• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দায়সারা বক্তব্য কর্মকর্তার, খসে পড়ছে শিক্ষার পলেস্তারা

  সোহেল রানা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

২৬ অক্টোবর ২০১৯, ০৯:০৫
খোলা আকাশের নিচে পাঠদান
ভবন না থাকায় খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকরা ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর প্রাথমিক বিদ্যালয় হলো মেরুদণ্ড গড়ার প্রথম ধাপ। যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিবেশ বান্ধব না হয় তখন শিশু শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবনের শুরুতেই আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করতে হয়-তবে সেই শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই। সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে পাঠদান। এমন অবস্থায় শিশু শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন অভিভাবকরা।

শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা বলছেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় খোলা আকাশে ক্লাস করা, সংস্কারের অভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে আতঙ্ক নিয়ে ক্লাস করা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও পাঠ্য বই সংকটসহ নানা কারণে সিরাজগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সচেতন সমাজ শিক্ষার মান বৃদ্ধির জন্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে সিরাজগঞ্জের চর কালিদাসগাতী, রতনী, হাড়নী ও জব্ধালীপাড়া,নিমগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায়, স্কুলের কক্ষগুলো ভাঙা। ক্লাস করার সময় খসে খসে পড়ে পলেস্তারা। ঝড়-বৃষ্টি হলে আতঙ্কে ছোটাছুটি করত হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। একটু বৃষ্টি হলে বই-পুস্তক ও পোশাক ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। এমন দৃশ্য শুধু এই চারটি বিদ্যালয়ে নয় জেলার প্রায় শতাধিক বিদ্যালয়ের দৃশ্য এমন।

সংস্কারের অভাবে এসব প্রতিষ্ঠান ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এসব স্কুলে ভয় ও আতঙ্কে নিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়াও গত বন্যায় জেলার কাজিপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার প্রায় আটটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের টিনের ঝুপড়ি ও খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে।

অন্যদিকে, চলতি শিক্ষাবর্ষের আটমাস অতিবাহিত হলেও চৌহালীর হাট ঘোড়জান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শেখ চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রেহাইকাউলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হুইপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরজাজুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চরধীত পশ্চিমপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ১২-১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যের বই পায়নি। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে।

পুরাতন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অভিযোগ, বারবার শিক্ষা অফিসে ধর্না দিয়েও বই পাওয়া যায়নি। বই না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে চায় না। পড়াশোনাও ঠিকমত করছে না শিক্ষার্থীরা। এতে পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। এছাড়াও অনেক বিদ্যালয়ে স্যানিটারি ব্যবস্থা না থাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে শিশুদের স্কুল সময় পর্যন্ত কাটাতে হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতেও রয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা, রাহাত ও সাদিয়াসহ কোমলমতি শিক্ষার্থীরা জানান, আমাদের স্কুলের ভবনগুলো ভাঙা। মাঝে-মধ্যে ছাদের পলেস্তারা খসে খসে পড়ে। আমরা খুব ভয়ে ক্লাস করি। আবার বৃষ্টি হলে বই-খাতাসহ জামা ভিজে যায়। আমাদের ক্লাস করতে খুব কষ্ট হয়।

জেলা শিক্ষা অফিসার সিদ্দিক মোহাম্মদ ইউসুফ রেজা অনেকটা দায়সাড়াভাবেই জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো মেরামত ও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় ভবনগুলো পুনঃনির্মাণের জন্য মন্ত্রণালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে সংস্কার বা পুনঃনির্মাণ করা হবে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস করার নিষেধ রয়েছে। প্রয়োজনে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি কোন বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নেয়া হয় তবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিভাবক আফসার উদ্দিন, হানিফ উদ্দিন জানান, ছেলেমেয়ের স্কুলে পাঠিয়ে আমাদের আতঙ্কে থাকতে হয়। কখন ছেলে মেয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। এভাবে ভয়-আতঙ্ক নিয়ে ছেলেমেয়ের ঠিকমতো লেখাপড়া হচ্ছে না।

নিমগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি রুহুল আমিন বকুল জানান, বিদ্যালয়ের ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণার পরে ওই ভবনে ক্লাস করানো হয়েছে। কিন্তু এখন আর ক্লাস করানো সম্বল হচ্ছে না। উপজেলা শিক্ষা অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও কোন ফল পাইনি। নিরুপায় হয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকরা।

চৌহালীর হাট ঘোড়জান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইসমাইল হোসেন জানান, তার স্কুলের প্রথম শ্রেণির ৬৮ জন শিক্ষার্থীর কেউই বাংলা বই হাতে পায়নি। বছরের শুরুতে শিক্ষা অফিসে বারবার যোগাযোগ করেও কোন কাজ হয়নি। এজন্য বাধ্য হয়ে পুরনো বই জোড়াতালি দিয়ে ক্লাস করতে হচ্ছে। বই না থাকায় ছেলেমেয়েরা স্কুলেও আসতে চায় না।

ওডি/এসজেএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড