• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভাঙন ঠেকানোর আগেই ভাঙে বরাদ্দের তফিল

  রাকিব হোসেন আপ্র, লক্ষ্মীপুর

২৫ অক্টোবর ২০১৯, ২২:০৬
নদী ভাঙন
মেঘনা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে নদী ভাঙন দেখছেন উৎসুক জনতা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

‘এ কুল ভাঙে, ও কুল গড়ে’ এই তো নদীর খেলা। ভাঙা-গড়ার এমন খেলায় নদী পাড়ের মানুষ গুলো সংগ্রাম করেই টিকে আছে। ফসলি জমি, হাট-বাজার, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির ও বসতভিটাসহ শতশত একর জমি হারানোর পরও তারা টিকে থাকার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর এলাকায় মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে দিশেহারা হয়ে উঠেছেন উপকূলবাসী। শেষ অবলম্বনটুকু হারিয়ে এখন অন্যের জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন এ দুই উপজেলার কয়েক হাজার পরিবার। তারা বলছেন, গত ২৫ বছরেও নদী ভাঙনের এমন ভয়ংকর রূপ দেখা যায়নি।

ইতোমধ্যে লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের প্রচেষ্টায় সরকারিভাবে বালি ভর্তি শতশত জিও ব্যাগ ভাঙন এলাকায় ফেলা হয়েছে। তবুও ভাঙন ঠেকানো যায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী ভাঙন রোধে সরকারের বরাদ্দ যথেষ্ট হলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর অনিয়মের কারণে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। তারা যথাযথ পরিকল্পনা না করেই লোক দেখানো ভাবে কাজ করছে। পরিকল্পিতভাবে নদী ড্রেজিং না করে নিম্নমানের বালু দিয়ে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। তাছাড়া অর্ধেক পরিমাণ বালু ভরে ডাম্পিং করায় জিও ব্যাগ গুলোও নদী গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে।

পরিকল্পিতভাবে নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবিতে স্থানীয়রা একাধিকবার মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ব্যানারে জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন স্থানে এসব কর্মসূচি পালন করা হয় বলে জানা গেছে। এছাড়া দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমেও সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ তায়ালার সাহায্য কামনা করেছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রামগতি উপজেলার আলেকজান্ডার ও কমলনগরের চর ফলকন ইউনিয়নে নদীর ভয়াবহ ভাঙন চলছে। টানা কয়েক দিনের ভাঙনে চর ফলকন ইউনিয়নের লুধূয়া ঈদগাহ ময়দান, মসজিদ, চর ফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২২ বছর পূর্বে নির্মিত উপজেলার সর্বপ্রথম কমিউনিটি ক্লিনিকটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন ওই মসজিদ, স্কুল ও ক্লিনিকের কার্যক্রম নিকটবর্তী ফলকন বাঘারহাটে সরিয়ে আনা হয়েছে। নদী ভাঙনের কবলে পড়ে অনেকেই ঘরবাড়ি ভেঙে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রসহ অন্যত্র সরে যাচ্ছেন।

কমলনগর উপজেলার চর ফলকন ইউনিয়নের বাসিন্দা এ কে এম আবুল বাশার। তিনি চর ফলকন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক। সম্প্রতি দৈনিক অধিকারকে আবুল বাশার বলেন, ‘মেঘনা নদীর অব্যাহত ভাঙনে আমার প্রায় ১০০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। গত ২০ বছরে নদী গর্ভে আমার চারটি বসতভিটা তলিয়ে গেছে। গত ২০ দিন আগে মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু হারিয়ে এখন অন্যের জায়গায় পরিবার-পরিজন নিয়ে খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি।

দক্ষিণ চর ফলকন গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ আহম্মদ হাওলাদার। তিনি পেশায় একজন কৃষক। তার পিতা মরহুম ফজলে করিম হাওলাদার। সৈয়দ আহম্মদ বলেন, আমার প্রায় ৭ একর ফসলি জমি নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর ভাঙনের ভয়াবহতায় আমি শঙ্কিত। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমার বসতভিটা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছি।

এ দিকে গত ৭ অক্টোবর দিনব্যাপী কমলনগর ও রামগতি উপজেলার ভাঙন কবলিত এলাকা ঘুরে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খোঁজখবর নিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। এ সময় নদী ভাঙনের ভয়াবহতা ও মানুষের মানবেতর জীবনযাপনের কথা তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জানাবেন বলে উপকূলবাসীকে আশ্বস্ত করেন।

চর ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুনুর রশিদ জানান, এবারের বর্ষা মৌসুমে মেঘনা নদী যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, তা এর আগে দেখা যায়নি। জোয়ার-ভাটায় নদী ভাঙন অনেকটা স্বাভাবিক। কিন্তু নদীর পানিতে সৃষ্ট ঘূর্ণি খুবই শক্তিশালী। গত দুই মাসে চর ফলকন ইউনিয়নের অন্তত তিনশ’ পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মুসা বলেন, নদী ভাঙন প্রতিরোধে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ চলমান রয়েছে। ভাঙনের তীব্রতা অনেক বেশি, যে কারণে ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মান্নান জানান, যেখানেই ভাঙন দেখা যাচ্ছে, সেখানেই জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে সাময়িক প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে চলতি বর্ষা মৌসুম শেষে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৩২ কিলোমিটার নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

ওডি/এএসএল

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড