ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। বর্তমানে শহরটি রাজ্যের তৃতীয় প্রধান গুরুত্বপূর্ণ শহর। ভ্যাঙ্কুভার ও ভিক্টোরিয়ার পরেই শহরটির স্থান।

খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদশালী অঞ্চলটিতে একদা আদিবাসীরা বাস করলেও পরে ব্রিটিশ ও ফরাসি ঔপনিবেশিক শক্তি তা দখল করে। সেখানে ইংরেজির পাশাপাশি অন্যতম প্রধান ভাষা হিসেবে ফরাসি ভাষাও প্রচলিত।

আর্কাইভ থেকে পাওয়া এই তথ্যের বরাতে শতবর্ষ আগের মহামারি পরিস্থিতিতে নাগরিক ও সামাজিক সচেতনার প্রকৃতি অনুধাবন করা যায় পত্রিকায় প্রকাশিত এই পাবলিক নোটিশের মাধ্যমে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সফিকুল ইসলামের সূত্রে শতাব্দী প্রাচীন মহামারির সময়ের এই গণবিজ্ঞপ্তিটি সম্পর্কে জানা গেছে।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড