• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

স্ত্রী-সন্তানদের ছবি দেখে কাঁদি, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের চিঠি

  আন্তর্জাতিক ডেস্ক

১৯ মার্চ ২০২০, ১১:৪৮
স্ত্রী-সন্তানদের ছবি দেখে কাঁদি, হাসপাতাল থেকে চিকিৎসকের চিঠি
ইতালির গাভাটেসনি হাসপাতালের চিকিৎসক ড্যানিয়েল ম্যাককিনি (ছবি : স্পন্সর)

মহামারি করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) বিশ্বব্যাপী প্রায় নয় হাজার লোকের প্রাণহানি ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রাণঘাতী ভাইরাসটির ভয়াবহতা জানিয়ে আবেগঘন চিঠি লিখেছেন ইতালির এক চিকিৎসক। তার গোটা পরিবার এখন হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে।

বাধ্য হয়ে তাকে সন্তানদের সঙ্গে ভিডিও কলের মাধ্যমে কথা বলতে হয়। এমনকি বহুদিন ধরে দেখা নেই স্ত্রীরও। ইতালির গাভাটেসনি হাসপাতালের চিকিৎসক ড্যানিয়েল ম্যাককিনি বর্তমানে ব্যস্ত আছেন করোনায় আক্রান্ত রোগীদের নিয়ে।

বুধবার (১৮ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লেখা খোলা চিঠিতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর ভয়াবহ ঘটনা এবং পরিস্থিতির এক হৃদয়বিদারক বর্ণনা দিয়েছেন তিনি।

ড্যানিয়েল লিখেছিলেন– আমাদের দেশে বর্তমানে ঘটে চলছে ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডি। রোগীরা মৃত্যুর আগে কেবল চোখের পানি ফেলছেন। কাছের মানুষদের কাছ থেকে বিদায় নেওয়ার সৌভাগ্যটাও তাদের নেই। তারা কখনোই একা একা মরতে চাননি। যদিও তাদের বিদায় জানাতে হচ্ছে ক্যামেরাকে।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, রোগীরা সজ্ঞানে, সব কষ্ট সহ্য করতে করতে প্রাণ হারাচ্ছেন। অধিকাংশ সময়েই স্বামী-স্ত্রী একই দিনে মারা যাচ্ছেন। বৃদ্ধ দাদা-দাদি, নানা-নানিরা তাদের নাতিদের মুখ শেষবারের মতো দেখারও সুযোগ পাচ্ছেন না।

নিজের পরিবার সম্পর্কে চিকিৎসক লেখেন, সন্তানদের সঙ্গে ক্যামেরা ব্যবহারের মাধ্যমে কথা বলছি। মাঝে মধ্যে একা একা স্ত্রীর ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদি। আমাদের কারও কোনো দোষ ছিল না। যারা বলছিল– এই রোগটি তেমন ভয়ংকর নয়, সব দোষ কেবল তাদের। নীতিনির্ধারকরা বলেছিলেন– এটি সাধারণ এক ধরনের ফ্লু। তাই তখন আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যদিও এখন অনেক বেশি দেরি হয়ে গেছে।

তিনি আরও লিখেছেন, দয়া করে কেউ ঘরের বাইরে যাবেন না। আমাদের কথা শুনুন। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়াই ভালো। সব সময় সাধারণ মাস্ক ব্যবহার করুন। প্রফেশনাল মাস্কগুলো আমাদের ব্যবহার করতে দিন। কেননা এই মাস্কের অভাবে আমাদের স্বাস্থ্যও অনেক ঝুঁকিতে রয়েছে। আমাদের অনেক সহকর্মী এরই মধ্যে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।

এ দিকে প্রাণঘাতী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত বৃদ্ধদের এখন থেকে সেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইউরোপের দেশ ইতালি। বুধবার একটি গোপন নথির বরাতে ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশটিতে করোনা আক্রান্তের তালিকায় সব থেকে বেশি রয়েছেন বৃদ্ধরা। এ কারণে তাদের এখন সব থেকে বেশি প্রয়োজন নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্র বা আইসিইউ। যদিও প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে আইসিইউ সংকটে রয়েছে ইতালি।

মূলত এসব কারণে ৮০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই সেবা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কেননা তরুণদের তুলনায় তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেক কম। তাই বাধ্য হয়েই এমন অমানবিক সিদ্ধান্তটি নেওয়া হলো।

অপরদিকে ইতালির নাগরিক সুরক্ষা সংস্থার মতে, দেশটিতে গত এক দিনে ৪৭৫ জনের প্রাণ গেছে। এতে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৯৭৮ জনে। তাছাড়া মোট আক্রান্তের সংখ্যাও ৩৫ হাজার ছাড়িয়েছে।

চলমান সংকটময় পরিস্থিতিতে দেশটিতে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় ৬ কোটির অধিক মানুষ। এরই মধ্যে সেখানকার ব্যস্ততম শহরগুলো পরিণত হয়েছে জনশূন্য ভূতুড়ে নগরীতে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, উৎপত্তিস্থল চীনের সীমা অতিক্রম করে এর মধ্যে বিশ্বের অন্তত ১৭৩টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। বিশ্বব্যাপী ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ লাখ ১৯ হাজার মানুষ। আর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যাও এরই মধ্যে ৮ হাজার ৯৬৭ জনে পৌঁছেছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাস মানুষ ও প্রাণীদের ফুসফুসে সংক্রমণ করতে পারে। ভাইরাসজনিত ঠান্ডা বা ফ্লুর মতো হাঁচি-কাশির মাধ্যমে মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে এই ভাইরাস। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হওয়ার প্রধান লক্ষণগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, জ্বর, কাশি, নিউমোনিয়া ইত্যাদি। তাছাড়া শরীরের এক বা একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিষ্ক্রিয় হয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে।

আরও পড়ুন : মায়ের সঙ্গে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে করোনা আক্রান্ত সন্তান (ভিডিও)!

বর্তমানে সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হলো ভাইরাসটি নতুন হওয়ায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। ভাইরাসটির সংক্রমণ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় সংক্রমিত ব্যক্তিদের থেকে দূরে থাকা। তাই মানুষের শরীরে এমন উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।

ওডি/কেএইচআর