নরসিংদী প্রতিনিধি
নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শামিমা নুর পাপিয়ার গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে তার পাপের সাম্রাজ্যের ধ্বংস শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসছে তার অর্থের উৎসের সন্ধানসহ বিভিন্ন অপকর্মের লোমহর্ষক কাহিনী যা নিয়ে নরসিংদীসহ সারা দেশে সমালোচনা ও নিন্দার ঝড় বইছে।
একে একে গা ঢাকা দিতে শুরু করেছে পাপিয়ার আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব, ক্যাডার বাহিনী ও আশ্রয় প্রশ্রয় দাতা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। একসময় পাপিয়ার সাহচর্য যারা আশীর্বাদ মনে করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে সেলফিতে আবদ্ধ হয়েছিলেন, তারা এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে সেসব ছবি সরিয়ে নিচ্ছেন। যে সকল নেতাকর্মীরা সুন্দরী নারী নিয়ে আমোদ ফুর্তি করে পাঁচ তারকা হোটেলে রঙ্গলীলায় মত্ত থাকত তাদের জন্য পাপিয়া নামটি এখন মহা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাপিয়ার গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর বাগদী এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পেট্রো বাংলার অবসরপ্রাপ্ত গাড়িচালক ও নরসিংদীর বাগদী এলাকার গ্যারেজ মালিক সাইফুল বারীর মেয়ে শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ আবেদনময়ী ও সুদর্শনা হওয়ার সুবাদে জেলা আওয়ামী লীগের নজরে চলে আসে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদকের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দলীয় পদ তার দখলে নিয়ে নেয়।
অপরদিকে তার স্বামী স্থানীয় নজরুল একাডেমির অধ্যক্ষ ও গানের শিক্ষক মতিউর রহমানের বড় ছেলে মফিজুর রহমান সুমনের সহযোগিতায় ক্যাডার বাহিনী গঠন করে গাড়ি বিক্রি ও গাড়ি সার্ভিসিংয়ের ব্যবসার অন্তরালে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কাছে সুন্দরী নারী সাপ্লাই দেওয়া শুরু করে। এছাড়াও স্বনামধন্য ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে নামিদামি পাঁচ তারকা হোটেলে সুন্দরী ললনা দিয়ে রঙ্গলীলায় মাতিয়ে ভিডিও চিত্র ধারণ করে সেগুলো ভাইরালের ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি রাজনৈতিক মন্ত্রী-এমপিদের আশীর্বাদ পুষ্ট হওয়ার সুবাদে অবৈধ অস্ত্র, মাদক, চোরাচালান, জাল টাকার ব্যবসা, চাঁদাবাজি, জমিদখল, তদবির বাণিজ্য, সুন্দরী নারীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা, হোটেল ওয়েস্টিনসহ নামিদামি পাঁচ তারকা হোটেলের ব্যয়বহুল স্যুট ভাড়া করে মদ, জুয়া, অশ্লীল নৃত্য ও রঙ্গলীলার আসর বসানোসহ বিভিন্ন অনৈতিক ব্যবসার মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যেই বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে যায়। দেশ-বিদেশে রয়েছে তার নামে-বেনামে একাধিক বাড়ি, গাড়ি ও মদের বারসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক এলাকাবাসী বলেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের আশ্রয় প্রশ্রয়ে সে এতটাই বেপরোয়া জীবন-যাপন করত যে ভয়ে এলাকাবাসী তো দূরের কথা অনেক নেতারাও প্রতিবাদ করার সাহস পেত না।
ষাটোর্ধ্ব করিম মিয়া বলেন, পাপিয়া তার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দ্বারা শুধু দলকেই নয় বরং পুরো নরসিংদীকে কলুষিত করেছে। তাই সরকারের নিকট তিনি তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সোলায়মান ফকির বলেন, পাপিয়াদের মতো নারীরা এক দিনে তৈরি হয় না। তাদের তৈরির পেছনে যাদের হাত রয়েছে তাদের নাম চিহ্নিত করে গণসম্মুখে প্রকাশ করে পাপিয়ার পাশাপাশি তাদেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে একাধিকবার যোগাযোগ করেও নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের কারও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন : ঝড় বইছে পাপিয়া-মফিজের গ্রামে
উল্লেখ্য, শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে জাল টাকা বহন ও অবৈধ টাকা পাচারের অভিযোগে শামীমা নূুর পাপিয়া ওরফে পিউসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
রবিবার সকালে রাজধানীর ইন্দিরা রোডে পাপিয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে ১টি বিদেশি পিস্তল, ২টি ম্যাগজিন, ২০ রাউন্ড গুলি, পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ৫৮ লাখ ৪১ হাজার টাকা, পাঁচটি পাসপোর্ট, তিনটি চেক, বেশ কিছু বিদেশি মুদ্রা ও বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি এটিএম কার্ড উদ্ধার করা হয়।
সোমবার দুপুরে বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো.কায়কোবাদ কাজী আসামিদের আদালতে হাজির করেন। একই সঙ্গে সুষ্ঠু তদন্তের জন্য আসামিদের প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী ইলতুৎমিস সওদাগর অ্যানী, মশিউর রহমান চৌধুরী মানিকসহ আরও অনেকে রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে, রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করে রিমান্ডে দাবি করেন। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুর রহমান শুনানি শেষে আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আদেশ দেন।
এছাড়া শেরেবাংলা নগর থানার পৃথক দুই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা মামলার সুষ্ঠু তদন্তে জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক পাপিয়া ও তার স্বামীকে দুই মামলায় প্রত্যেককে ১০ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ওডি/টিএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড