আদালত প্রতিবেদক
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলায় কারা জড়িত তা অনুসন্ধ্যানে ডিএনএ টেস্ট করতে হত্যার আলামত এখনো যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। এর ফলে মামলার তদন্তের কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।
সোমবার (১১ নভেম্বর) আদালতে উপস্থিত হয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার সফিকুল আলম হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চকে এসব তথ্য জানান। এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দিন ঠিক করেছেন আদালত।
সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন।
এ দিকে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত আট বছরেও শেষ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন আদালত।
সারওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, হাইকোর্টের তলবে উপস্থিত হয়ে সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে এমন তথ্য জানিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার সফিকুল আলম। যেসব আলামত জব্দ করা হয়েছে সেসব আলামতের ডিএনএ পরীক্ষার রিপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। তাই মামলার তদন্তের কোনোরকম অগ্রগতি নেই।
এর আগে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত সাত বছরেও শেষ না হওয়ায় তার ব্যাখ্যা দিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করে হাইকোর্ট। গত ২০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আগামী ৬ নভেম্বর তাকে মামলার ডকেটসহ (সিডি) হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।
এ মামলার এক আসামি তানভীরের মামলা বাতিল আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত এ আদেশ দিয়েছেন। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সরোয়ার হোসেন বাপ্পী আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ‘মামলাটি কেন বাতিল করা হবে না, সেই প্রশ্নে হাইকোর্ট রুল দিয়েছেন। এ ছাড়া মামলার আইওকে তলব করেছেন। তানভীরের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম ফিরোজ।’
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. সারওয়ার হোসেন বলেন, দীর্ঘ আট বছরে মামলার তদন্ত শেষ না হওয়ার বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে। আদালত বলেছেন, তদন্ত শেষ হবে কবে। তদন্ত কি অনন্তকাল ধরে চলবে। শুনানি নিয়ে আদালত তানভীরের ক্ষেত্রে মামলাটির কার্যক্রম কেন বাতিল করা হবে না, এ মর্মে রুল দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন।
সাগর-রুনি হত্যা মামলায় গ্রেফতারের ২৬ মাস পর জামিনে কারাগার থেকে বের হন তানভীর রহমান। তানভীরের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে। তিনি ঢাকায় উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে থাকেন। তানভীর রহমান ২০১২ সালের ১ অক্টোবর তার কর্মস্থল স্কলাসটিকা স্কুলের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন।
এ ঘটনায় উত্তরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে তার পরিবার। এরপর ৯ অক্টোবর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর সংবাদ সম্মেলনে জানান, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় তানভীরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে ২০১৪ সালে হাইকোর্ট থেকে তিনি জামিন পান। একই বছরের ডিসেম্বরে তিনি মুক্তি পান।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তাসম্পাদক গোলাম মোস্তফা সারোয়ার ওরফে সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন নাহার রুনা ওরফে মেহেরুন রুনি দম্পতি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের বাসায় খুন হন। হত্যাকাণ্ডের সময় বাসায় ছিল তাদের সাড়ে চার বছরের ছেলে মাহির সারোয়ার মেঘ। এ হত্যাকাণ্ডে দেশ-বিদেশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই)। পরে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদঘাটনে ব্যর্থ হয়। তার পর হাইকোর্টের নির্দেশে ওই হত্যা মামলাটির তদন্তভার র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
সাগর-রুনি হত্যা মামলায় সন্দেহভাজন মোট আটজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মো. সাইদ, মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, সাগর-রুনির ভাড়াবাসার নিরাপত্তা প্রহরী এনামুল, পলাশ রুদ্র পাল এবং নিহত দম্পতির বন্ধু তানভীর রহমান। তাদের মধ্যে প্রথম পাঁচজনই মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের চিকিৎসক নারায়ণ চন্দ্র হত্যার ঘটনায় র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেফতার হন। প্রথম পাঁচজন ও নিরাপত্তারক্ষী এনামুল এখনো এ মামলায় কারাবাস করছেন।
ওডি/এআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড