নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর ডেমরার ডগাইর এলাকার নূরে মদিনা মাদ্রাসার ছাত্র মনির হোসেনকে (৮) হত্যার সঙ্গে ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ দুই শিক্ষার্থী জড়িত বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ঘটনায় ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে অভিযুক্ত দুই শিক্ষার্থী এখনও পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারে পুলিশের একাধিক টিম অভিযানে রয়েছে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ওয়ারী বিভাগের একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মনিরের বাবা সাইদুল হক বলেন, ‘রবিববার সকালে তিনি ছেলেকে মাদ্রাসায় রেখে আসেন। বিকেলে আনতে গেলে মাদ্রাসা থেকে বলা হয়, ছেলে বাসায় চলে গেছে। এরপর সন্ধ্যায় তার কাছে ফোন করে ছেলেকে অপহরণের কথা জানিয়ে তিন লাখ টাকা দাবি করা হয়। টাকা মসজিদের খাটিয়ার নিচে রেখে যেতে বলে। অনেক কষ্টে এক লাখ টাকা খাটিয়ার নিচে রাখি। কিন্তু রবিবার সেই টাকা কেউ নেয়নি।’
তিনি মাদ্রাসার অধ্যক্ষের কাছে কয়েকবার মনিরের সন্ধান চেয়েছিলেন। তবে প্রতিবারই অধ্যক্ষ তাকে পুলিশের কাছে যেতে নিষেধ করে এলাকায় মাইকিং করতে বলেছেন। তখনও মাদ্রাসার অধ্যক্ষকে ছেলের হত্যাকারী হিসেবে সন্দেহ হয়নি। পরের দিন সোমবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ওই মসজিদের নির্মাণাধীন তৃতীয় তলার সিঁড়িতে বস্তার ভেতর পাওয়া যায় মনিরের মরদেহ।
ডেমরা থানা পুলিশ জানিয়েছে, ‘মুক্তিপণ চাওয়ার পর মনিরের বাবা প্রায় এক লাখ টাকা জোগাড় করে তা মসজিদের খাটিয়ার নিচে রেখে আসেন। তবে সেখান থেকে কেউ টাকা নেয়নি। কারণ সেখানে পুলিশের নজরদারি ছিল।’
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, ‘শিশুটিকে হত্যায় জড়িত নূরে মদিনা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুল জলিল হাদী ওরফে হাদিউজ্জামান। তাকে সহযোগিতা করে তার দুই ছাত্র মোহাম্মদ তোহা ও আকরাম হোসেন।
পুলিশের ওয়ারী জোনের একজন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘হাদী মসজিদটির ইমামের দায়িত্ব পালন করেন। অপহরণের পর শিশুটিকে মসজিদে তার কক্ষেই আটকে রাখা হয়। কান্নাকাটি করায় মুক্তিপণ না নিয়েই তাকে সেখানে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরপরই অধ্যক্ষ আবদুল জলিল হাদীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। তার সহযোগী হিসেবে অপর দুই ছাত্রের কথাও জানিয়েছেন। তিনজনের মধ্যে একই মাদ্রাসার ছাত্র ১৪ বছর বয়সী তোহা অধ্যক্ষের নির্দেশে ডগাইরের নতুনপাড়া এলাকার একটি ফোনের দোকান থেকে ফোন দিয়ে মনিরের বাবার কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। হাদী ও অপর ছাত্র আকরাম (২২) মিলে মনিরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।’
ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘শিশুটিকে রবিবার বিকেলে মাদ্রাসা ছুটির পর অপহরণ করা হয়। এরপর মুক্তিপণ চাইলে শিশুটি কান্নাকাটি করে। এজন্য তাকে ওই রাতে হত্যা করা হয়। এর আগে অধ্যক্ষ হাদী শিশুটির খোঁজে পরিবারকে এলাকায় মাইকিং করার পরামর্শ দেন। পুলিশকে জানালে হয়তো মনিরকে ফেরত পাওয়া যাবে না সে ভয় দেখিয়ে পুলিশের কাছে যেতে নিষেধ করেন তিনি।’
ডেমরা থানার পরিদর্শক (অপারেশন) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘ঘটনার পর মনিরের পরিবারের সদস্যরা কয়েক দফা মাদ্রাসা ও মসজিদে যায়। বারবার অধ্যক্ষ হাদীর সঙ্গে কথা বলেন। ঘটনার রাতে তারা খবর পাওয়ার পর হাদীকে নজরদারি করেন। এজন্য খাটিয়ার নিচ থেকে টাকা নিতে পারেননি তিনি। মামলার এজাহারভুক্ত অপর দুই আসামিকে গ্রেফতারে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের অভিযান চলছে।’
ওডি/এসএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড