একে আজাদ
সাদমান ইকবাল রাকিন, বয়স সবেমাত্র ১০। টাকার লোভে তাকে হত্যা করা হয়। ক্রাইম পেট্রোল দেখে অপরাধ করতে উৎসাহী হয় খুনিরা। তবে চৌকস র্যাব খুনিকে ধরতে পারবে এমনটা বলা ছিল না ক্রাইম পেট্রোলের কোনো পর্বে। ওরা পার পাবে, এমনটাই ভেবেছিল খুনিরা।
তবে, খুনিদের ফেলে যাওয়া স্টার সিগারেটের প্যাকেট, (০.৫ ইঞ্চি * ২.৫ ইঞ্চি) কাগজের টুকরোর ওপর হাতের লেখা, প্রভৃতির সূত্র ধরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয় র্যাব-১।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ফয়সাল ভিকটিমকে খেলার ফাঁকে পাখির বাসা দেখানোর কথা বলে বাঁশঝাড়ের আড়ালে যেতে বলে। কারও সন্দেহের উদ্বেগ না হয় এজন্য কিছু সময় পর পারভেজ ও ফয়সাল গোপনে বর্ণিত স্থানে যায়। তারা সাদমান ইকবাল রাকিনকে কৌশলে বাঁশঝাড়ের আরও গভীরে নিয়ে যায় এবং পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জঙ্গলের ভেতরে ভিকটিমকে আটকে রাখার চেষ্টা করে। কিন্তু জঙ্গলের ভেতর রাকিনকে আটকাতে ব্যর্থ হলে এবং সে ছাড়া পেলে তাদের কথা সবাইকে জানিয়ে দিবে এই ভয়ে তারা তৎক্ষণাৎ তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
ফয়সাল প্রথমে রাকিনকে মাটিতে ফেলে গলা টিপে ধরে এবং পরবর্তীতে পারভেজ তার শরীরের ওপর বসে দুইজন একত্রে রাকিনের গলা টিপে ধরে নৃশংসভাবে হত্যা করে।
নিহত রাকিন
ঘটনা গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার প্রহলাদপুরে। চাঞ্চল্যকর শিশু সাদমান ইকবাল রাকিন (১০) অপহরণ ও হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ মূল আসামি পারভেজ শিকদারকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
সোমবার ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে র্যাব-১ এর মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গ্রেফতারকৃত পারভেজ শিকদার (১৮) শ্রীপুর উপজেলার ফাউগান গ্রামের আলীম শিকদারের ছেলে এবং তার সহযোগী ফয়সাল আহমেদ (১৯) একই এলাকার আব্দুল লতিফ মোল্লার ছেলে।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, ফাউগান গ্রামের সৈয়দ শামীম ইকবালের ছেলে শিশু সাদমান ইকবাল রাকিন গত ৬ ডিসেম্বর অপহৃত হয়। পরে অপহরণকারীরা ভিকটিমের বাবার কাছে তার (ভিকটিমের বাবার) হারানো একটি মোবাইলফোন নম্বর থেকে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। এ ব্যাপারে ভিকটিমের বাবা শ্রীপুর থানায় মামলা করেন।
এ দিকে, অপহরণের পাঁচ দিন পর ১১ ডিসেম্বর বাড়ি থেকে কিছু দূরে একটি বাঁশঝাড় থেকে রাকিনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
র্যাব জানায়, ‘গত ১৬ ডিসেম্বর র্যাব-১ অভিযান চালিয়ে রাকিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত পারভেজ শিকদার ও তার সহযোগী ফয়সাল আহমেদকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে।
র্যাব আরও জানায়, পারভেজ শিকদার এসএসসি পাশ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের শিমুলতলী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এগ্রিকালচার ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়। গত দুই বছর যাবত রাকিনকে সে প্রাইভেট পড়াত। বড় অঙ্কের টাকা পাওয়ার আশায় ছয় মাস আগে সে রাকিনকে অপহরণ ও মুক্তিপণ চাওয়ার উদ্দেশ্যে রাকিনের বাবার মোবাইলফোন চুরি করে বন্ধ রেখেছিল। এক পর্যায়ে সে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফয়সাল আহমেদের সাথে বিষয়টি নিয়ে পরিকল্পনা করে। অপহরণের দিন তারা ভিকটিমকে কৌশলে বাঁশঝাড়ে নিয়ে যায় এবং আটকে রাখার চেষ্টা করে। আটকাতে ব্যর্থ হলে এবং ভিকটিম ছাড়া পেলে তাদের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে এই ভয়ে তারা তাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেয়। এক পর্যায়ে তারা দুইজনে রাকিনের গলা টিপে হত্যা করে এবং ফয়সাল ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
গ্রেফতারকৃত পারভেজ শিকদার ২০১৭ সালে ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয় হতে এসএসসি পাশ করে এবং শিমুলতলী কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে এগ্রিকালচার ডিপ্লোমায় ভর্তি হয়। তার পিতা আলীম শিকদার মানসিক ভারসাম্যহীন এবং মা গৃহিনী। সে দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। ইতঃপূর্বে সে বিভিন্ন সময়ে ছোটখাটো অপরাধমূলক কাজ করেছে বলে স্বীকার করে। বিগত ২ বছর যাবত ভিকটিম রাকিনকে সে প্রাইভেট পড়াত। বড় অঙ্কের টাকা প্রাপ্তির আশায় ৬ মাস পূর্বে সে ভিকটিম রাকিনকে অপহরণ ও মুক্তিপন চাওয়ার উদ্দেশ্যে রাকিনের বাসা থেকে রাকিনের বাবার মোবাইলটি চুরি করে। বিভিন্ন অপরাধ বিষয়ক সিনেমা, নাটক বিশেষত ক্রাইম পেট্রোলে দেখানো বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে উৎসাহিত হয়ে সে এমন নৃশংস পরিকল্পনা করে বলে জানায়। সে আরও পরিকল্পনা করে যে, ভিকটিমের বাবার ব্যবহৃত মোবাইলটি হতে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করবে এবং এতে খুব সহজেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দেওয়া যাবে। এমনকি মোবাইলের কল ডিটেইলস থেকে ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাই গত ৬ মাস সে মোবাইল বন্ধ রেখেছিল এবং অন্য কোথাও কোনো কল করেনি।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পারভেজ শিকদার তার সহযোগী গ্রেফতারকৃত ফয়সাল আহমেদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে। গ্রেফতারকৃত ফয়সাল ফাউগান উচ্চ বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির ছাত্র। সে পরিবারের ৪ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয়। একই এলাকায় বসবাস করার ফলে পারভেজের সঙ্গে বিগত ৩/৪ বছর যাবত তার পরিচয় এবং পরস্পর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বয়স কম হলেও সে বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করত এবং ছোট খাট অপরাধে জড়িত ছিল বলে জানায়।
মুক্তিপন চাওয়ার জন্য মোবাইলে কল করতে গিয়ে ফয়সাল দেখতে পায় মোবাইলে কোনো টাকা নেই। তখন তারা একত্রে ফাউগান বাজার থেকে ২০ টাকা ফ্লেক্সিলোড করে। ফ্লেক্সিলোডের রেজিস্টারে বর্ণিত (চুরিকৃত রাকিনের বাবার মোবাইল) নম্বর লিখলে ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বিধায় ছোট একটি (০.৫ ইঞ্চি দ্ধ ২.৫ ইঞ্চি) কাগজে মোবাইল নম্বর ও টাকা লিখে ফ্লেক্সিলোড করার জন্য দোকানে দিয়ে দ্রুত চলে আসে।
ফয়সাল ভিকটিমের বাবাকে ফোন করে দশ লাখ টাকা মুক্তিপন দাবি করে। র্যাব-১ এর তদন্ত দল প্রাথমিকভাবে কোন সূত্র না পেলেও বর্ণিত রনির ( ফ্লেক্সিলোডের) দোকানের ডাস্টবিন/ওয়েস্ট পেপার বক্সে উক্ত ছোট কাগজের টুকরো পাওয়ার পর তদন্ত কার্যক্রম নাটকীয় মোড় নেয়। পরবর্তী সময়ে লাশের পাশে প্রাপ্ত স্টার সিগারেটের প্যাকেট সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড