• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জনতার কাছ থেকেই ‘জনতার কমিশনার’ নিতেন কোটি টাকার চাঁদা

  অধিকার ডেস্ক    ২০ অক্টোবর ২০১৯, ১০:২৫

কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব
কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব (ছবি : সংগৃহীত)

চাঁদাবাজি ও দখলের টাকায় রাতারাতি ধনকুবের বনে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিব। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্বের অভিযোগে এই যুবলীগ নেতাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

শনিবার (১৯ অক্টোবর) রাতে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ৮ নম্বর সড়কের ৪০৪ নম্বর বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

অভিযানকালে ওই বাসা থেকে ৭টি বিদেশি মদের বোতল, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ ৩৩ হাজার টাকা ও একটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়। অস্ত্রের কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি রাজীব।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ছয় বছর আগে মোহাম্মদপুরের মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির একটি বাড়ির ছোট এক কক্ষে সস্ত্রীক ভাড়া থাকতেন রাজীব। ভাড়া দিতেন ৬ হাজার টাকা। এখন ওই হাউজিংয়েই নির্মাণ করেছেন রাজপ্রাসাদের আদলে আলিশান ডুপ্লেক্স বাড়ি। নামে-বেনামে তার অন্তত ছয়টি বাড়ি রয়েছে মোহাম্মদপুর এলাকাতেই।

এ ছাড়াও মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম, দুবাইয়ে বুর্জ খলিফার পাশে একটি বাড়ি এবং সৌদি প্রবাসী মিজান নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে হোটেল ব্যবসায় অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছেন। ছয় বছর আগে একমাত্র বাহন মোটরসাইকেলের পরিবর্তে এখন তার মার্সিডিস, বিএমডব্লিউ, ক্রাউন প্রাডো, ল্যান্ডক্রুজার ভি-৮, বিএমডব্লিউ স্পোর্টস কারসহ নামিদামি সব ব্র্যান্ডের গাড়ি। কিছুদিন পরপরই পরিবর্তন করেন গাড়ির ব্র্যান্ড। যেখানেই যান, তার গাড়িবহরের সামনে-পেছনে থাকে শতাধিক সহযোগীর একটি দল।

স্থানীয়রা জানায়, কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব নিজের এলাকাকে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ আর মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন। ২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে দলীয় প্রার্থী ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন তিনি।

কমিশনার হওয়ার পরপরই তিনি ‘জনতার কমিশনার’ হসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এই ‘জনতার কমিশনার’ জনতার কাছ থেকেই মাসে কোটি টাকা চাঁদা নিতেন। বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড, ফুটপাত থেকে তিনি চাঁদা উঠাতেন।

গেল মাসের মাঝামাঝিতে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছিলেন রাজিব। এরপর তার খোঁজ শুরু হয় বলে র‌্যাবের মুখপাত্র সারোয়ার বিন কাশেম জানিয়েছেন।

এরই মধ্যে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেকুজ্জামান রাজিবকে যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ।

হারুনুর রশীদ বলেন, চলমান দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে কেউ গ্রেফতার হলে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় রাজিবকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জানা যায়, এর আগেও ২০১৫ সালে এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার জন্য মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়কের পদ থেকে তিনি বহিষ্কার হয়েছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতাকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে উল্টো তিনিই হয়ে যান ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।

এর পরে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রাজীবকে, সরকারি জায়গা দখল করে ভাড়া দেওয়া, বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অপকর্মের অভিযোগ। আর সেই টাকা দিয়েই গড়ে তুলেছেন বিশাল সাম্রাজ্য। জানা গেছে, মোহাম্মদীয়া হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর সড়কের ৩৩ নম্বর প্লটে রাজীবের ডুপ্লেক্স বাড়িটি করতে খরচ হয়েছে ছয় কোটি টাকা।

এর বাইরে রহিম ব্যাপারী ঘাট মসজিদের সামনে আব্দুল হক নামের এক ব্যক্তির ৩৫ কাঠার একটি প্লট যুবলীগের কার্যালয়ের নামে দখলে নেন। ওই জমির পাশেই জাকির হোসেনের সাত কিংবা আট কাঠার একটি প্লট দখল করেছেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশের ময়ূর ভিলার মালিক রফিক মিয়ার কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জমিও দখল করেন রাজীব। পাবলিক টয়লেট নির্মাণের মাধ্যমে জমিটি দখল করা হলেও সেখানে পাঁচটি দোকান তুলে ভাড়া দিয়েছেন তিনি।

ঢাকা রিয়েল এস্টেটের ৩ নম্বর সড়কের ৫৬ নম্বর প্লট, চাঁদ উদ্যানের ৩ নম্বর রোডের রহিমা আক্তার রাহি, বাবুল ও মো. জসিমের তিনটি প্লটসহ অন্তত দশটি প্লট দখল করেছেন মোহাম্মদপুরের এই সুলতান।

মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের সামনে আল্লাহ করিম মসজিদ ও মার্কেটের নিয়ন্ত্রণও রাজীবের হাতে। অভিযোগ রয়েছে, মোহাম্মদপুর, বেড়িবাঁধ, বসিলা এলাকার পরিবহনে চাঁদাবাজিও তার নিয়ন্ত্রণে। অটোরিকশা, লেগুনা, ব্যাটারিচালিত রিকশা ও বাস থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা চাঁদা তোলে তার লোকজন। পাঁচ বছর ধরে এলাকার কোরবানির পশুরহাটের ইজারাও নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন রাজীব।

এর বাইরে মোহাম্মদপুর এলাকার সব মার্কেটেও তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। রাজীবের সব অপকর্মের সঙ্গী স্ত্রীর বড় ভাই ইমতিহান হোসেন ইমতি, যুবলীগ নেতা শাহ আলম জীবন, সিএনজি কামাল, আশিকুজ্জামান রনি, ফারুকসহ অর্ধশত ক্যাডার। অভিযোগ রয়েছে, রাজীবের নির্দেশেই যুবলীগকর্মী তছিরকে হত্যা করে তার ঘনিষ্ঠরা।

ওডি/এসএস

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড