• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আত্মবিশ্বাসী সম্রাট স্থায়ী হতে দুবাই পালাতে চেয়েছিলেন!

  অধিকার ডেস্ক

১৯ অক্টোবর ২০১৯, ১২:৪৭
সম্রাটের জবানবন্দি
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট (ছবি : সংগৃহীত)

সম্প্রতি ক্যাসিনো বাণিজ্যসহ অবৈধ অর্থ উপার্জনের কারণে একে একে যুবলীগের শীর্ষ সব নেতাদের নাম প্রকাশ হয়েছে। আর এসব আলোচনায় নাম উঠে আসে ঢাকার প্রভাবশালী মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি (বহিষ্কৃত) ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের। তবে আত্মবিশ্বাসী থাকায় প্রথমে গ্রেফতার আতঙ্ক না থাকলেও পরবর্তী সময়ে সিদ্ধান্ত পাল্টে ভারত হয়ে দুবাই পলানোর পরিকল্পনা করছিলেন সম্রাট।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরুর পরপরই আত্মগোপনে চলে যান সম্রাট। তিনি ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। ভারত থেকে দুবাই যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। দুবাই গিয়ে অন্য কোনো দেশের পাসপোর্ট সংগ্রহ করে তিনি সিঙ্গাপুর বা মালয়েশিয়ায় স্থায়ী হওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিচ ক্লাবের সামনে একটি ভবনের ১১ তলায় তার একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে।

বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্রাট গোয়েন্দাদের বলেছেন, চলমান শুদ্ধি অভিযান শুরুর পর সম্রাটের ধারণা ছিল তিনি সব ‘ম্যানেজ’ করতে পারবেন। এ বিষয়ে তার আত্মবিশ্বাসও ছিল। কারণ তার কাছ থেকে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রথম সারির কয়েকজন নেতা নিয়মিত মোটা অঙ্কের অর্থ নিতেন।

ঢাকায় দলীয় কোনো কর্মসূচি থাকলে সম্রাট সেখানে মোটা অঙ্কের অর্থ দিতেন। এ কারণে তিনি ভেবেছিলেন তাকে হয়তো গ্রেফতার করা হবে না। কিন্তু পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হলে দ্রুত তিনি পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন। বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

এছাড়া গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বিদেশে অর্থপাচারের পাশাপাশি অবৈধ সম্পদের বিষয়ে অনেক তথ্য দিয়েছেন। এগুলো যাচাই করে প্রমাণ সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। প্রমাণ পেলেই তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্রাটের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করতে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে র‌্যাব। সম্রাটের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে এর মধ্যে অধিকাংশই মানি লন্ডারিং আইনের আওতায় পড়ে। তাকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেফতারের সময় কোনো আলামত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এমনকি তাকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে নগদ অর্থ উদ্ধার করা যায়নি। অভিযানের আগেই অবৈধভাবে উপার্জিত বিপুল পরিমাণ অর্থ সরিয়ে ফেলেছেন তিনি। তখন কোনো আলামত না পাওয়ায় মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করতে পারেনি র‌্যাব।

সম্রাট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করেও বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছেন সম্রাট। এগুলো সবই মানি লন্ডারিং আইনের মধ্যে পড়ে।

সংস্থাটির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, তদন্তে এরই মধ্যে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। এগুলো যাচাই করে মানি লন্ডারিং আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্রাটকে ‘গডফাদারদের’ মুখোমুখি করা হতে পারে। রিমান্ডে থাকা সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে যাদের (গডফাদার) নাম বলেছেন, তাদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া শুরু করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। অকাট্য প্রমাণ পেলে শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় এনে সম্রাটের মুখোমুখি করা হবে।

গোয়েন্দা জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাট এরই মধ্যে চারজন গডফাদারের নাম বলেছেন। সম্রাটকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের তেমন কোনো বেগ পেতে হচ্ছে না। তাকে জিজ্ঞাসা করলেই অকপটে সব বলে দিচ্ছেন। সম্রাট জিজ্ঞাসাবাদে যেসব গডফাদারের নাম বলেছেন, তাদের মধ্যে যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া ও জি কে শামীমও রয়েছেন।

রাজধানীর রমনা থানায় দায়ের করা মাদক ও অস্ত্র আইনের দুটি মামলায় মঙ্গলবার সম্রাটকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। তার সহযোগী এনামুল হক আরমানকেও পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। শুক্রবার ছিল রিমান্ডের তৃতীয় দিন।

গত ৬ অক্টোবর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সহযোগী আরমানসহ সম্রাটকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ৭ অক্টোবর র‌্যাব-১ এর ডিএডি আবদুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা করেন। দুই মামলায় আসামিদের আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়। আদালত সম্রাটকে ১০ দিনের এবং আরমানের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ওডি/এআর

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড