নিজস্ব প্রতিবেদক
গুলশানের ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট ভাড়া নিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিলেন নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামিমা নূর পাপিয়া। হোটেল কর্তৃপক্ষকে অন্ধকারে রেখে দীর্ঘদন এসব কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখা সম্ভব নয় বলে বলছেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে ওয়েস্টিনের মালিক নূর আলীকেও হোটেলের একটি স্যুইটে পাপিয়াসহ বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে খোশমেজাজে গল্প করতে দেখা গেছে। ওই ভিডিওতে পাপিয়ার সঙ্গে রাজনীতি, নির্বাচনসহ নূর আলীকে নানা বিষয়ে খোলামেলা কথা বলতে দেখা গেছে।
ভিডিওতে ঢাকা ওয়েস্টিন হোটেলটির মালিকের সঙ্গে পাপিয়ার পাশের সোফায় হাসিমুখে বসে থাকতে দেখা যায় অল্পবয়সী বেশ কয়েকজন সুন্দরী মেয়েকে।
হোটেলে পাপিয়ার প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট ব্যবহার ও তার সঙ্গে আড্ডার ভিডিও ভাইরাল হলেও এ বিষয়ে হোটেলটির মালিক নূর আলীর কোনো প্রতিক্রিয়া এখনো মিডিয়াকে দেননি। পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে দেশের অন্যতম পাঁচ তারকা হোটেল ওয়েস্টিন।
পাপিয়া র্যাবের হাতে গ্রেপ্তারের পর র্যাব-পুলিশের তদন্তের ঠিকানা হয়ে উঠেছে ওয়েস্টিন হোটেল। দেশি-বিদেশি সুন্দরী ললনাদের এনে রুম ও স্যুইট ভাড়া করে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জমজমাট বাণিজ্যতেও বাধা নেই হোটেলটিতে। নিয়ম-নীতিরও বালাই ছিল না সেখানে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত এই নেত্রীকে আটকের পরই র্যাব-১ এর অধিনায়ক শাফী উল্লাহ বুলবুল বলেছিলেন, পাপিয়া গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের ‘প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুইট’ ভাড়া নিয়ে ‘অসামাজিক কার্যকলাপ’ চালিয়ে আসছিলেন।
পাপিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পরই বেরিয়ে আসতে শুরু করে তার অপরাধ জগতের বিভিন্ন তথ্য। অল্প সময়ের মধ্যে তার আসল চরিত্র জানাজানি হয়। পাপিয়ার মোবাইলে থাকা ভিডিও দেখে অবাক বনে যান র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তারা। ওই সব ভিডিওতে ধনী ব্যবসায়ী, প্রশাসনের কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী নেতাদের ‘অনৈতিক দৃশ্য’ আছে। ভিডিওগুলোর মধ্যে কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
পুলিশ সূত্র জানায়, খারাপ ভিডিও দিয়ে কাস্টমারদের ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিতেন পাপিয়া। জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়া তার সহায়তাকারী প্রভাবশালীদের নাম বলেছেন। এদের সবাই ক্ষমতাসীন দলের নেতা-নেত্রী। তাদের মদদেই পাপিয়া ভয়ংকর বেপরোয়া জীবনযাপন শুরু করেন। এমনকি পাপিয়া কাউকেই পরোয়া করতেন না। যাদের নাম এসেছে তারা খুবই প্রভাবশালী, তাদের ব্যাপারে সরকারের হাইকমান্ডকে অবহিত করা হয়েছে।
রাজনীতির আড়ালে পাপিয়া অর্থ পাচার, জাল টাকা সরবরাহ, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে টাকা আদায়, তদবির বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা, প্রতারণা ও নারীদের নিয়ে যৌন কারবার চালাতেন। ঢাকার পাঁচতারকা হোটেলগুলোতে প্রায়ই মদের আসর বসাতেন পাপিয়া। ওই আসরে রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী, আমলা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু কর্মকর্তাও উপস্থিত থাকতেন। তারা সুন্দরী নারীদের নিয়ে ফুর্তি করে গভীর রাতে বাসায় যেতেন।
তদন্তের বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, বিমানবন্দর থানার এক মামলার রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। তার দেওয়া তথ্যে আমরা অবাক হচ্ছি। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে ওয়েস্টিন হোটেলের কে কে জড়িত ছিল, তার অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসায় কারা জড়িত ছিল, তার সঙ্গে পাওয়া জাল টাকার উৎস কী, কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী এবং দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বিদেশি মুদ্রা ও জাল টাকার মামলা হয়েছে। অস্ত্র ও মাদকের পৃথক মামলা হয়েছে শেরে বাংলা নগর থানায়।
এ দিকে, বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়া ওরফে পিউয়ের অবৈধ পথে উপার্জন করা সম্পদের বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার বিকালে দুদক সচিব মোহাম্মদ দিলওয়ার বখত এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন : দুই সাংসদের প্রশ্রয়ে অপরাধজগতে পাপিয়া
দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যেমন ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক। পাপিয়ার ঘটনাটিও অনুসন্ধান করা হবে। এ ক্ষেত্রে যদি অন্য কারও নাম চলে আসে তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেবে দুদক। তিনি আরও বলেন, পাপিয়ার সম্পদ, তার উৎস, ক্ষমতা, বিদেশে অর্থ পাচার সবকিছুই অনুসন্ধানের আওতায় আছে।
ওডি/এএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড