শাহ্ মুহাম্মদ রুবেল, কক্সবাজার
কক্সবাজারের কলাতলি পর্যটন এলাকা। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এখানে জমাট বাঁধেন নিম্নবিত্ত হাজারো মানুষ। নিত্য দিন থাকে জীবনের অন্যরকম ছন্দ। এখানে কাউকে দেখা যায় ব্যস্ত জীবনের একঘেয়ে সময় অতিক্রম করতে। আবার কখনো বা চোখে পড়ে খেটে খাওয়া মানুষগুলোর প্রাণান্ত পরিশ্রমের পরও ক্ষুধা নিবারণে একমুঠো ভাতের অসহ্য যাতনা। যা এখানকার সাধারণ একটি ব্যঞ্জন।
আমাদের দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এরাই, যারা দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। এদের খাদ্যাভ্যাস তাদের আর্থিক সচ্ছলতার ওপর নির্ভর করে। প্রান্তিক আয়ের এসব মানুষের বেশিরভাগই তাদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকে রাস্তার খাবারের ওপর। ফুটপাত, ভ্রাম্যমাণ ভ্যান কিংবা ঠেলাগাড়ির ওপর বিক্রয় করেন থাকেন নানা ধরনের খাবার। তবে, গ্রাহকের কোনো কমতি নেই এসব খাবারের দোকানে।
ফলে ফুটপাতে বিক্রি করেই বেশকিছু ভাসমান দোকানদার জীবিকা নির্বাহ করেন। ব্যস্ততা ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ শহরে শ্রমজীবী অধিকাংশ নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ এখান থেকেই সকাল-বিকালের খাবার সেরে নেন। অনেককেই দেখা যায় ঝটপট রাস্তায় বসেই খাবার গ্রহণের কাজ সেরে ফেলতে। দীর্ঘদিন ধরে চলছে খোলা আকাশের নিচে খাবারের এমন হাট। আর ধীরে ধীরে বাড়ছে এর জনপ্রিয়তা। ফলে দুপুর পেরুলেই এখানে দোকানিরা সারিবদ্ধভাবে বসে পড়ে খাবারের পসরা সাজিয়ে। আর ক্রমাগত ভিড় জামাতে থাকে ক্রেতা। এ কারণে হাসি ফুটে ব্যবসায়ীর মুখে। এভাবেই জমে ওঠে চেনা-অচেনা মানুষের ভিড়। অবশ্য ক্রেতা হিসেবে এখানে রিকশাওয়ালার সংখ্যাই বেশি পরিলক্ষিত হয়। স্বল্পমূল্যে ঘরের তৈরি এ খাবারে তাদের অনেকই স্বস্তিবোধ করেন।
এমনই এক ভাসমান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বয়েসের ভাড়ে নুয়ে পড়া ষাটোর্ধ্ব আকতার হোসেন। যার নুন আনতে পান্তা ফুরাই অবস্থা। পাঁচ মেয়ের বোঝা কাঁধে নিয়ে তিনি সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট ‘ওশান প্যারাডাইসের’ পশ্চিম পাশে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে হকারি করে আসছেন। মানবিকতার বিবেচনায় জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখা থেকে তাকে একটি কার্ডও দেওয়া হয়েছে। বয়স্ক আকতার হোসেনের একমাত্র সম্বল একটি ভ্যানগাড়ি। ওই ভ্যানগাড়িতে করেই তিনি আগত দর্শনার্থী ও পর্যটকদের কাছে খাবার বিক্রি করে আসছেন। কিন্তু এক শ্রেণির সি-বিচ কর্মীরা তার পেটে বার বার লাথি মারছে। নানা দাবি-অজুহাতে তাকে অত্যাচার করে আসছে। গত ১৯ অক্টোবর একমাত্র সম্বল ভ্রাম্যমাণ দোকানটি বন্ধ করে দিয়ে মালামাল তছনছ করেছে তারা। এমনকি গ্যাসের চুলাটিও নিয়ে যায় সি-বিচ কর্মী ইসমাইল। পাশাপাশি টাকা না দিলে ভ্যানের (দোকান) ঝাপগুলোও খুলতে নিষেধ করা হয়েছে তাকে। ফলে সেই থেকেই ভ্রাম্যমাণ দোকানটি বন্ধ রয়েছে তার।
বেঁচে থাকার একমাত্র ভ্রাম্যমাণ দোকানটি হারিয়ে দিশেহারা ষাটোর্ধ্ব আকতার হোসেন জানান, পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে নিয়ে তার পরিবার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি তিনি নিজেই। বয়স বেশি হওয়ায় ভারী কাজ করতে পারেন না। ছেলে-মেয়ে মিলে এই দোকানটা দিয়েই কোনোরকম আয়-রোজগার করে সংসার চালান তিনি।
সরেজমিনে এসব বিষয়ে জানতে তথ্য সংগ্রহকালে দেখা হয় স্থানীয় সাংবাদিক শাহজাহান চৌধুরী শাহীনের সঙ্গে। বিষয়টিতে তিনি বলেন, ‘এসব গরিব হকারদের পেটে লাথি মেরে কি যুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে? সৎ উপার্জনে আত্মনির্ভরশীল এসব পরিশ্রমী গরিবেরা তো আমাদের সমাজেরই অংশ।’ এ সময় আকতার হোসেনের ভ্রাম্যমাণ দোকানটি পুনরায় চালু করতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ দিকে, অভিযুক্ত ওই বিচ-কর্মীদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক ও সি-বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি মো. কামাল হোসেন জানান, ‘অভিযুক্ত ওই বিচ কর্মীদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ওডি/আইএইচএন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড