শাহারিয়ার রহমান রকি, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
জাহাজ ঘাটে এখন আর ভেড়ে না জাহাজ, শুধুই স্মৃতি হয়ে আছে স্থানটি। এক সময় অত্র অঞ্চলের ব্যবসায়ের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এটি। লিখিত কোনো ইতিহাস না থাকলেও স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ইংরেজ শাসনামলে প্রায় ৪শ বছর আগে ঝিনাইদহ জেলার বারোবাজার ইউনিয়নের হাসিলবাগ গ্রামে বুড়ি ভৈরব নদীর তীরে অথৈই জলরাশির মধ্যে একটি উঁচু স্থান ছিল। এর পাশেই ছিল বড় একটি বটগাছ। কলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা বড় বড় জাহাজ নিয়ে এখানে এসে অত্র অঞ্চলের জন্য মালামাল নামিয়ে দিত এবং বটগাছের তলে বসে বিশ্রাম নিত। মেটে হাড়ি, ভূষিমাল, কাপড়ের ব্যবসা ছিল বেশি। মাল নামানো শেষে ব্যবসায়ীরা বুড়িভৈরব ও খুলনার রূপসা নদী হয়ে ঢাকাসহ ফরিদপুরের দিকে চলে যেতেন। সেই থেকেই স্থানটি জাহাজ ঘাট নামে পরিচিতি লাভ করে।
পরবর্তীতে সময়ের পরিক্রমায় জাহাজ না ভিড়লেও এই উঁচু স্থানটিতে এলাকার মানুষ ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার নামায আদায় করতেন। এরপর প্রায় ৩০ বছর আগে স্থানটি ঢাকা প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের দৃষ্টিতে আসলে তা খনন করা হয়। খননের পর দেখা মেলে স্থানটির চারিপাশে ইট দিয়ে উঁচু করে গাথা রয়েছে।
এরপর সেই স্থানটিতে শুধু প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত স্থানের সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে, যা বর্তমানে ঈদের নামায আদায়ের স্থান হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। কথিত আছে, জেলার কালীগঞ্জের বারোবাজার এলাকা এক সময় শাসন করত মুসলিম রাজা সেকেন্দার বাদশা। সে সময় সেকেন্দার বাদশার ছেলে গাজী জাহাজ ঘাটের এই স্থানটিতে বটগাছের নিচে বসতেন। তাই কেউ কেউ এটিকে গাজীর দরগাও বলে থাকেন।
৩০ বছর আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিপ্তরের দলের সঙ্গে খননে অংশ নেওয়া হাসিলবাগ গ্রামের হক আলী খান দৈনিক অধিকারকে জানান, খনন করার সময় বিশাল বট গাছের নিচে একটি বড় কুয়া দেখা যায়। যেটি গাছের শিকড়ে ঢেকে থাকায় খননের আগে দেখা মেলেনি। এরপর বিভিন্ন সময় কুয়ার ভেতর দুটি মাছ জোরে জোরে শব্দ করত যা স্থানীয় অনেক মানুষই দেখতে আসতেন। তবে সেই মাছ পরবর্তীতে কোথায় গেল তা আর তিনি জানাতে পারেনি।
হক আলী খান আরও জানান, বিশাল প্রকাণ্ড বটগাছটির ডাল শুকিয়ে যেতে থাকায় আস্তে আস্তে গাছটি কেটে ফেলা হয়। বন্ধ হয়ে যায় কুয়াটি। পরে স্থানটি শুধু নামাযের জায়গা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে সেই আমলের সুন্দর গাঁথুনি নিয়ে আজও দৃশ্যমান জাহাজ ঘাট।
এই গ্রামের সত্তর ঊর্ধ্ব বৃদ্ধ সিরাজুল ইসলাম জানান, বাপ-দাদার কাছ থেকে গল্প শুনেছি এই এলাকাটি এক সময় খুবই জমজমাট ছিল। সব সময় বড় বড় জাহাজ আসত, জনসমাগম লেগেই থাকত। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন আর জাহাজ ভেড়া তো দূরের কথা কেউ দেখতেও আসে না। স্থানীরাই স্থানটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখে।
তিনি আরও জানান, জাহাজ ঘাটের চারপাশে এখন নদী দখল করে প্রভাবশালীরা চাষাবাদ করে। কেউ কেউ ঘাটের পাশেই বুড়িভৈরব নদী দখল করে পুকুর কেটে দীর্ঘদিন ধরে মাছ চাষ করছে। এভাবে চললেও কেউ দখলদার উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয় না। বছর অন্তরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের লোক আসে, ঘুরে ফিরে চলে যায়। স্থানীয়রাই শুধু ইট দিয়ে ঘেরা উঁচু স্থানটি অর্থাৎ জাহাজ ঘাটটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখে। জাহাজ ঘাট স্থানটি ও এর চারিপাশের বেশ কিছু এলাকা নদীর জায়গায় অবস্থিত। অর্থাৎ এটি সরকারি মালিকানাধীন ১ নম্বর খাস খতিয়ান ভুক্ত জমি।
ওডি/এসজেএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড