• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

৪৩ বছরের ‌প্রতারণার ক্যারিয়ার

  অধিকার ডেস্ক    ২৭ মে ২০১৯, ০৩:০৮

রয়্যাল চিটার ডেভেলপমেন্ট
রয়্যাল চিটার ডেভেলপমেন্ট গ্রুপের প্রধান বারেক ও তার সদস্যরা। (ছবি : সংগৃহীত)

যৌবনকালে সৌদি আরবের প্রবাস জীবনে সফল হতে না পারলেও সেখান থেকে নানা প্রতারণার কৌশল আয়ত্ত করেন কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকার বাসিন্দা বারেক সরকার ওরফে বারেক হাজী (৬৩)। সব কাজ বাদ দিয়ে দুবছর পর দেশে ফিরে বনে যান পুরোদস্তুর ‘প্রতারক’।

বারেক সরকারের এই প্রতারণার কাজ অল্পদিনের মধ্যে তাকে বিরাট সাফল্য এনে দেয়। ফলে তার প্রতারণার সাম্রাজ্য ছড়িয়ে দেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।

অন্তত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন নিরবচ্ছিন্নভাবে ৪৩ বছর ধরে চালিয়ে যাওয়া প্রতারণার মাধ্যমে। তবে দীর্ঘ এ প্রতারণার ক্যারিয়ারে একবারও গ্রেফতার হননি তিনি।

রাজধানীর দারুসসালাম এলাকা থেকে শনিবার (২৫ মে) দিনগত রাতে প্রতারক চক্রের মূলহোতা বারেকসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র‌্যাব-৪। এ সময় বারেকের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়।

আটক অন্যরা হলেন- হাবিবুর রহমান (২৪), জাকির হোসেন (৫৮), আক্তারুজ্জামান (২৮) ও শাহরিয়ার তাসিম (১৯)।

গত ২ মার্চ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এ চক্রের ২২ সদস্যকে আটক করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মূলহোতাসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রবিবার (২৬ মে) দুপুরে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির।

তিনি বলেন, কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দিতে ১৯৫৬ সালে জন্ম নেয় বারেক। প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি। ১৮ বছর বয়সে ভাগ্য পরিবর্তনে সৌদি আরব পাড়ি জমালেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারেননি। বরং প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল আয়ত্ত করে মাত্র দুই বছর পর দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর সুনির্দিষ্ট কোনো পেশায় জড়িত না হয়ে শুরু করেন প্রতারণা। কয়েক বছরের ব্যবধানে প্রতারণাই হয়ে উঠে তার পেশা।

চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির আরও বলেন, ৪৩ বছরে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রতারণার মাধ্যম অন্তত শত কোটি টাকা উপার্জন করেছেন। এছাড়া ঢাকা শহরে নিজের নামে ফ্ল্যাট, গাড়ি, গ্রামের বাড়ি কুমিল্লাতে জমি-জমাসহ অঢেল সম্পত্তি মালিক হয়েছেন প্রতারক সম্রাট বারেক।

বারেকের প্রতারণা কোম্পানির প্রকৃত নাম ছিল রয়্যাল চিটার ডেভেলপমেন্ট। আর প্রচারিত নকল নাম ছিল আরসিডি। আরসিডির ছোট ছোট গ্রুপ রয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। যারা সুসজ্জিত অফিস ভাড়া করে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়।

র‌্যাব-৪ এর সিও বলেন, চক্রটি অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অবসরের আগে থেকেই টার্গেট করে। এরপর তাদের কোম্পানিতে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে অফিসে নিয়ে আসে এবং প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ডার হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। অফিস কর্মকর্তাদের চালচলনে অভিভূত হয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিরা অবসরকালীন প্রাপ্ত পেনশনের টাকা বিনিয়োগ করতেন। যার কয়েকদিন পরেই অফিসসহ উধাও হয়ে যেতেন অফিসের কর্মকর্তারাও।

দেশের বিভিন্ন এলাকার তাঁত ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীদের কয়েক কোটি টাকার অর্ডারের ফাঁদে ফেলে ৪০-৫০ হাজার টাকার স্যাম্পল নিতেন। কয়েক কোটি টাকার মালামাল তৈরিতে যে পরিমাণ কাঁচামাল প্রয়োজন (সুতা, রং ইত্যাদি) তা সরবরাহের কথা বলে অগ্রিম হিসেবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি। এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকায় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের জমি বা নির্মাণাধীন ভবনের উপর ইন্টারনেট টাওয়ার স্থাপনের প্রলোভন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতেন। কখনো বিভিন্ন এলাকায় আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের বাসায় এবং তার এলাকার মাদ্রাসা, মসজিদে এনজিওর পক্ষ থেকে বিনা খরচে সৌর প্যানেল বসানোর কথা বলে মোটা টাকা হাতিয়ে নিত। এর বাইরে ইট-পাথর, রড-সিমেন্ট, গার্মেন্টস, চাল, থাই অ্যালুমিনিয়াম, সোলার প্যানেল ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশার লোকদের টার্গেট বানিয়ে তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থের অর্ডারের ফাঁদে ফেলে এবং অর্ডারের ভুয়া চুক্তিপত্র সম্পন্ন করে অগ্রিম বাবদ টাকা আদায় করে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি।

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড