• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নাঈমের থাবা টয়লেটেও, গড়েছেন সম্পদের পাহাড়!

  অধিকার ডেস্ক

১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:০৪
আনিসুর রহমান নাঈম
৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম (ছবি : সংগৃহীত)

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম, বয়স ৩৮। এই বয়সেই গড়েছেন বিপুল সম্পদ। তাকে সবাই ‘নাঈম খলিফা’ হিসেবে চেনেন। অভিযোগ উঠেছে, ‘পাবলিক টয়লেট থেকে শুরু করে মসজিদও বাদ যায় না তার থাবা থেকে। এসব অপকর্ম পরিচালনার জন্য তার রয়েছে আলাদা বাহিনী।’ তবে এসব অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলছেন নাঈম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার কয়েকজন জানান, নাঈম সাবেক এক মন্ত্রীর আত্মীয়। এ সুবাদে তদবির-বাণিজ্যের মাধ্যমে কাউন্সিলর হওয়ার আগেই বিপুল অর্থ গড়েন তিনি। তিনি কাউন্সিলর হওয়ার পর উঠেছেন ‘সম্পদের পাহাড়ে’।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, হাটে মাছ ও সবজি বিক্রি করে যাদের দিন চলত, তারা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তাদের রয়েছে আলিশান বাড়ি ও দামি গাড়ি। অবৈধ দখল-বাণিজ্য এর নেপথ্যে রয়েছে। রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা, শিয়ালডাঙ্গা, গাওয়াইর ও কাওলাসহ আশপাশের এলাকায় চলে নাঈমের দখল ও চাঁদাবাজি। তার বিরুদ্ধে মসজিদ কমপ্লেক্স, পাবলিক টয়লেট, খাসজমি, রাস্তা, ফুটপাত, সাইনবোর্ড ও সাধারণ মানুষের জমি দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

এলাকাবাসী আরও জানান, বিএনপির সময়ে ঢাকার মেয়র সাদেক হোসেন খোকা বিমানবন্দর পাবলিক টয়লেটটি মো. ফয়েজ নামে একজনকে ইজারা দিয়েছিলেন। ফয়েজ মারা গেলে ওই টয়লেট ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পান আব্দুল হান্নান ওরফে জাপানি হান্নান। হান্নানের হয়ে রোকন এটি পরিচালনা করতেন। ২০১৭ সালের জুলাইয়ে ডিএনসিসি এটা দখলমুক্ত করে। মোটর দিয়ে অবৈধভাবে পানি উত্তোলন করে বিক্রির দায়ে রোকনকে ৩ মাসের দণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একই সঙ্গে ডিএনসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টয়লেটের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেন নজরুল ইসলাম মোহনকে। উত্তরাপূর্ব থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।

মোহন বলেন, টয়লেটটি কাগজপত্রে আমার ব্যবস্থাপনায় আছে। কিন্তু সেটা তাজুল নামে একজন দখল করেছেন। তাজুল বলছেন, তিনি এটি কাউন্সিলর নাঈমের নির্দেশে দখল করেছেন। তিনি টয়লেটের ম্যানেজার। এর জন্য প্রতি মাসে নাঈমকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়।

বিমানবন্দর এলাকায় চাঁদাবাজির বিষয়ে পুলিশের এক প্রতিবেদনে নাঈমের চাঁদাবাজির বিষয়টি উঠে এসেছে। ওই প্রতিবেদন বলছে, কসাইবাড়ি পাবলিক টয়লেট থেকে তাজুলের মাধ্যমে মাসে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা, বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পাবলিক টয়লেট থেকে বাবু ওরফে জামাই বাবুর (দক্ষিণখান থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি) মাধ্যমে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা, দক্ষিণখান বাজার-গাওয়াইর রুটে ইজিবাইক থেকে মাসে ১ লাখ টাকা, কাওলা-শিয়ালডাঙ্গা-দক্ষিণখান বাজার রুটে চলা অটোরিকশা থেকে আজম নামে একজনের মাধ্যমে মাসে ১ লাখ টাকা, কসাইবাড়ির ৬টি বাস কাউন্টার থেকে জান্নাত নামের একজনের মাধ্যমে মাসে ৩০ হাজার টাকা, কসাইবাড়ি টায়ারপট্টি ফুটপাত থেকে আজম ও জান্নাতের মাধ্যমে মাসে ৪০ হাজার টাকা, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেটের সামনের ফুটপাত থেকে মাসে ৩০ হাজার টাকা, আশকোনা রেলগেট থেকে হাজি ক্যাম্প পর্যন্ত ফুটপাতে জামাই বাবুর মাধ্যমে মাসে ৩০ হাজার টাকা, বাবুস সালাম মসজিদ মার্কেটের দুইটি আবাসিক হোটেল থেকে মাসে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, রেলস্টেশন ও রেললাইনের পূর্বপাশে পার্কিংয়ের দোকান থেকে মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা, রেললাইনের পশ্চিমপাশে মাসে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা আদায় করেন কাউন্সিলর নাঈম।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিমানবন্দর পাবলিক টয়লেট চত্বর ঘিরে অবৈধভাবে গড়ে উঠছে কয়েকটি দোকান ও হোটেল। এসব দোকান ও হোটেলে টয়লেট থেকে অবৈধভাবে বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। দিনে ওই টয়লেট থেকে হাজার হাজার গ্যালন পানি বিক্রি হয়। অসংখ্য গাড়ি ও মোটরসাইকেল ধোয়াও হয় এখানে। ব্যবস্থাপনার কাজে জড়িতরা বলেন, এখান থেকে মাসে প্রায় ২৪ লাখ টাকা আয় হয়। এর কিছু অংশ সিটি করপোরেশনকে দেওয়া হয়, বাকিটা নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়।

স্থানীয়রা জানান, ‘টাকার খনি’-এ পাবলিক টয়লেট নাঈমের ওয়ার্ডে পড়েনি। সীমানা জটিলতার বিষয়টি উল্লেখ করে এ পাবলিক টয়লেট আয়ত্তে ডিএনসিসিতে আবেদন করেছেন কাউন্সিলর নাঈম। আর জটিলতা এড়াতে এটি ভেঙে ফেলার আবেদন জানিয়েছে আরেক পক্ষ।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নাঈম ও তার পরিবারের সদস্যরা বিমানবন্দর গোলচত্বরের পূর্ব পাশের বাবুস সালাম মসজিদ মাদ্রাসা কমপ্লেক্স মার্কেট দখল করে নিয়েছেন। এ নিয়ে বিরোধে গত মাসের শুরুর দিকে সেখানে নাঈম বাহিনীর হামলায় তিন নারীসহ চারজন আহত হন। এ নিয়ে বিমানবন্দর থানায় নাঈমসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন হামলায় গুরুতর আহত ব্যবসায়ী নাজমুল হোসেন ভূঁইয়া ওরফে প্রিন্স। এজাহারে নাঈমের নেতৃত্বে মার্কেট দখলে নিতে কয়েক দফা হামলার অভিযোগ ও ফাঁকা গুলি ছোঁড়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া মসজিদ কমপ্লেক্স দখল করায় আদালতে মামলা করেছেন বাবুস সালাম ওয়াক্ফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লি সৈয়দ মোস্তফা হোসেন। এতে কাউন্সিলর নাঈম ছাড়াও মোতালেব মুন্সী, আনিছুর রহমান ও মামুন সরকারকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারে বলা হয়, কাউন্সিলর নাঈম নিজেকে প্রিন্সিপাল দাবি করে কমপ্লেক্সটি দখল করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দখল ও চাঁদাবাজি করছেন। ওয়াক্ফ সম্পত্তি দখল করায় নাঈম ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি মামলাও হয়েছে।

মসজিদ দখল নিয়ে স্থানীয়রা বলছেন, মসজিদে দান ও মার্কেট থেকে মাসে প্রায় ৫০ লাখ টাকার মতো আয় হয়। নাঈম জোর করে দোকানগুলোর ভাড়া নিয়ে যান। কমপ্লেক্সের টাকা ইচ্ছেমতো ব্যয় করেন। তিনি কারও কাছে জবাবদিহি করেন না।

ওডি/এমআর

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড