• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিশ্বকাপ যুদ্ধ ইংল্যান্ড-ওয়েলসের ১০ শহরের ১১ মাঠে

  সোহরাব মাহাদী

২৮ মে ২০১৯, ১৩:২২
ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০১৯
ছবি : সংগৃহীত

অভিজাত ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্ট আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৯ এর বাকি আর মাত্র এক দিন। এরই মধ্যে ঘন্টা মিনিটের হিসেব শুরু হয়ে গেছে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে বসতে যাওয়া বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসর নিয়ে। পঞ্চমবারের মতো বিশ্বকাপ আয়োজক হিসেবে থাকা ইংল্যান্ডের সহযোগী হিসেবে থাকছে ওয়েলস। দুই দেশের ১০টি শহরে ১১টি ভেন্যুতে ৪৬ দিনের মেগা ইভেন্টে মোট ম্যাচ হবে ৪৮টি। দুটি সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল ম্যাচের জন্য রাখা হয়েছে রিজার্ভ ডে।

আসন্ন বিশ্বকাপে অংশ নেবে মোট ১০টি দেশ। খেলা হবে ১৯৯২ বিশ্বকাপের আদলে রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে। যেখানে প্রত্যেকটি দল একে অন্যের মুখোমুখি হবে একবার করে। পয়েন্ট টেবিলে শীর্ষে থাকা চার দল খেলবে সেমিফাইনালে।

প্রায় দেশ মাসের এই মহাযজ্ঞ ইংল্যান্ড ও ওয়েলেসর ১০টি শহরের ১১টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে লন্ডন শহরের দুটি ভেন্যু রয়েছে। লন্ডনের ওভালে পর্দা উঠবে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের। আর পর্দা নামবে ক্রিকেটের মক্কা খ্যাত লর্ডসে। বিশ্বকাপের আগে

চলুন জেনে নিই দুই দেশের সেই ১১ ভেন্যুর নানা কথা:

দ্য ওভাল, লন্ডন : লন্ডনের কেনিংটনে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠ। ইংল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেট ম্যাচগুলো এখানে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। শুধু ক্রিকেট কেন? যে কোনও খেলার সবচেয়ে বড় মাঠের স্বীকৃতি ইংল্যান্ডের দ্য ওভালের। দক্ষিণ লন্ডনের মাঠটি ইংল্যান্ডের কাউন্টি ক্রিকেটের জনপ্রিয় ক্লাব সারের হোমগ্রাউন্ড হিসেবেও পরিচিত।

এই মাঠে একসময় নিয়মিত ফুটবল ও রাগবি খেলা হতো। ১৮৭০ সালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম আন্তর্জাতিক ফুটবল ম্যাচটিও ইংল্যান্ড খেলে এখানেই। অষ্টাদশ শতকে ক্রিকেট ক্লাব সারে স্টেডিয়ামটি অধিগ্রহণের পর বাইশ গজেরই দাপট দেখা যায় ওভালে। বিশ্বের দ্বিতীয় ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজেদের প্রথম টেস্টটি দ্যা ওভালেই খেলে ইংল্যান্ড। শুধু তাই নয় প্রথম বারের মত ফ্লাড লাইটে ক্রিকেট খেলা শুরু হয় এখানেই। ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ এবং ১৯৯৯ সালের চারটি বিশ্বকাপের আসর বসে এই দ্য ওভালেই। আর আসন্ন বিশ্বকাপ ২০১৯ এর উদ্বোধনী ম্যাচও খানেই অনুষ্ঠিত হবে।

২৩ হাজার ৫০০ দর্শক ধারণক্ষমতা সম্পন্ন এই মাঠেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বন্দিদের আটকে রাখার পরিকল্পনা করে ব্রিটিশরা। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে ফিলিপ লার্কিনের কবিতাতেও ওভালের কথা উঠে আসে। বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের উদ্বোধনী ম্যাচসহ পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে ওভালে। যার মধ্যে দুটি ম্যাচ বাংলাদেশের।

০২ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ওভালেই খেলবে সাকিব তামিমরা। আর ০৫ জুন নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে এই মাঠেই নিউজিল্যান্ডর মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। এর আগে ৩০ ম্যাচে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওভালে নামবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। ০৯ জুন ভারত ও ১৫ জুন শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া।

কার্ডিফ ওয়েলস স্টেডিয়াম, কার্ডিফ: ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের টাফ নদীর পশ্চিম তীরে ও কার্ডিফ আর্মস পার্কের উত্তরে অবস্থিত এটি। লেডি সোফিয়া রডন-হ্যাস্টিংসের নামানুসারে এই স্টেডিয়ামকে সোফিয়া গার্ডেনসের নামকরণ করা হয়েছিল। কার্ডিফ আর্মস পার্ক থেকে স্থানান্তরিত হয়ে ১৯৬৭ সালের ২৪ মে গ্ল্যামারগ্যান তাদের প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট খেলা আয়োজনে লক্ষ্যে সলেক স্টেডিয়ামকে নিজ মাঠ হিসেবে ব্যবহার করছে। ১৯৯৫ সালে ১২৫ বছর মেয়াদী চুক্তি সম্পন্ন হয়। পূর্বে কার্ডিফ করিন্থিয়ান্স ফুটবল ক্লাব এ মাঠে ফুটবল খেলার আয়োজন করতো। এই মাঠে দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১৫,৬৪৩ জন।

১৯৯৯ সালে নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু করে সোফিয়া গার্ডেন। ২০০১ সাল নিয়মিত ওয়ানডে ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হলেও ২০০৯ সালে অ্যাশেজ সিরিজ দিয়ে টেস্ট ম্যাচ শুরু হয় এই মাঠে। স্টেডিয়ামটির পিচ সুইং বোলারদের জন্য বেশ উপযোগি। আসন্ন বিশ্বকাপে মোট চারটি ম্যাচের দায়িত্ব পায় সোফিয়া গার্ডেন্স। ৮ জুন বাংলাদেশ নিজেদের তৃতীয় ম্যাচটি স্বাগতীক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে এই মাঠেই। এছাড়াও ১ জুন নিউজিল্যান্ড ও ৪ জুন আফগানিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে শ্রীলঙ্কা। আর ১৫ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা মোকাবিলা করবে আফগানিস্তানকে।

ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ড, ব্রিস্টল : এ মাঠটি ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে অবস্থিত প্রাচীন ক্রিকেট মাঠ। সম্প্রচারস্বত্ত্বজনিত কারণে এ স্টেডিয়ামটি ব্রাইটসাইড গ্রাউন্ড নামে পরিচিতি। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ক্রিকেটার ডব্লিউ জি গ্রেস এ মাঠটি ১৮৮৯ সালে কিনেছিলেন। এরপর থেকেই গ্লুচেস্টারশায়ার কর্তৃপক্ষ চিরকালের জন্য দখল করে নেয়। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২০ হাজার করার লক্ষ্যে মাঠ পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নেয়। অবশেষে ২০১০ সালে মার্চে ব্রিস্টল সিটি কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ নতুন মাঠের কার্যক্রমের উদ্বোধন করে।

১৯৮৩ সালের ১৩ জুন নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ দিয়ে ওয়ানডে ম্যাচের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৬ সালের ২৮ আগস্ট ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এ মাঠে বিশ্বকাপের মোট তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। মাঠে দর্শক ধারণ ক্ষমতা ১৭ হাজার ৫০০।

ব্রিস্টল কাউন্টি গ্রাউন্ডে বিশ্বকাপের চতুর্থ ম্যাচে ১ জুন মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান। এছাড়া ৭ জুন বিশ্বকাপের ১১তম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে পাকিস্তান এবং ১১ জুন বিশ্বকাপের ১৬তম ম্যাচ ও নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা।

কাউন্টি গ্রাউন্ড টাউনটন, ট্যানটন: সমারসেটের ট্যানটন এলাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ক্রিকেট মাঠ কাউন্টি গ্রাউন্ড। ১৮৮২ সাল থেকে এ মাঠে সমারসেট দল নিজেদের খেলা আয়োজন করে আসছে। প্রায়োরি ব্রিজ রোড ও সেন্ট জেমস স্ট্রিটের মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত মাঠটির দর্শক ধারন ক্ষমতা ১২,৫০০। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপের গ্রুপ-পর্বের খেলায় স্বাগতিক ইংল্যান্ডরে মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা। এর মধ্যদিয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা এ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতায় গ্রুপ-পর্বের দুই খেলার আয়োজন হয়েছিল।

আসন্ন বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের তিনটি ম্যাচ এ মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। ০৮ জুন কাউন্টি গ্রাউন্ডে নিউজিল্যান্ডের মোকাবেলা করবে আফগানিস্তান। চার দিন পর ১২ জুন অস্ট্রেলিয়া পাকিস্তান মুখোমুখি হবে। এবং কাউন্টি গ্রাউন্ডের শেষ ম্যাচে তথা বাংলাদেশের ষষ্ঠ ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মোকাবেলা করবে টাইগাররা।

এজবাস্টন, বার্মিংহাম: ইংল্যান্ডের বার্মিহামের এজবাস্টন এলাকায় অবস্থিত এটি। ওয়ারউইকশায়্যার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের নিজ মাঠ হিসেবে স্টেডিয়ামটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্টেডিয়ামের সর্বমোট দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২৫,০০০। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডের পর এটি দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রিকেট খেলার মাঠ হিসেবে পরিচিতি। ১৯০২ সালে অ্যাশেজ সিরিজের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয় এজবাস্টন স্টেডিয়ামের। ১৯৯৪ সালে ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ব্রায়ান লারা ৫০১ রানের দারুন ইনিংস খেলে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন এই মাঠেই।

আসন্ন বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেমিফাইনালসহ এই মাঠে মোট পাঁচটি খেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেমিফাইনালের জন্য থাকছে একদিন রিজার্ভ ডেও। ১৯ জুন দক্ষিণ আফ্রিকা ও ২৬ জুন পাকিস্তানের বিপক্ষে এই মাঠে নামবে নিউজিল্যান্ড। এছাড়াও স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩০ জুন খেলবে ভারত।

আর ২ জুলাই বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে কোহলিরা। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালটি এখানে অনুষ্ঠিত হবে ১১ জুলাই। আর ১২ জুলাই থাকছে রিজার্ভ ডে।

রোজ বোল, সাউদাম্পটন: দ্য রোজ বোল ইংল্যান্ডের হ্যাম্পশায়ার কাউন্টির ওয়েস্ট এন্ডে অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠ। ২০০১ সাল থেকে এই মাঠে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তন্মধ্যে ২০০৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রতিযোগিতার বেশ কয়েকটি খেলা আয়োজনের দায়িত্ব পায় রোজ বোল কর্তৃপক্ষ। এই মাঠে এখন পর্যন্ত দুইটি টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি ২০১১ সালে ইংল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কার মধ্যকার টেস্টও অনুষ্ঠিত হয়। এই মাঠে গ্যালারিতে দর্শক ধারণের ক্ষমতা ২৫ হাজার।

আসন্ন বিশ্বকাপে রোজ বোলে অনুষ্ঠিত হবে পাঁচটি ম্যাচ। ০৫ জুন দক্ষিণ ভারত ও ১০ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। চার দিন পর অর্থৎ ১৪ জুন ফের মাঠে নামবে ক্যারিবিয়ানরা। আর তাদের প্রতিক্ষ স্বাগতীক ইংল্যান্ড। রোজ বোলে ২২ জুন নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলবে ভারত। প্রতিক্ষ আফগানিস্তান। আর মাঠের শেষ ম্যাচে আফগানদের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ২৪ জুন।

হেডিংলি, লিডস: ইংল্যান্ডের লিডসে অবস্থিত হেডিংলি স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সের ক্রিকেট মাঠ। সচরাচর, সংক্ষেপে এ স্টেডিয়ামকে হেডিংলি নামে ডাকা হয়। ১৮৯৯ সালে ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে এর অনুষ্ঠানিক ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়। এই মাঠে দর্শক ধারন ক্ষমতা ১৮,৩৫০জন। এই মাঠে অ্যাশেজ সিরিজের অনেক ম্যাচ গড়িয়েছে। বহু রেকর্ডেরও সাক্ষী হেডিংলি।

বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের চারটি ম্যাচ আয়োজন করার সুযোগ পাচ্ছে হেডিংলি স্টেডিয়াম কমপ্লেক্সে। ২১ জুন স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়ে হেডিংলিয়ের লড়াই। ২৯ জুন পাকিস্তান খেলবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে। আর এশিয়ার দুই প্রতিবেশি দেশ ভারত ও শ্রীলঙ্কা ৬ জুলাই মুখোমুখি হবে হেডিংলিতে। শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ০৮ জুলাই আফগানিস্তান বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে।

ওল্ড ট্র্যাফোর্ড, ম্যানচেস্টার: ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট মাঠ ইংল্যান্ডের গ্রেটার ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে অবস্থিত। ১৮৫৭ সালে এ মাঠের উদ্বোধন ঘটে। তখন মাঠটি ম্যানচেস্টার ক্রিকেট ক্লাবের অনুশীলনী মাঠ হিসেবে থাকলেও ১৮৬৪ সাল থেকে অদ্যাবধি ল্যাঙ্কাশায়ার কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের নিজস্ব মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ১৮৮৪ সালে ইংল্যান্ডে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত অ্যাশেজের প্রথম টেস্টের মাঠ হিসেবে খেলা আয়োজনের গৌরব লাভ করে ওল্ড ট্র্যাফোর্ড। ক্রিকেট বিশ্বকাপের স্বাগতিক মাঠরূপে এখন পর্যন্ত দু’টি সেমি-ফাইনাল এখানে অনুষ্ঠিত হয়। আসন্ন বিশ্বকাপের একটি সেমিফাইনালও এখানেই অনুষ্ঠিত হবে। ১৮৫৭ সালে এ মাঠটিকে প্রথমবারের মতো ক্রিকেট মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই মাঠে দর্শক ধারণ ক্ষমতা ২৬ হাজার।

অ্যাশেজের প্রথম টেস্ট ভেন্যু ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের ৬টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। আসন্ন বিশ্বকাপের সবচেয়ে হাইভোল্টেজ ম্যাচটি এই মাঠেই অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ জুন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত পাকিস্তান মুখোমুখি হবে এই ভেন্যুতে। ১৮ জুন স্বাগতিকদের বিপক্ষে খেলবে আফগানরা। ২২ জুন নিউজিল্যান্ড ও ২৭ জুন ভারতের মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ০৫ জুলাই অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে প্রোটিয়ারা। বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে। ০৯ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য এই ম্যাচের জন্য রিজার্ভ ডে থাকছে ১০ জুলাই।

রিভারসাইড, চেস্টার-লি-স্ট্রিট: রিভারসাইড গ্রাউন্ড ইংল্যান্ডের ডারহ্যাম কাউন্টির চেস্টার-লি-স্ট্রিটে অবস্থিত। ডারহ্যাম কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের অনুশীলনী মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এই মাঠে ইংলিশরা সফরকারী দলের বিপক্ষে বেশকিছু আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে এই মাঠে। মাঠের পূর্ণাঙ্গ দর্শক ধারণ সক্ষমতা হচ্ছে ১৭ হাজার। ১৯৯৫ মৌসুমে এ মাঠটিতে ক্রিকেট খেলার উপযোগী করা হয়।

২০১৯ বিশ্বকাপের তিনটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে রিভারসাইড গ্রাউন্ড। প্রথম ম্যাচটি মাঠে গড়াবে ২৮ জুন শ্রীলঙ্কা বনাম দক্ষিণ আফ্রিকার । এরপর ১ জুলাই দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ও শেষ ম্যাচটি খেলবে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ৩ জুলাই।

ট্রেন্ট ব্রিজ, নটিংহ্যাম: নটিংহ্যামশায়ারের ওয়েস্ট ব্রিজফোর্ড এলাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এবং নটিংহ্যামশায়ারের নিজস্ব খেলাগুলো অনুষ্ঠিত হবার পাশাপাশি ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুটি ম্যাচ এখানে অনুষ্ঠিত হয়। সে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং পাকিস্তানের এই মাঠে মুখোমুখি হয়। এ স্থানটির নামকরণ হয়েছে কাছাকাছি থাকা ট্রেন্ট নদী ও এর উপর সংযোগকারী ব্রিজ থেকে, যা মিডো লেন এবং সিটি গ্রাউন্ড, নটস কাউন্টির ফুটবল স্টেডিয়া ও নটিংহ্যাম ফরেস্টকে একত্রিত করেছে। মাঠটিতে দর্শ ধারণের ক্ষমতা ১৭ হাজার ৫০০। ১৮৩০ সালে সর্বপ্রথম ট্রেন্ট ব্রিজকে ক্রিকেট মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল। ১৮৯৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের টেস্ট খেলাটি ট্রেন্ট ব্রিজ স্টেডিয়ামের প্রথম টেস্ট খেলা।

ঐতিহাসিক এই মাঠে আসন্ন বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচ দিয়েই শুরু হবে ট্রেন্ট ব্রিজের মিশন। ৩১ মে অনুষ্ঠিতব্য সে ম্যাচে মুখোমুখি হবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বনাম পাকিস্তান। দুই দিন পর ৩ জুন স্বাগতীক ইংল্যান্ডরের মুখোমুখি হবে পাকিস্তান। এছাড়াও ৬ জুন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২০ জুন বাংলাদেশের মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়া। আর ১৩ জুন মাঠে গড়াবে ভারত-নিউজিল্যান্ডের ম্যাচটি।

লর্ডস, লন্ডন: লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড সচরাচর লর্ডস নামেই ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত। লন্ডনের সেন্ট জন’স উড এলাকায় অবস্থিত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠ। ক্রিকেটের মক্ক খ্যাত লর্ডস যুক্তরাজ্যের সর্ববৃহৎ ক্রিকেট মাঠ। মিডলসেক্স কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাব, ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ড (ইসিবি), ইউরোপীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের (ইসিসি) সদর দফতর এখানেই অবস্থিত। এছাড়া ২০০৫ সাল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সদর দফতর এখানে ছিল।

বৈশ্বিকভাবে লর্ডসকে ক্রিকেটের আবাসভূমি নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। এছাড়াও, বিশ্বের প্রাচীনতম ক্রীড়া যাদুঘরের কেন্দ্রস্থল এটি। লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড একমাত্র স্টেডিয়াম যেখানে ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৮৩ ও ১৯৯৯ - চারবার বিশ্বকাপের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুধু তাই নয় বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের ফাইনালও এই লর্ডসেই অনুষ্ঠিত হবে।

লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সর্বপ্রথম ম্যাচটি গড়ায় ১৮১৪ সালের ২২ জুন। ঐতিহাসি এই ম্যাচে মুখোমুখি হয় মেরিলেবোন ক্রিকেট ক্লাব বনাম হার্টফোর্ডশায়্যার। এই মাঠে প্রথম টেস্ট গড়ায় ১৮৮৪ সালের ২১ জুলাই ইংল্যান্ড বনাম অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে। দুই দলের ম্যাচ দিয়েও গড়ায় প্রথম ওডিআই ১৯৭২ সালের ২৬ আগস্ট।

ক্রিকেটের আবাসভূমি এই লর্ডসে আসন্ন বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচসহ পাঁচটি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। ২৩ জুন পাকিস্তান দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে শুরু হয়ে ২০১৯ বিশ্বকাপ যাত্র। এরপর এই ম্যাঠের ঐতিহাসিক দুই প্রতিদ্বন্ধী ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হবে ২৫ জুন। আর ২৯ জুন নিউজিল্যান্ডকে মোকাবেলা করবে অজিরা। বিশ্বকাপের এই মহাযজ্ঞে লর্ডসে খেলবে টাইগাররাও। ০৫ জুন নিজেদের শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে মোকাবিলা করবে মাশরাফি বাহিনী। আর ১৪ জুলাই এই লর্ডসেই ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে বিশ্বকাপের দ্বাদশ আসরের।

ওডি/এএপি