• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভুল সংবাদ শেয়ার করা থেকে বাঁচবেন যেভাবে

  মো. সাইফুল ইসলাম

২৫ মার্চ ২০২০, ১৪:৫৫
ভুল সংবাদ
ছবি : প্রতীকী

মহামারি করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ ভাইরাস যেভাবে দ্রুত ছড়াচ্ছে ঠিক সেভাবেই ছড়াচ্ছে গুজব, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ। এসব গুজব শুধুমাত্র আমাদের দেশেই নয়, পুরো বিশ্বেই ছড়ায়। কথায় বলে, দুঃসংবাদ বাতাসের আগে যায়। বর্তমানের মিথ্যা সংবাদ, গুজব ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াতে হয়তো বাতাসের প্রয়োজন নেই। হাতের নাগালে থাকা মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও খুদে বার্তা ইত্যাদিই বাতাসের ভূমিকা পালন করছে।

বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া তথ্যগুলোতে অপ্রয়োজনীয় ও ভুল, এমনকি ক্ষতিকর তথ্য ও উপদেশ থাকতে পারে। যে তথ্যগুলো জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণও হতে পারে। এছাড়াও সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও বিভাজনের সৃষ্টি হতে পারে।

কিছু কিছু মিথ্যা তথ্য আবার সত্য-মিথ্যা একত্রিত করে প্রচার করা হয়। এতে সংবাদটি সত্য নাকি মিথ্যা তা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই যেমন ডিন কুন্টজের ‘দ্য আইস অফ ডার্কনেস’ বইয়ে নাকি করোনা ভাইরাসের আগাম বার্তা দেওয়া হয়েছিল মর্মে একটি তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুবই ভাইরাল হয়েছিল। সেখানে তথ্যগুলো এমনভাবে দেওয়া হয়েছিল যার ফলে তথ্যটিকে মিথ্যা বলা কঠিনই ছিল।

মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজর রাখলে দেখা যায় অনেক শিক্ষিত লোকও জড়িত আছেন। এছাড়াও বিশ্বস্ত বন্ধু, পরিবারেরই সদস্য এমনকি চিকিৎসক এবং নার্সরাও বাদ যান না। আসলে এই ভুলটার জন্য হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো কিছু পোস্ট করার পূর্বে আমাদের অসাবধানতাই দায়ী।

ট্রাম্প টুইট করেছিল হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং এজিথ্রোমাইসিন করোনা ভাইরাস থেকে মুক্তি দিতে পারে। কিন্তু সিএনএনের সংবাদ থেকে জানা গেল, এই ওষুধ খেয়ে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই এক ব্যক্তি মারা গেছেন। তার স্ত্রী মৃত্যুশয্যায় আছেন।

ট্রাম্পের টুইটে দেওয়া জার্নালটিও ঘেঁটে দেখছিলাম। সেই জার্নালে অবশ্য ওষুধ দুটি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে। যেখানে সফলতাও পেয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশে এসব তথ্য প্রচার কিন্তু হিতে-বিপরীতই হতে পারে। আমাদের দেশে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক ক্রয় করাও যায় আবার খাওয়াও যায়। এই ওষুধও যে মানুষ খেয়ে নিজের বিপদ ডেকে আনবে না তা বলা যায় না। অথচ এসব চিকিৎসা যদি কার্যকরও হয় তবুও ব্যবহারের পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আমাদের দেশে কতজন তা করবে?

যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনোকিছু শেয়ার দিচ্ছেন তারা হয়তো পুরো লেখাটি পড়ছেনই না। হয়তো সামান্য একটু চোখ বুলিয়েই শেয়ার করছেন। তবে কোনোকিছু শেয়ার করার পূর্বে সবারই ভাবা উচিত। এছাড়াও ভালোভাবে পড়াশোনা করা উচিত। সেই সঙ্গে প্রয়োজন পড়তে পারে পঠিত লেখাটির সত্যতা যাচাইয়ের। আর যদি কোনো তথ্য অন্য কোনো মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আরও বেশি বেশি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম থেকে যাচাই করা উচিত।

আপনার শেয়ার করা তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য কিছু কিছু বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন। যেসব বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার সেগুলো একটু আলোচনা করছি।

উৎস : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যখন তথ্যসূত্র দেখবেন চীনের বিশেষজ্ঞ, জাপানী ডাক্তার, যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক তখন সেই তথ্য বারবার যাচাই করুন। তথ্যের উৎস যদি হয় আমার বন্ধুর বন্ধু চট্টগ্রাম থেকে বলছে, সেখানে করোনা ভাইরাসে মানুষ মারা যাচ্ছে তবে তা গুজব হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। একটু ভাবুন, করোনা ভাইরাসে যদি চট্টগ্রামে অসংখ্য লোক মারা যেত তবে কী গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমগুলোতে সংবাদ চলে আসত না? ইউটিউবের ভিডিও কে বা কারা তৈরি করে, তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতাও আপনার বোঝা উচিত। তারা কি বড় বড় গবেষক বা বিশেষজ্ঞ? তাদের সংবাদ ও তথ্যের উৎস কী? তাদের ভিডিও শেয়ার দেওয়ার আগেও ভাবতে হবে।

লোগো : কয়েকদিন আগে ইউনিসেফের লোগো এবং নাম ব্যবহার করেও মিথ্যা তথ্য আমাদের দেশে ব্যাপক ছড়িয়েছিল। শুধু লোগো ব্যবহার করে সেখানে কোনো তথ্য লিখে শেয়ার করলে সত্য ভাবা যাবে না।

ভাষার ব্যবহার : যে মিডিয়া যত বেশি সত্য ও সঠিক তথ্য প্রচার করে তার গ্রহণযোগ্যতাও তত বেশি হয়। সত্য ও সঠিক তথ্য প্রচারের জন্য প্রয়োজন শিক্ষিত ও দায়িত্বশীল জনবল। এখন যেসকল পত্রিকা ও পোর্টালের বানান ভুল, সচরাচর বাক্যের গঠনগত ভুল পরিলক্ষিত হয়, তাদের প্রকাশিত তথ্য, পত্রিকা ও পোর্টালের সংবাদের মান নিয়ে প্রশ্নই তোলাই যায়। মনে রাখবেন দেশে অসংখ্য পত্রিকা ও পোর্টালের জনবল থাকে হাতে গোনা কয়েকজন। তারা হয়তো নিজের বাসায় বসে মনের মতো করে সংবাদ বানায়।

শেয়ার করার জন্য আকুল আবেদন করা : দেশের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই বিষয়টা অনেক বেশি লক্ষ্য করা যায়। শেয়ার করে পরিচিতদের মাঝে ছড়িয়ে দিন, আপনার একটি শেয়ারে হয়তো বহুলোক করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়া থেকে মুক্তি পাবে। এসব পোস্ট বেশিরভাগই মিথ্যা হয়।

সত্যতা যাচাইয়ে ওয়েবসাইটের সহায়তা : কোনো তথ্যের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য অনলাইনে বেশকিছু ওয়েবসাইট আছে। সেসব ওয়েবসাইটে গিয়েও আপনাদের প্রাপ্ত তথ্যের সত্যতা যাচাই করে নিতে পারেন।

যাইহোক, বর্তমানে যেহেতু করোনা ভাইরাস নিয়ে ব্যাপকভাবে ভুল তথ্য প্রচারিত হচ্ছে তাই যথাযথ তথ্যের জন্য প্রথমেই চোখ রাখুন ‘ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের’ ওয়েবসাইটে।

প্রাণী সম্পর্কে যেসব তথ্য ছড়ায় সেগুলোর সত্যতা যাচাই আরও জরুরি। কারণ প্রাণিদের সম্পর্কে প্রাণিবিষয়ক অভিজ্ঞদের লেখনি আমাদের দেশে খুব কম মাধ্যমেই পাবেন। তাই বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্যরা যখন লেখে তখন নানা ধরনের ভুল তথ্য দিয়ে থাকে। গবাদি পশুপাখির মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়ানোর ভুল তথ্যটি বহু মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এখনো কিছু কিছু মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছেই। অথচ এই তথ্যটা মোটেও সঠিক নয়। আপনি বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যম, জার্নাল ও ওয়েবসাইটে খোঁজ নিতে পারেন।

আপনার প্রকাশিত তথ্য ভুল হলে আপনার সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা দেখে হয়তো আপনার পরিচিত মহল কিছু বলে না। কিন্তু একটু সজাগ দৃষ্টি রাখলেই বুঝবেন আঁড়ালে হয়তো তারা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বিচক্ষণতা নিয়ে হাসাহাসি করছে। কেন আপনি তাদের সে সুযোগ দেবেন?

আর মিথ্যা তথ্য শেয়ার যে কতটা ক্ষতিকর হতে পারে তা কিন্তু কারও অজানা নয়। তাই কোনো কিছু শেয়ার করার পূর্বে ভাবুন। আপনার শেয়ারকৃত তথ্যের উৎস বা লিংক যারা তৈরি করছে তারা কি আপনার চেয়েও বেশি সচেতন? নাকি ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে ছড়াচ্ছে?

সূত্র- সায়েন্স অ্যালার্ট

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড