• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দুই মাসের বেশি জেল হবে না, থানায় বসেই হুমকি!

  নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:৫১
পাপিয়া
পাপিয়া দম্পতি (ছবি : সংগৃহীত)

তিন মামলায় ১৫ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নুর পাপিয়া ওরফে পিউ এবং তার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন। একে একে বেরিয়ে আসছে তাদের অপকর্মের নানা কাহিনী, এতে সারা দেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এরপরও তাদের দম্ভ কমছে না, জেলে বসেই ছাড়ছেন হুঙ্কার।

‘আপনার টাকা দেব না, প্রতারণার মামলা দেবেন তো, ওই মামলায় দুই মাসের বেশি জেল হবে না। অস্ত্র মামলা খেয়েছি, তাতেই ভয় পাচ্ছি না। আর প্রতারণার মামলায় কী হবে?’—থানায় বসেই এভাবে হুঙ্কার ছাড়েন পাপিয়া-সুমন দম্পতি। পাপিয়া তার নরসিংদীর বাসায় এক ব্যবসায়ীকে ধরে নিয়ে গিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। ওই ব্যবসায়ীর নাম তপন তালুকদার টুকু। তিনি নিরাপত্তাকর্মী সরবরাহের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তপনের কাছ থেকে প্রতারণতার মাধ্যমে প্রায় ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন পাপিয়া। এ বিষয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হবে জানালে ওই ব্যবসায়ীকে হুমকি দেন পাপিয়ার স্বামী মতি সুমন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কায়কোবাদ কাজী বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজ লোকজনকে আটকে রেখে শুধু মুক্তিপণ আদায়ই নয়, মাদক ব্যবসাও করতেন। তদবির বাণিজ্যের মাধ্যমে অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা এসব বিষয় স্বীকারও করেছেন।

তদন্তের বিষয়ে বিমানবন্দর থানার ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, বিমানবন্দর থানার এক মামলার রিমান্ডের দ্বিতীয় দিনে তদন্ত কর্মকর্তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন পাপিয়া। তার দেওয়া তথ্যে আমরা অবাক হচ্ছি। তদন্তের স্বার্থে এসব বিষয়ে কিছুই বলা যাবে না। পাপিয়ার অপকর্মের সঙ্গে ওয়েস্টিন হোটেলের কে কে জড়িত ছিল, তার অস্ত্র ও ইয়াবা ব্যবসায় কারা জড়িত ছিল, তার সঙ্গে পাওয়া জাল টাকার উৎস কী, কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে তিনি এ পর্যায়ে এসেছেন সে বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামী এবং দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে বিদেশি মুদ্রা ও জাল টাকার মামলা হয়েছে। অস্ত্র ও মাদকের পৃথক মামলা হয়েছে শেরে বাংলা নগর থানায়।

ওসি বিএম ফরমান আলী বলেন, পাপিয়া ও তার স্বামীর প্রতারণার শিকার কয়েকজন ব্যক্তি এরই মধ্যে থানায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে গেছেন। আমরা সেসব বিষয়ে তদন্ত করছি।

তাদের প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী তপন বলেন, প্রায় পাঁচ মাস আগে আমি ঢাকা থেকে নরসিংদীতে এক বন্ধুর বাসায় যাই। সেখানে পাপিয়ার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর আমাকে পাপিয়া তার বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর চারজন সুন্দরী নারীকে আমার সামনে নিয়ে আসে পাপিয়া। পরে জোরপূর্বক অশ্লীল ভিডিও দৃশ্য ধারণ করে।

আমাকে হুমকি দিয়ে পাপিয়া বলেন, আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিতে হবে। তা না হলে এই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আপনার নামে মানব পাচারের মামলা দেওয়া হবে।

এরপর আমাকে মারধর শুরু করে সে। সম্মান রক্ষার ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ২০ হাজার টাকা দিই আমি। তবুও আমাকে তারা আটকে রাখে। এক পর্যায়ে ব্যাংকের মাধ্যমে ২ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেয়।

আরও পড়ুন : ভিআইপিদের পাপিয়া প্রথমে যেখানে নিয়ে যেতেন

তিনি আরও বলেন, পাপিয়ার গ্রেপ্তার হয়েছে জানতে পেরে আমি রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় যাই। থানার ওসিকে এই ঘটনাটি খুলে বলি। আমার কথা শোনার পর ওসি সাহেব পাপিয়াকে থানা হাজত থেকে তার রুমে ডেকে আনেন। পাপিয়ার সামনেই আমার ওপর তার নির্যাতনের ঘটনা বলি। তখন সে আমার কাছে মাপ চায়। ওসির সামনেই পাপিয়া বলেন, আমার আসলে ভুল হয়ে গেছে। অন্য আরেকজনের নির্দেশে আমি ওটা করেছিলাম। আপনি আইনের আশ্রয় নিয়েন না। আপনার টাকা ফেরত দেব। কিন্তু আমি এখনো টাকা ফেরত পাইনি।

ওসির রুমে পাপিয়ার স্বামী মফিজকে ডাকা হলে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, টাকা দেব না। আপনি আমাদের নামে কী মামলা দেবেন? বড় জোর প্রতারণার মামলা দেবেন। এ মামলায় দুই মাসের বেশি জেল হবে না। অস্ত্র মামলা খেয়েছি। তাতেই ভয় পাচ্ছি না। আর প্রতারণার মামলায় কী হবে?

ব্যবসায়ী তপন বলেন, মামলা করতে চাইলে বিমানবন্দর থানার ওসি বলেন, আপনি যদি মামলা করতে চান, তাহলে নরসিংদীতে গিয়ে মামলা দিতে হবে। কেননা, আপনার সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছে নরসিংদীতে।

ওডি/টিএএফ

অপরাধের সূত্রপাত কিংবা ভোগান্তির কথা জানাতে সরাসরি দৈনিক অধিকারকে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড