• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

একজন আইরিশ পুত্রের ইংলিশ জয়

  ক্রীড়া ডেস্ক

১৬ জুলাই ২০১৯, ১৩:৩১
ইউইন মরগান
ইউইন মরগান (ছবি : আইসিসি)

“অন্ধকার হলে ধৈর্য ধরে বসে থাকো; ভোর আসছে…“

– জালালউদ্দিন রুমী, দার্শনিক ও সূফী

উপরের কথার সাথে কি ইংল্যান্ডের সাফল্য মিলে যায় না? ভোর আসছে... আসলেই তাই। চার বছর আগে ২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কাছে হেরে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারেনি ইংল্যান্ড। ওই ধাক্কার পরই বদলে যায় ইংলিশ ক্রিকেট। সে সময় ইউইন মরগানই ছিলেন অধিনায়ক; বিশ্বাস কী জিনিস! যার অধীনে দল ডুবে যায় সেই তাকেই দেওয়া হয় ২০১৯ বিশ্বকাপের গুরু দায়িত্ব। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের আস্থার প্রতিদানও দিলেন মরগান। দলকে প্রথমবারের মতো শিরোপা এনে দিলেন।

আয়ারল্যান্ডের সবুজ জার্সি ছেড়ে ২০০৯ সালে টেস্ট খেলার তীব্র মনোবাসনা নিয়ে মরগান পাড়ি জমান ইংল্যান্ডে। চাপান ইংলিশ জার্সি। ইংল্যান্ডে এসে যে খুব ভালো ছিলেন মরগান তা নয়; শুরুর দিকে শুনতে হয়েছিল বহু কটূক্তি-সমালোচনা। তবে সবকিছুকে পেছনে ফেলে এখন তিনি সফল এক ইংলিশ ক্রিকেটার। শুধু ক্রিকেটারই না সফল এক অধিনায়কও।

২০১৫ (টাইগারদের সঙ্গে হেরে কোয়ার্টার থেকে বিদায়) বিশ্বকাপের পর থেকে ইংল্যান্ড তৈরি করে ওয়ানডের একটা নতুন ব্র্যান্ড। উপযুক্ত পিচ, উপযুক্ত সিম বোলার, স্পিনার, স্ট্রোকমেকার মিলিয়ে ইংল্যান্ড হয়ে উঠে ওয়ানডের হট-ডগ। ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিল সেমি-ফাইনাল থেকে। অধিনায়ক মরগান তখনো বিশ্বাস হারাননি। কুল থেকেছিলেন। এ বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর তাকে নিয়ে উঠেছিল সমালোচনা। ২০১৫ বিশ্বকাপের ঘটনা আবার ঘটতে যাচ্ছিল! তবে মরগান বা ইংল্যান্ড কুল থেকেছে। ভার্চুয়াল নক-আউট বনে যাওয়া ম্যাচে তারা ধরে রেখেছে স্নায়ু। ভারত, নিউজিল্যান্ডের পর সেমিতে অজিদের-বাধা টপকে গেছে তারা। ১৯৯২ সালের পর এই তিন দলের কাউকে বিশ্বকাপে এর আগে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। সেই মরগানের অধিনায়কত্বে দল পেল সাফল্য।

২৭ বছর পর ইংল্যান্ডকে ফাইনালে তোলেও মরগান ছিলেন কুল। অপেক্ষা শিরোপা ছোঁয়ার! একজন দলনেতার গুন দেখুন; রোমাঞ্চকর ফাইনাল শেষে হাসলেন তিনি; সেই সঙ্গে পুরো ইংল্যান্ড। প্রথম! প্রথমবার! এবং প্রথমবার! ক্রিকেটের সেরা মুকুটটা এতদিন নাগালের বাইরেই ছিল থ্রি লায়ান্সদের। সেই খরাও কাটালেন 'আইরিশ পুত্র' মরগান। সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের হয়ে বিশ্বকাপজয়ী প্রথম অধিনায়কও বনে গেলেন। এসব কেবলই ধৈর্য আর বিশ্বাস ও দলগত প্রচেষ্টা।

মরগান না থাকলে হয়তো, ইংলিশ ক্রিকেট কোনোদিনও এভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারত না! এটি সত্যিই আসলে। তবে এখানে কৃতিত্ব পাবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও। গত বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নেতৃত্ব থাকা তো দূরের কথা, মরগানের গায়ে কখনো আর ইংল্যান্ডের জার্সি উঠবে কি না তা নিয়েই ছিল শঙ্কা। কিন্তু সমস্ত শঙ্কা আর বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে উঠে তার ওপরই আস্থা রাখে ইসিবি। তার প্রতিদানও কড়ায়গণ্ডায় দিলেন মরগান।

যেমন ছিল মরগানের বিশ্বকাপের পারফম্যান্স-

৩২ বছর বয়সী মরগান ১১ ইনিংসে করেছনে ৩৭১ রান। যা ছিল একটি সেঞ্চুরি ও একটি ফিফটির সমন্বয়ে। আসরে মরগানের ব্যাটিং গড় ৪১.২২। এই আসরে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ১৪৮ রান (আফগানিস্তানের বিপক্ষে)। এছাড়া এই আসরে ব্যাট হাতে নতুন এক রেকর্ড গড়েছেন এই ইংরেজ কাপ্তান। এখন পর্যন্ত এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড গড়েন মরগান (১৭টি)। এই আসরে সবমিলিয়ে ২২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন; যা এই আসরের সর্বোচ্চ।

যেভাবে ফাইনালে এলো মরগানের ইংল্যান্ড-

টুর্নামেন্টের প্রথম পর্বে ৯ ম্যাচের মধ্যে ৬ ম্যাচ জিতেছে ইংল্যান্ড। তারা হেরেছে ৩ ম্যাচ। ফলে ১২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ৩য় স্থানে থেকে সেমিতে যায় ইংলিশরা। সেমিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ২৭ বছর পর প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড। আর ফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে সুপার ওভারে হারিয়ে বিশ্বকাপ ট্রফি নিজেদের ঘরে তোলে ইংল্যান্ড।

একটা প্রশ্নে শেষ হোক- অধিনায়ক হিসেবে মরগান কেমন?

মরগানের জন্ম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে। ১৯৮৬ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। বাবা জডি মরগান আর মা ওলিভিয়া মরগানের দম্পতির সকল ছেলেপুলেই খেলতেন ক্রিকেট। পারিবারিক ঐতিহ্য ধরে রেখে, মরগানও হলেন সে পথের যাত্রী। ৩ ভাই আর ২ বোনের সবাই খেলেছেন আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলে, মরগানও তাই। এরপর মরগানের ইংলিশ অধ্যায়টা সবারই জানা-

টিম মেট ক্রিস ওকস, আদিল রশিদ থেকে শুরু করে মইন আলি বা অন্যরা মনে করেন মরগান একজন অধিনায়ক হিসেবে 'কুল'। কী রকম? মরগানের চোখেমুখে চাপের ছাপ দেখা যায়না সেভাবে। খুব মজার কথা বলে এক চিলতে একটু হাসি ফুটবে মুখে। প্রশ্নের জবাব কাটা কাটা দেবেন, আবার রসবোধও থাকবে। এমনই মরগান।

ওডি/এএপি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড