• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সাত্তারের টার্গেট সুন্দরী নারী

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২০ জুন ২০১৯, ১৯:২৭
গাড়িচালক আবদুস সাত্তার
গাড়িচালক আবদুস সাত্তার (ছবি : সংগৃহীত)

একজন চিকিৎসকের ব্যক্তিগত গাড়িচালক আবদুস সাত্তার। তিনি চিকিৎসককে আনা-নেওয়া করার ফাঁকে রাইড শেয়ারিং অ্যাপে যাত্রী তুলতেন। ৪০ বছরের সাত্তারের প্রধান টার্গেট সুন্দরী নারী। তিনি বিশেষ এলাকা ও সময়ে রাইড শেয়ারিংয়ে নামতেন। কারণ ওসব এলাকায় তখন নারীরা যানবাহনের অপেক্ষায় থাকেন। নারীদের যাত্রী করে সুযোগ বুঝে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা করেন। এমনকি গাড়ির ভেতর থেকে হাত বাড়িয়ে নিপীড়ন করতেন। এভাবে অনেক নারী তার কাছে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে তথ্য জানা গেছে।

নারীদের যৌন নিপীড়নের এক পর্যায়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে গাড়ি নিয়ে দ্রুত পালাতেন সাত্তার। সাত্তারের শিকার হন ঢাকার ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও। ঘটনার পরে ওই তরুণীর বাবা খিলগাঁও থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় গত ১৭ জুন গ্রেফতার হন ভোলার লালমোহন উপজেলার সাত্তার।

এ ব্যাপারে বুধবার (১৯ জুন) ডিএমপির খিলগাঁও জোনের এসি জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই শিক্ষার্থী পরিবারসহ রাজধানীর শাহজাহানপুরে বাস করেন। তিনি নিয়মিত বাসা থেকে খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টার এলাকা পর্যন্ত রিকশায় যাতায়াত করতেন। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে মহাখালীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতেন। অটোরিকশা পেতে দেরি হলে অপেক্ষা করতেন। গত মে’তে কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় অটোরিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। রাস্তায় যথেষ্ট জায়গা ছিল; কিন্তু হঠাৎ সাদা রঙের একটি প্রাইভেটকার তার গা ঘেষে দাঁড়ায়। ওই ছাত্রী গাড়ির কাছ থেকে কিছুটা সরে গেলেও রেহাই মেলেনি। গাড়িটি আরও চাপিয়ে দেওয়া হয় তার দিকে। গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে তাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করেন গাড়িচালক সাত্তার। তবে এ সময় একটি অটোরিকশা পাওয়ায় দ্রুত সরে যান তিনি। ওই দিনের মতো রক্ষা পান। এরপর সাত্তার আরও দুদিন একইভাবে গাড়ির ভেতর থেকে ওই ছাত্রীর শরীরে স্পর্শ করেন।

একইভাবে গত ১৩ মে খিলগাঁও কমিউনিটি সেন্টারের সামনের এলাকায় ময়লার ভাগাড়ের পাশে অটোরিকশার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই ছাত্রী। সেদিনও সাদা রঙের প্রাইভেটকার নিয়ে সাত্তার তার পাশে গিয়ে গাড়ি থামান। ছাত্রী পিছু হটলে তাকে রাস্তার পাশের ময়লার ভাগাড়ের সঙ্গে চাপিয়ে গাড়ি দাঁড় করান সাত্তার। পরে ড্রাইভিং সিটে বসে থেকে ছাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। ওই ছাত্রী চিৎকার শুরু করলে আশপাশের মানুষ এগিয়ে আসার আগেই দ্রুত সটকে পড়েন সাত্তার। পরে গাড়িটির দিকে দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে গাড়ির নম্বরপ্লেটের ছবি তুলে রাখেন ছাত্রী।

ঘটনার তিন দিন পর গত ১৬ মে ওই ছাত্রীর বাবা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে দেওয়া গাড়িটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ঢাকা মেট্রো-গ-২৫৮২৫৫। সেই সূত্র ধরে তদন্তে নামে খিলগাঁও থানা।

পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুল বলেন, বিআরটিএ থেকে গাড়ির মালিকের ঠিকানা পায়। গাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে গত ১৭ জুন গাড়ির মালিক ও তার চালককে থানায় হাজির করা হয়। পরে ওই ছাত্রীকেও থানায় ডাকা হয়। অনেকের উপস্থিতিতে ওই ছাত্রী অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারেন। পরে অপরাধীকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়।

গ্রেফতারের পর সাত্তার অভিযোগ স্বীকার করে পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেন। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসি জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, সাত্তার এক চিকিৎসকের ব্যক্তিগত গাড়িচালক। তবে ফাঁকে ফাঁকে রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করে রাইড শেয়ারিং অ্যাপের মাধ্যমে যাত্রী তুলতেন। সে সময় নারীদের টার্গেট করে যৌন হয়রানি করতেন। এভাবে তিনি নারীদের যৌন হয়রানি করে আসছিলেন।

এসি জাহিদুল বলেন, প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে। তবে সম্মানের কথা ভেবে করে অনেকেই থানায় আসেন না। এসব বিষয়ে পুলিশ অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এসব নিয়ে পুলিশের কাছে এলে অপরাধীরা ভয় পাবে ও অপরাধ কমবে।

ওডি/এমআর

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড