রিয়াদ হোসাইন, মুন্সীগঞ্জ
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া-মুক্তারপুর সড়কের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার বলই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের স্থানটি যেন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। গত দুই বছরে ওই স্থানে ওই বিদ্যালয়ের এক স্কুল ছাত্রীসহ চারজন নিহত এবং ১২ স্কুল শিক্ষার্থীসহ প্রায় অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ওই স্কুলের সামনে কোনো গতিরোধক বা জেব্রা ক্রসিং না থাকায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং ওই এলাকার লোকজনের অভিযোগ। এ দিকে এলাকাবাসী নিজ খরচে গতিরোধক তৈরি করতে চাইলেও ওই সড়ক নির্মাণকারী সড়ক ও জনপদ বিভাগ তা তৈরি করতে দিচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ করেছেন।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক জানান, অনেকবার তদবিরের পরেও সড়ক ও জনপদ বিভাগ কোনো গতিরোধক তৈরি করে এমনকি এলাকাবাসীকেও তৈরি করতে দিচ্ছে না। তারা জেব্রা ক্রসিং গাড়ি ধীরে চালান সাইনবোর্ড লাগিয়ে দিবে বললেও তাও দিচ্ছে না।
সরেজমিনে ওই স্কুলে গিয়ে দেখা যায়, মাওয়া-মুক্তারপুর সড়কের একবারে পাশ ঘেঁষে বলই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। গত ২০ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ের শিশু শ্রেণির ছাত্রী পূর্ণ বিশ্বাস (৬) ওই স্কুলের সামনেই সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। তার পরের দিন হতেই কালো ব্যাচ ধারণ করছে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। তাদের চোখ মুখে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক। বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিও কমে গেছে।
ওই স্থানে গত দুই বছরে নিহত হয়েছে বলই গ্রামের কাশেম মোল্লা, খলিল ঢালী, অনোয়ারা বেগম। আহত হয়েছে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, রবিয়া বশরী, সূর্বণা, খাদিজা, সামিয়া, ফারিয়া, সাফিয়া, হাসান, আকাশসহ প্রায় ১২ জন এবং ওই এলাকার জুলহাস মোল্লা, শাহজাহান খানসহ প্রায় অর্ধশত মানুষ।
ওই বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে বয়ে যাওয়া রাস্তাটির দু-পাশে রয়েছে বাঁক। ওই বাঁকের কারণে ওই স্কুলের সামনে দিয়ে পার হওয়ার সময় দূর থেকে গাড়ি দেখতে না পাওয়ায় অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা।
ওই বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী রাবিয়া বশরী গত বছর ওই বিদ্যালয়ের সামনে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। ছয় মাস পর্যন্ত তার কোনো স্মৃতি শক্তি ছিল না। সে কিভাবে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল জানতে চাইলে সে জানায় কিছুই মনে নেই তার।
ওই বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী খাদিজা আক্তার জানান, আমি কিছু দিন আগে স্কুলে আসার সময় রাস্তার একদিকে তাকিয়ে দেখি গাড়ি নেই । রাস্তা পার হওয়ার সময় অন্য দিক হতে গাড়ি এসে আমার পায়ের ওপর দিয়ে উঠিয়ে দেয়। পরে আমি রাস্তার মধ্যে পড়ে যাই।
ওই বিদ্যালয়ের জমিদাতা বাবুল খাঁন জানান, বিদ্যালয়ের সামনে একটি গতি রোধক নির্মাণের জন্য অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু সড়ক ও জনপদ বিভাগ নিজেরাও কোনো গতি রোধক তৈরি করে দিচ্ছে না এবং আমাদেরও তৈরি করতে দিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার জানান, আমি স্কুলের সামনে জেব্রা ক্রসিং এবং সাইন বোর্ড দেওয়ার জন্য সড়ক ও জনপদের সঙ্গে একধিকবার যোগাযোগ করেছি। তারা বলছে দু-একদিনের মধ্যে ওই স্থানে সাইনবোর্ড জেব্রা ক্রসিং বসানো হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুর রহমান জানান, আমাদের এখন কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ আসলে আমরা ওই স্থানে জেব্রা ক্রসিং ও সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেব।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড