• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হাজতখানায় ওসি মোয়াজ্জেম, আদালত বসবে ২টায় 

  নিজস্ব প্রতিবেদক

১৭ জুন ২০১৯, ১৩:২৮
ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন
সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন (ছবি : সংগৃহীত)

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে ঢাকার সিএমএম আদালতে আনা হয়েছে। সোমবার (১৭ জুন) দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে তাকে সিএমএম আদালতে এনে এখানকার হাজতখানায় রাখা হয়েছে।

আজ দুপুর ২টায় সাইবার ট্রাইবুনালের কার্যক্রম শুরু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ট্রাইবুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর নজুরুল ইসলাম শামীম।

এর আগে সোমবার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাকে ফেনী পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান দৈনিক অধিকারকে ফোনালাপে নিশ্চিত করেন।

শাহবাগ থানার পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সোনাগাজী থানা পুলিশের একটি দল গতরাতেই ঢাকা এসেছে। আজ সকালে আমরা তাদের কাছে হস্তান্তর করে দিয়েছি। তারাই মোয়াজ্জেম হোসেনকে আদালতে হাজির করবে।’

এর আগে রবিবার (১৬ জুন) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে হাইকোর্ট এলাকা থেকে শাহবাগ থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম শনিবার (১৫ জুন) রাতে ঢাকায় এক আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জামিনের জন্য হাইকোর্টে যান। পরে জামিন শুনানির তারিখ পিছিয়ে সোমবার দিন ধার্য করেন আদালত। এ সময়ের মধ্যে কে বা কারা গোপনে পুলিশকে জানায়; ওসি মোয়াজ্জেম আদালত এলাকায় অবস্থান করছেন। এরপরই তিনি আদালত থেকে বের হয়ে যান। পরে অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে অভিযান চালিয়ে বিকাল চারটায় তাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।

রমনা জোনের ডিসি মারুফ সর্দার বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেনকে হাইকোর্টের কদম ফোয়ারার কাছে থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতারের বিষয়টি সোনাগাজী থানা পুলিশকে জানানো হয়েছে। ওই থানায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে। তাই তাদের কাছে মোয়াজ্জেমকে হস্তান্তর করা হবে। তাকে কোন আদালতে তোলা হবে এটি তারাই ঠিক করবে।

এর আগে ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের পালানো ঠেকাতে যশোর সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়। শুক্রবার (১৪ জুন) এ তথ্য জানায় বন্দর পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ওসি আবুল বাশার জানান, ‘মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জেলা পুলিশ সুপারের মাধ্যমে আমাদের কাছে তার পাসপোর্ট নাম্বার দেওয়া হয়েছে। মোয়াজ্জেম যাতে দেশ ত্যাগ করতে না পারেন সেজন্য চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে।’

শার্শা থানার ওসি এম মশিউর রহমান জানান, মোয়াজ্জেমের গ্রেফতারির আদেশ তার বাড়ি যশোরে পাঠানোর পর সীমান্তবর্তী শার্শা, বেনাপোল, চৌগাছা থানাকে তা জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা সতর্ক রয়েছেন।

সীমান্তে কড়া নজরদারি রয়েছে জানিয়ে যশোর-৪৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ সেলিম রেজা জানান, মোয়াজ্জেমের পালানো ঠেকাতে সীমান্তে রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। সীমান্তে সার্বক্ষণিক কড়া নজরদারি রয়েছে।

গত ১৫ এপ্রিল ওসির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। ব্যারিস্টার সুমনের মামলাটি প্রথমে অভিযোগ আকারে ছিল। পরে পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। ওসির বিরুদ্ধে থানায় সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে ফেসবুকে ছেড়ে দেওয়াসহ প্রত্যেকটি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। তদন্তে প্রমাণিত সব তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন আদালতকে দেওয়া হয়।

গত ২৭ মে ওসির বিরুদ্ধে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ৩১ মে পরোয়ানার চিঠি ফেনীর পুলিশ সুপার কাজী মনির-উজ-জামানের কার্যালয়ে যায়। তবে পুলিশ সুপার বিষয়টি অস্বীকার করতে থাকেন। তিনি ৩ জুন পরোয়ানা পাওয়ার কথা স্বীকার করেন। এর দুই দিন পর রংপুর রেঞ্জে পরোয়ানা পাঠানো হয়। তখন কাজটি বিধি মোতাবেক হয়নি বলে জানায় রংপুর রেঞ্জ। পুলিশের এমন গড়িমসির মধ্যে আত্মগোপনে যান মোয়াজ্জেম। পরে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে যান ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে চার-পাঁচজন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তার শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে উদ্ধার করে স্বজনরা সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাফি মারা যান। এ ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়া ও মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন।

ওডি/এআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড