• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

নারীদের ব্লাকমেইল করাই তার পেশা

  অধিকার ডেস্ক

১৭ নভেম্বর ২০২০, ২১:১০
অধিকার
গ্রেপ্তার হওয়া মোহাম্মদ ইয়াসিন ওরফে রাতুল (ছবি : সংগৃহীত)

নাম মোহাম্মদ ইয়াসিন ওরফে রাতুল। গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একতারপুরে। নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। মোহাম্মদপুরের রিংরোডের এক দোকানে বিক্রয়কর্মীর চাকরি নেন। হঠাৎ চাকরি ছেড়ে দিয়ে অপরাধের পথে পা বাড়ান। নারীদের সঙ্গে প্রতারণাই হয়ে ওঠে তার আয়ের একমাত্র উৎস।

সোমবার (১৬ নভেম্বর) এক নারীর অভিযোগের ভিত্তিতে ইয়াসিনকে বাংলামোটর থেকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টারের সদস্যরা। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর কাছে থাকা প্রতারণা এবং ব্ল্যাকমেলে ব্যবহৃত দুটি মুঠোফোন সেট, ১০টি সিম উদ্ধার করা হয়।

ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে ইয়াসিনের মাস ছয়েক আগে বন্ধুত্ব হয়। একদিন ইয়াসিন তাকে চাঁদপুরে যাওয়ার প্রস্তাব দেন। ওই নারী তার দুই বন্ধুসহ লঞ্চে চাঁদপুরে যান। লঞ্চেই কোনো এক সময় কৌশলে ইয়াসিন তার নগ্ন ভিডিও ধারণ করেন। লঞ্চ থেকে ঢাকায় নামার পর ইয়াসিন তাকে বলেন, তার মুঠোফোনে টাকা নেই। একটা ফোন করা প্রয়োজন। তারপর ভুক্তভোগীর মুঠোফোন থেকে কথা বলার নাম করে সদরঘাট থেকে তিনি পালিয়ে য়ান। ওই নারী অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেন। পরে ইয়াসিন তার মোবাইলে থাকা বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়ে নেন। পরদিনই ফোন করে বলেন, ২৫ হাজার টাকা না দিলে তার নগ্ন ভিডিও ছড়িয়ে দেবেন। তার ফেসবুকও ইয়াসিন ব্যবহার করতে থাকেন। টাকার জন্য একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নারীর বাবা–মাকেও হুমকি দেন।

জানা গেছে, ইয়াসিন মুঠোফোনে চারটি ফেক ফেসবুক আইডি এবং নয়টি জিমেইল অ্যাকাউন্ট চালাতেন। এগুলো ব্যবহার করে তিনি নারীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। কখনো কখনো অ্যাপের মাধ্যমে নারীকণ্ঠে কথা বলেও প্রতারণা করতেন তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ইয়াসিন অপরাধের দায় স্বীকার করেন।

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, ভুক্তভোগী নারী কয়েক দিন আগে সাইবার পুলিশ সেন্টারে অভিযোগ জানান। এরপরই পুলিশ নজরদারি শুরু করে। তারা অভিযোগের সত্যতা পায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শাহজাহানপুর থানায় ইয়াসিনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন বাদী। মঙ্গলবার ইয়াসিন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দোষী সাব্যস্ত হলে তার ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ২ লাখ টাকা জরিমানা হতে পারে।

তিনি আরও জানান, সিআইডি আরও একজন ভুক্তভোগীর তথ্য পায়। তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মাস ছয়েক আগে তানজুমা আফরোজ নামের এক ইউটিউবারের আইডি থেকে তিনি বন্ধুত্বের অনুরোধ পান। সরল বিশ্বাসে জনপ্রিয় ইউটিউবারের অনুরোধে সাড়া দেন ওই নারী। তারপর তাঁরা ফেসবুকে চ্যাট করেন এবং কথাও বলেন। কথা বলার সময় ইয়াসিন বিশেষ সফটওয়্যারের মাধ্যমে নারীকণ্ঠে কথা বলতেন।

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ওই ছাত্রী জানতেও পারেননি তানজুমা আফরোজ আসলে ইয়াসিনের ফেক আইডি। তানজুমা আবার তাকে ইয়াসিনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। হোয়াটসঅ্যাপে তাঁরা কথা বলতেন। একপর্যায়ে ইয়াসিন প্রেমের অভিনয় করে ওই ছাত্রীর নগ্ন ভিডিও সংগ্রহ করেন। দেখা করার কথা বলে তিনি ভুক্তভোগী নারীর মুঠোফোন নিয়ে পালিয়ে যান। মুঠোফোন ফরম্যাট করে বিক্রি করে দেন। আর নিজের ফোন থেকে ওই নারীর ফেসবুক, জিমেইল অ্যাকাউন্ট দখলে নিয়ে ব্যবহার করতে থাকেন।

সিআইডি ইয়াসিনকে গ্রেপ্তারের পর তার মুঠোফোন থেকে অন্তত ১০ জন ভুক্তভোগীর তথ্য পায়। তাদের প্রত্যেকেরই নগ্ন ভিডিও ছিল ওই সব মুঠোফোনে। এর বাইরেও প্রতারণায় ব্যবহৃত নানা ধরনের অ্যাপ ও টেকনোলজি পাওয়া যায়।

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড