ক্রীড়া ডেস্ক
নিজেদের মাটিতে পাঁচবার বিশ্বকাপ আয়োজন করলেও এখনো একবারও শিরোপা জিততে পারেনি ইংল্যান্ড। তবে এবারে বেশ ভালো সুযোগ এসেছে তাদের সামনে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে ইংলিশরা ফাইনালের টিকিট কেটেছে। আসুন দেখে নেই যেভাবে ইউইন মরগানের দল বিশ্বকাপের ফাইনালের টিকিট কাটল-
দ্বাদশ বিশ্বকাপের ফাইনাল হবে রবিবার (১৪ জুলাই) ক্রিকেটের মক্কাখ্যাত লর্ডস স্টেডিয়াম। যেখানে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট-বল হাতে লড়তে নামবে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। লর্ডসে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ৩টায়।
১০টি দেশকে নিয়ে গত ৩০ মে লন্ডনের কেনিংটন ওভালে ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা ওঠে দ্বাদশ বিশ্বকাপের। লিগ পর্বে প্রতিটি দল একে অপরের মুখোমুখি হয়। লিগ পর্বের মোট ৪৫টি ম্যাচ শেষে সেরা চার দল জায়গা করে নেয় সেমি-ফাইনালে। দলগুলো হলো— ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। শেষ চারে উঠতে পারেনি পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান।
সর্বশেষ ১৯৯২ আসরে নিজ মাঠে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে ইংল্যান্ড। দীর্ঘ ২৭ বছর পর দ্বিতীয়বারের মতো আবারও নিজ মাঠে ফাইনাল খেলতে নামছে মরগানের নেতৃত্বাধীন দলটি।
প্রথম ম্যাচ : ইংল্যান্ড বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা (ওভাল)
ফল : ইংল্যান্ড জয়ী : ১০৪ রানে।
৩০ মে ২০১৯, বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে দুর্দান্ত জয়ে মিশন শুরু করে নিউজিল্যান্ড। পুরো গ্যালিরির কানায়-কানায় পূর্ণ দর্শকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতন। ফেভারিটদের মতোই বিশ্বকাপ শুরু ইংরেজদের।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১১ রান তোলে ইংল্যান্ড। প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত খেলেছেন ওপেনার জেসন রয় (৫৩ বলে ৫৪ রানের ইনিংস খেলেন তিনি)। এছাড়া জো রুট ৫১, মরগান ৫৭ ও বেন স্টোকস করেন ৮৯ রান করেন।
জবাবে ব্যাট করতে নেমে আফ্রিকানরা পাত্তাই পায়নি। জোফরা আর্চারের ২৭ রানে ৩টি এবং এরপর বেন স্টোকস ও লিয়াম প্লানকেটের দুটি করে উইকেট শিকারে ৩৯.৫ ওভারে ২০৭ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্বিতীয় ম্যাচ : ইংল্যান্ড বনাম পাকিস্তান (নটিংহাম)
ফল : পাকিস্তান জয়ী : ১৪ রানে।
জয়ে বিশ্বকাপের মিশন শুরু করলেও দ্বিতীয় ম্যাচে নিজেদের হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। মিশন শুরুর আগে পাকিস্তানকে ৪-০ ব্যবধানে হারিয়ে দেওয়া ইংলিশরাই কিনা বিশ্ব মঞ্চে পাকবাহিনীর কাছে হেরে যায় ১৪ রানে!
টস জিতে পাকিস্তানকে ব্যাটিংয়ে পাঠায় ইংল্যান্ড। যেখানে নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৪৮ রান করে সরফরাজরা। জবাবে জো রুট এবং জস বাটলারের জোড়া সেঞ্চুরি সত্ত্বেও মরগানদের হারতে হয়েছে ১৪ রানে।
৭৫ বলে বাটলারের সেঞ্চুরিসহ ১৭.৩ ওভারে ওপেনিং জুটিতে ১৩০ রান করে স্বাগতিকরা। কিন্তু সাদাব খান ও ওয়াহাব রিয়াজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৯ উইকেটে ৩৩৪ রান পর্যন্ত যেতে সক্ষম হয় ইংল্যান্ড। ১৪ রানে জয় পায় পাকিস্তান।
তৃতীয় ম্যাচ: ইংল্যান্ড বনাম বাংলাদেশ (কার্ডিফ)
ফল : ইংল্যান্ড জয়ী : ১০৬ রানে। এক ম্যাচ হার এবং এক ম্যাচ হেরে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৬ রানের বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে ঘুরে দাঁড়ায় ইংল্যান্ড। ওপেনার রয়ের সেঞ্চুরিতে (১২১ বলে ১৫৩ রান) বাংলাদেশকে ৩৮৬ রানের টার্গেট দেয় স্বাগতিকরা। জবাবে ৪৮.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২৮০ করতে সক্ষম হয় সাকিব-তামিমরা।
এই ম্যাচে রয়-বাটলার-মরগানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে বড় লক্ষ্য দাঁড় করায় ইংল্যান্ড। আর বল হাতে আর্চার-স্টোকস ও উড ছিলেন সফল। এই তিন বোলারদের দাপটে বাংলাদেশ অলআউট হয়ে যায়। এই ইনিংসে কেবল টাইগার অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান করেছেন সেঞ্চুরি।
চতুর্থ ম্যাচ: ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ (সাউদাম্পটন)
ফল : ইংল্যান্ড জয়ী ৮ উইকেটে।
সাউদাম্পটনের রোজ বোল-এ আর্চার (৩/৩০) ও মার্ক উডের (৩/১৬) বোলিং নৈপুণ্যে জয়ের জন্য ২১৩ রানের টার্গেট পায় ইংলিশরা। যেখানে ইংল্যান্ড ওপেনিং জুটিতেই ৯৫ রান পায়। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে ওপেনার রয় ও ক্রিস ওকস মিলে করেন ১৯৯ রান। দ্বিতীয় উইকেটের পতনের পর স্টোকসকে সঙ্গে নিয়ে স্বাগতিকদের জয় এনে দেন রয়। মাত্র ৩৩.১ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে জয় পেয়ে যায় ইংল্যান্ড।
পঞ্চম ম্যাচ: ইংল্যান্ড বনাম আফগানিস্তান (ওল্ড ট্রাফোর্ড)
ফল : ইংল্যান্ড জয়ী ১৫০ রানে।
এই ম্যাচে অধিনায়ক মরগান গড়েছিলেন বিশ্বরেকর্ড। ৭১ বলে ১৪৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন তিনি; যেখানে ছিল মোট ১৭টি ছক্কা! মরগানের দানবীয় সেঞ্চুরিতে ম্যানচেস্টারে আফগানিস্তানের বিপক্ষে বড় জয় পায় ইংল্যান্ড।
এছাড়া ইংল্যান্ডের হয়ে বেয়ারস্টো ৯০ এবং রুট ৮৮ রান করেন। এই তিন ব্যাটারের গুণে ৩৯৭ রানের বড় স্কোর পায় ইংল্যান্ড। রানের এই পাহাড় টপকাতে নেমে এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে গতিসম্পন্ন বোলারের স্বীকৃতি পাওয়া উড ও আর্চারের তাণ্ডেবে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ২৪৭ রানে থামে আফগান ইনিংস।
ষষ্ঠ ম্যাচ: ইংল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা (হেডিংলি)
ফল : শ্রীলঙ্কা জয়ী ২০ রানে।
আগের পাঁচ ম্যাচে কেবল এক হারে সবাইকে জানান দিচ্ছিলেন কেন ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপের ফেভারিট ধরা হয়েছে। এরপরই বিশ্বকাপের সবচেয়ে বড় অঘটন! শ্রীলঙ্কার কাছে ষষ্ঠ ম্যাচে হেরে পুরো আসরটিই এলোমেলো করে দেয় ইংল্যান্ড।
টস হেরে শ্রীলঙ্কা মাত্র ২৩২ রান তোলে। যা ইংল্যান্ডের জন্য সহজই ছিল। কেননা আগের ম্যাচগুলোতে তিনশোরও বেশি স্কোর করেছেন তারা। কিন্তু এই ম্যাচে লঙ্কানদের দেওয়া এই অল্প রান তাড়া করতে ব্যর্থ হয় স্বাগতিকরা।
এই ম্যাচে বড় বিস্ময় শ্রীলঙ্কার কাছে ইংল্যান্ডের ২০ রানের পরাজয়। লাসিথ মালিঙ্গার চোখ ধাঁধানো এক স্পেলেই ম্যাচের চিত্র বদল যায়। এক স্পেলে রুট ও বাটলারসহ মালিঙ্গার ৪৩ রানে ৪ উইকেট শিকারে পরাজিত হয় ইংল্যান্ড।
লঙ্কানদের করা মাঝারি মানের ২৩২/৯ সংগ্রহের বিপক্ষে ২১২ রানে অলআউট হলে টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় পরাজয়ের মুখ দেখে ইংল্যান্ড। অবশ্য ধনঞ্জয়া ডি সিলভার অফব্রেক বোলিংয়ে মাত্র নয় বলে ৩ উইকেট নেওয়ায় স্বগতিকদের পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
সপ্তম ম্যাচ: ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়া (লর্ডসে)
ফল : অস্ট্রেলিয়া জয়ী ৬৪ রানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরেই পথ হারিয়ে বসে ইংল্যান্ড। তাইতো সপ্তম ম্যাচটি হেরেছে তারা। গেল ২৭ বছর বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারেনি ইংলিশরা। জয় না পাওয়ার রেকর্ড ভাঙার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি স্বাগতিকরা।
অজিদের দেওয়া ২৮৫ রানের জবাবে ইংলিশরা করে ২২১ রান। ৬৪ রানে এই হারে ইংল্যান্ডের সেমি-ফাইনাল খেলা নিয়েই সন্দেহ সৃষ্টি হয়। এই ম্যাচেই জেসন বেহরেনডর্ফ পাঁচটি উইকেট শিকার করেন। ইংলিশদের হয়ে ম্যাচটিতে কেবল বেন স্টোকস ৮৯ রানের ইনিংস খেলেছিলেন।
অষ্টম ম্যাচ: ইংল্যান্ড বনাম ভারত (এজবাস্টন)
ফল : ইংল্যান্ড জয়ী ৩১ রানে।
দুই হার ও পাঁচ জয়ে সেমি-ফাইনালে পথটা কঠিন হয়ে পড়েছিল স্বাগতিকদের। কেননা পয়েন্টে তাদের কাছেই ছিল পাকিস্তান। সুতরাং সেমিতে যেতে হলে শেষের দুই ম্যাচ জিততেই হতো ইংল্যান্ডের। বিশ্বকাপে নাকি ২৭ বছর ধরে ভারতকে হারাতে পারেনি ইংল্যান্ড। হিসেব-পাল্টে ঠিক ভারতকে হারিয়ে সেমির আশা বাঁচিয়ে রাখে ইংলিশরা।
বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি এবং রয়ের (৬৬) সাথে ১৬০ রানের জুটি গড়েন বেয়ারস্টো। এরপর ৫৪ বলে স্টোকসের ৭৯ রানের ভর করে ৩৩৮ রান করে ইংল্যান্ড। এরপর কেএল রাহুলকে শূন্য রানে বিদায় করলেও রোহিত শর্মা (১০১) ও বিরাট কোহলি (৬৬) হতাশা ছড়িয়েছেন ইংল্যান্ড শিবিরে। তবে প্লানকেটের তিন উইকেট শিকার ইংলিশদের ম্যাচে ফেরাতে সাহায্য করে এবং ৫ উইকেটে ৩০৬ রানে থামে ভারত।
নবম ম্যাচ: ইংল্যান্ড বনাম নিউজিল্যান্ড (ডারহাম)
ফল : ইংল্যান্ড জয়ী ১১৯ রানে।
ওপেনার বেয়ারস্টোর টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি (১০৯) এবং রয়ের (৬০) সঙ্গে ১২৩ রানের ওপেনিং জুটি ১৯৯২ আসরের পর প্রথমবার স্বাগতিকদের সেমিতে ওঠায়। তাদের ব্যাটে ভর করে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩০৫ রান করে ইংল্যান্ড। জবাব দিলে নেমে কিউইরাও কম খেলেননি। শুরুটা খারাপ হলেও মিডল অর্ডারের চেষ্টাও সফল হয়নি গেল বারের রানার্স-আপরা। শেষ পর্যন্ত ৪৫ ওভারে ১৮৬ রানে থামে কিউইদের ইনিংস।
সেমিফাইনাল: ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ( এজবাস্টন)
ফল : ইংল্যান্ড জয়ী ৮ উইকেটে।
গ্রুপ পর্বে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে না পারার প্রতিশোধ ঠিকই স্বাগতিকরা নিলেন সেমি-ফাইনালে। অজিদের ৮ উইকেট (১০৭ বল হাতে রেখে) হারিয়ে ২৭ বছর পর চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে ইংল্যান্ড।
শুরুতেই দুটিসহ ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া ওকসের ২০ রানে ৩ উইকেট শিকার এবং আদিল রশিদের ৩ এবং আর্চারের ২ উইকেট শিকারে ৪৯ ওভারে ২২৩ রানে আটকে যায় অস্ট্রেলিয়া। এরপর জেসন রয়ের ৬৫ বলে ৮৫, বেয়ারস্টোর ৩৪, রুটের অপরাজিত ৪৯* এবং মরগানের ৪৫* রানের সুবাদে ৩২.১ ওভারে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত হয়।
রবিবার (১৪ জুলাই) ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের লড়াইয়ে নামবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ক্রিকেট বোদ্ধাদের ধারণা ফাইনালে জয়ের হাসি হাসবে ইংল্যান্ড। কি হয় ফলাফল তাই এখন দেখায় বিষয়।
ওডি/এএপি
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড