• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আলমাসে নামি-দামি ব্র্যান্ডের নকল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য! 

  আয়াজ উর রাহমান

১৬ জুলাই ২০১৯, ১৮:১৮
আলমাস সুপার শপে মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি
আলমাস সুপার শপ ধানমন্ডি শাখা থেকে ক্রেতার ক্রয়কৃত মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য (ছবি : দৈনিক অধিকার)

বিদেশ থেকে অবৈধ পন্থায় নকল পণ্য আনাসহ মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বাজারে বিক্রি করছে দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আলমাস। এসব অভিযোগে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তেমন কোনো গুরুত্ব নেই প্রতিষ্ঠানটির। বরং বাজারে দাপটের সাথে এখনো নকল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি করে চলেছে আলমাস।

আলমাস সুপার শপ ধানমন্ডি শাখা থেকে নাজমুল হক সজল নামে এক ভোক্তা সোমবার (১৫ জুলাই) সকালে একটি নামি-দামি ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ক্রয় করেন। ওই সময় খেয়াল না করলেও পরে তিনি দেখতে পান ওই পণ্যের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে। শ্যাম্পুর গায়ে লেখা তারিখ অনুযায়ী, উৎপাদন ২০১৬ সালের ৭ জানুয়ারি এবং এর মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি। এর মানে ওই পণ্যের মেয়াদ শেষ!

আলমাস থেকে ক্রেতার ক্রয়কৃত মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য

এই অভিযোগে দৈনিক অধিকার অনুসন্ধানী দল আলমাসে গেলে এমন আরও নকল ও মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য চোখে পরে। যেসব পণ্যের গায়ে কোনো ধরনের মেয়াদের তারিখই লেখা নেই। এ বিষয়ে অনুসন্ধানী দল পরিচয় গোপন রেখে আলমাসের এক কর্মকর্তাকে মেয়াদের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি লাগেজ পার্টির পণ্য বলে জানান।

পরে এ বিষয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে দৈনিক অধিকারের সঙ্গে সরাসরি কথা হয় আলমাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও তাদের ধানমন্ডি শাখার ম্যানেজার মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে।

তারা দৈনিক অধিকারকে জানায়, আসলে দুই একটা মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য এমন থাকতেই পারে। তবে সব পণ্য তো আর এমন থাকে না। মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য কেন বিক্রি করছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা তাদের ভুল স্বীকার করেন এবং বলেন আমরা আর এমন পণ্য বিক্রি করবো না। আজই এসব পণ্য সরিয়ে ফেলবো।

এরপর মেয়াদের তারিখ ছাড়া পণ্যের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে আলমাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা জানান, আমাদের পরিচিত অনেকে বিদেশে ঘুরতে গেলে তখন তাদের আনা পণ্য আমরা আলমাসে বিক্রি করি।

লাগেজ পার্টির পণ্য বিক্রির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে, তারা জানান লাগেজ পার্টির সহায়তায় আমরা এসব পণ্য এনে মূলত বাজারে বিক্রি করছি।

আলমাসে লাগেজ পার্টির নকল পণ্য

ওইসব পণ্যের মেয়াদ আছে কিনা জানতে চাইলে তারা এই বিষয়ে চুপ থাকেন এবং বলেন, সব পণ্য তো আর এভাবে আনা হয় না। কেউ গেলে আমরা এনে বিক্রি করি। অনেক সুপার শপই এভাবে এনে বিক্রি করে। এভাবে পণ্য এনে বিক্রি বৈধ কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, এভাবে পণ্য এনে বিক্রি অবশ্যই অবৈধ।

এরপর ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কাছে যেসব পণ্য আছে তা কাস্টমারদের কাছে বিক্রি করা শেষ হলেই আমরা আর এমন পণ্য বিক্রি করবো না।

এর আগেও গত বছর ২২ মার্চ লাগেজ পার্টির সহায়তায় নকল পণ্য বাজারে বিক্রির দায়ে আলমাস সুপার শপকে জরিমানা করা হয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৩৭ ধারা অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা সহ সতর্ক করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর। এমনকি এধরনের অপরাধ পুনরায় করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছিলেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মঞ্জুর শাহরিয়ার।

আলমাসে এমন অবৈধ ও মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির বিষয়ে নাবিলা নামের এক ক্রেতাকে জিজ্ঞেস করা হলে উনি দৈনিক অধিকারকে জানান, আলমাস থেকে সব সময়ই পণ্য কেনা হয়। তবে সব সময় মেয়াদের বিষয়টা খেয়াল করা হয় না। তবে যদি আগে এমন বুঝতাম আর এখান থেকে পণ্য কিনতাম না।

এছাড়া চলতি বছরের ৯ মে আলমাস সুপার শপের বিরুদ্ধে বিএসটিআই এর অনুমোদনহীন পণ্য বিক্রি, অবৈধ পন্থায় পণ্য আনাসহ মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রির অভিযোগে লাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

এরপর গত ২১ মে ঢাকার কেরানীগঞ্জ, জিঞ্জিরা, চকবাজার ও মৌলভীবাজার এলাকায় নামি-দামি ব্র্যান্ডের নামে তৈরি করা নকল কসমেটিক ও ব্যাগ বিক্রির অপরাধে সুপার শপ আলমাসকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর।

একাধিকবার অভিযান চালানো হলেও এসবের যেন কোনো প্রকার তোয়াক্কাই নেই দেশের স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানের। বরং দাপটের সঙ্গে মেয়াদ উত্তীর্ণ ও নামি-দামি ব্র্যান্ডের নকল পণ্য বাজারে বিক্রি করেই চলেছে আলমাস।

এসব অভিযোগের বিষয়ে দৈনিক অধিকারের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক মঞ্জুর শাহরিয়ার বলেন, আলমাস সুপার শপের বিষয়ে আমাদের কাছে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছি।

পণ্য আমদানির বিষয়ে তিনি জানান, আমাদের দেশে অনেক সুপার শপ এভাবে বিদেশ থেকে অবৈধ পন্থায় পণ্য এনে বাজারে বিক্রি করছেন বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে অবশ্যই পণ্যের মোড়কে আমদানিকারকের নাম উল্লেখ থাকতে হবে। আমদানিকারকের নাম ছাড়া পণ্য বিক্রি সম্পূর্ণ অবৈধ। এসবের বিরুদ্ধে আমরা অভিযান অব্যাহত রেখেছি এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।

ওডি/এআর

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড