• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মাধ্যমিক পাস করে পিজির ডাক্তার!

  একে আজাদ

২৯ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:১০
ভুয়া চিকিৎসক
ছবি : সংগৃহীত

তিনি বড় ডাক্তার বলে কথা! আসবেন চেম্বার করবেন, তাই এলাকায় করা হয় মাইকিং। চারিদিকে নাম ছড়িয়ে পড়ে। শুরু হয় রোগী দেখা। একসময় রোগীদের সন্দেহ হয়। একের পর এক অভিযোগও জমতে থাকে। কিন্তু সহজে কী ধরা যায়। ডাক্তার বলে কথা। একজনকে চাইলেই কী আর ভুয়া ডাক্তার বলা যায়! তবে মাধ্যমিক পাস করিয়াও প্রমাণ করিলেন তিনি পিজির ডাক্তার।

এমনই একজনের সন্ধান পেয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ঘটনার বিবরণে জানা গেল…

পড়েছেন মাত্র মাধ্যমিক। এরপর কমপাউন্ডার। কিছুদিন পর বনে যান আপাদমস্তক চিকিৎসক । নিজের নামের সামনে যোগ করেন এমবিবিএস এবং এফসিপিএস। পরিচয় দেন ‘আমি পিজির ডাক্তার’।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোযুক্ত প্যাডে প্রেসক্রিপশনও লিখতেন। সবাই তাকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বলেই মনে করতেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে কয়েকটি জেলায় প্রতি সপ্তাহে রোগীও দেখতেন। রোগীকে দেখা শেষে তার হাতে ধরিয়ে দিতেন নিজের ভিজিটিং কার্ড।

প্রায় চার বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন কথিত চিকিৎসক আব্দুল হান্নান মিয়া ওরফে আবুল বাশার মিয়া (৪৮)।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় শুরু করেন ডাক্তার-রোগী কার্যক্রম। কিন্তু বিধি বাম, কিছু অভিযোগ জমা হয় পুলিশের কাছে। নেমে পড়েন পুলিশ। এবার তিনি ধরা খেলেন। হাতেনাতে পুলিশ তাকে আটক করে। আটকের পর বেরিয়ে আসে তার ভুয়া চিকিৎসক হয়ে ওঠার পেছনের কথা।

পুলিশ জানায়, ‘এই ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক লোকজনের চোখে ধুলা দিয়ে টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জায়গায় সাপ্তাহিকভাবে রোগীও দেখেছেন। কিন্তু তিনি যে একজন ভুয়া চিকিৎসক সেটি এত দিন কেউ আঁচও করতে পারেননি। তাকে কখনোই বুঝতে পারেননি তিনি একজন ভুয়া চিকিৎসক। গত ৯ নভেম্বর তাকে হাতেনাতে ধরা পড়তে হয়।’

পুলিশ আরও জানায়, ‘তাদের কাছে অভিযাগে আসে এক ব্যক্তি নিজেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কলসালটেন্ট দাবি করছেন। তিনি নিজেকে কলসালটেন্ট দাবি করে যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি ফার্মেসিতে বসে রোগীও দেখে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। তবে সেই ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার স্বপক্ষে কাউকে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি। ভুক্তভোগী কয়েকজন রোগীর অভিভাবকের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টির তদন্তে নামে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ। তদন্তের ভার দেয়া হয় এসআই সাইফুল ইসলামকে। তদন্তের আগে সাইফুল ইসলাম বিষয়টি নানাভাবে যাচাই-বাছাই করেন এবং শেষে মাঠে নামেন।’

তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, ‘গত ৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় তিনি যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ার গোবিন্দপুর বাজার এলাকার আল মক্কা মার্কেটের আল আমিন মেডিকেল হলে যান। তখনও ভুয়া চিকিৎসক বিভিন্ন রোগী দেখছিলেন। পরে রোগী দেখা শেষ হলে তার সাথে পুলিশের এসআই সাইফুল কথা বলেন এবং আবুল বাশার যে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার স্বপক্ষে প্রমাণ চান। এ কথা শোনার পর ভুয়া চিকিৎসক আবুল বাশার নানাভাবে তর্কবিতর্ক করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি তার ডিগ্রির সাটিফিকেট দেখাতে রাজি হন। পুলিশ সদস্যরা প্রমাণস্বরূপ তার ব্যবহৃত ডিগ্রির কাগজপত্র চাইলে তিনি বলে উঠলেন, তার স্ত্রী অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন এবং তিনি সেই উত্তরার বাসায় থাকেন। তার স্ত্রীর বাসায় সেই কাগজপত্র রাখা আছে। শুরু হয় তাকে নিয়ে তার সার্টিফিকেট উদ্ধারের কাজ। আবুল বাশারও নিজেকে আসল চিকিৎসক প্রমাণের লড়াইয়ে নেমে পড়েন।’

পুলিশ জানায়, ‘তার কথা অনুযায়ী তাকে নিয়ে একটি সিএনজি ভাড়া করে যাত্রা শুরু হলো উত্তরা দিকে। পথে তিনি আবারও জানালেন তার নাকি মালিবাগে আরেকটি বাসা আছে কিন্তু সেখানে তিনি ঢুকলেন না। উত্তরায় পৌঁছার পর তার বাসায় না নিয়ে সিএনজি ঘোরাতে বলেন। তার ডিগ্রির সার্টিফিকেট নাকি ধানমন্ডির বাসায় রাখা আছে। এবার গন্তব্য শুরু হলো ধানমন্ডির বাসার দিকে। সিএনজি ঘুরিয়ে নেয়া হলো। যথারীতি সিএনজি ছুটে চললো ধানমন্ডির বাসার ঠিকানা স্টার কাবাব এলাকার দিকে। সেখানে পৌঁছাতেই তিনি এবার জানালেন তার সার্টিফিকেট নাকি এখানেও রাখা হয়নি। মালিবাগের বাসায় রাখা হয়েছে। এবার পুলিশের সন্দেহ আরও বেড়ে গেল। পরে সিএনজিতে নিজের মুখে আবুল বাশার স্বীকার করলেন, তিনি একজন ভুয়া চিকিৎসক।’

এরপর পুলিশের এসআই সাইফুলকে উদ্দেশ্য করে ভুয়া চিকিৎসক বলেন, ‘স্যার আমাকে ছেড়ে দেন। যত টাকা চান আমি আপনাকে খুশি করব।’ পরে তাকে ধরে সোজা থানায় নিয়ে যান সেই পুলিশের এসআই।

পুলিশ জানায়, ভুয়া চিকিৎসক আবুল বাশারের ভাষ্য, তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন মিরপুরের রুপনগর থানার রুপনগর আবাসিক এলাকার ১৮ নম্বর রোডের ৪১ নম্বর বাসায়। সে বাসাতে তার স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকেন। আর তিনি এভাবেই বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণা করে যে আয় করতেন তাতে সংসার চালাতেন। তবে তিনি রুপনগরের বাসাতে স্থায়ীভাবে থাকেন না। তার গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারি উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কেদার গ্রামে। তার বাবার নাম মৃত আব্দুল কাদের মিয়া।’

কথিত এই ভুয়া চিকিৎসক প্রায় চার বছর ধরে এই প্রতারণার কাজটি করে আসছেন। রোগীদের কাছ থেকে পাঁচশত টাকা করে ভিজিট নিতেন। এ কাজে তাকে আরও দুই ব্যক্তি সহায়তা করেন। তার মধ্যে একজন তাকে সহায়তা করেন আরেকজন যখন যেই এলাকায় তিনি চিকিৎসক সেজে যান সেখানে তার আগে মাইকিং করে বিষয়টি সকলকে জানানোর কাজ করেন।

এসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তের ভার পাওয়ার আগে এই নামে কোনো চিকিৎসক আছেন কি না তা যাচাই করার জন্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েছি। এজন্য আমাকে হাসপাতালটিতে স্বাধীনতা থেকে আজ অবধি যারা সেখানে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন তাদের সবার নাম বের করতে হয়েছে। যেখানে যাচাই করে দেখা গেছে এই নামে কোনো চিকিৎসক নেই।

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর আমরা তার ডিসপেনসারিতে অভিযান চালিয়েছি। বিষয়টি খুব জটিল ছিল। তিনি যে একজন ভুয়া চিকিৎসক এটা প্রমাণ করা বেশ কঠিন ছিল। কিন্তু লেগে থাকার কারণে সেটি সম্ভব হয়েছে এবং তিনিও সেটি অকপটে স্বীকার করেছেন।’

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড