পঞ্চগড় প্রতিনিধি
এক খণ্ড পতিত জমি ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব বলতে কিছুই ছিল না। অথচ সেই অস্তিত্বহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির তালিকায় নাম উঠে গেছে। অবাক করা ঘটনাটি ঘটেছে দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ঝলইশাল শিরি ইউনিয়নে।
এ দিকে অস্তিত্বহীন নতুন হাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের এমপিওভুক্তির খবর শুনে রাতের আঁধারে প্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ড স্থাপন, ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন অবকাঠামো স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাত থেকে বোদা উপজেলার ঝলইশাল শিরি ইউনিয়নের নতুন হাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ নামের ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়। রাতারাতি ইট গেঁথে ভবনের ভিত্তি কাঠামো দাঁড় করানো হয়। টাঙিয়ে দেওয়া হয় কলেজের নাম সম্বলিত সাইনবোর্ড।
সরেজমিনে পরির্দশনে গিয়ে দেখা যায়, বোদা উপজেলার নতুনহাট বাজারের অদূরেই হোসনাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন একটি জমিতে ওই কলেজের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। কয়েকজন নির্মাণ শ্রমিক পূর্ণোদ্যমে ইট দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। ইটের গাঁথুনির পাশাপাশি টিউবওয়েল বসানোর কাজ করছেন কয়েকজন। আবার কয়েকজন শ্রমিক বালু ফেলার কাজ করছেন। চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী। এ সময় কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী বা কলেজ কর্তৃপক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি।
খবর নিয়ে জানা যায়, পঞ্চগড় বিসিক নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের অধ্যক্ষ দেলদার রহমান এই কলেজ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্থানীয়রা জানান, এখানে কলেজের নামে জমি থাকলেও এখানে ওই কলেজের কোনো কার্যক্রম ছিল না। কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো দেলদারের কলেজ থেকেই।
দেলদার রহমানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ওই প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি বলে দাবি করেন। তিনি জানান, এই প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ তার স্ত্রী শামীমা নাজনীন। তার দাবি, ২০০৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্থাপিত। বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে ২শ জন ছাত্রছাত্রী পড়ছেন। শিক্ষক রয়েছে ছয়জন। চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৬০ জন। পাশ করে ৫৮ জন। কাগজে কলমে সব ঠিক রয়েছে বলে দাবি করেন দেলদার।
এছাড়াও রাতারাতি ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ঘর আমি যখন খুশি তখন উঠাব। সাংবাদিকরা ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম ও শিক্ষক শিক্ষার্থীদের তথ্য দেখতে ও জানতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এর আগে টিনশেড ঘরে অধ্যয়ন কার্যক্রম চলত। এছাড়া তার নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন স্থানীয় অধিবাসী জানান, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি দেলদার রহমান পঞ্চগড়ের বিভিন্ন স্থানে নামে বেনামে একাধিক কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বিএম অধ্যক্ষ পরিষদের বড় নেতা তিনি। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার অদৃশ্য শক্তিবলে প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্তির তালিকায় গেছে বলে জানান স্থানীয়রা।
খবর নিয়ে জানা গেছে, পঞ্চগড় জেলায় এবার চারটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম এমপিওভুক্তির তালিকায় স্থান পায়।
মোহাম্মদ আজম নামে এক ব্যক্তি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য করেন, আমরা যেখানে এমপিওর সকল শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এমপিওভুক্ত হতে পারছি না। সেখানে এই রকম ভূইফোঁড়, অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠান কিভাবে এমপিওর তালিকায় নাম আসে সেটাই প্রশ্ন। তিনি বিষয়টি আরও তদন্ত করে এমপিওভুক্তি চূড়ান্ত করার দাবি জানান।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হিমাংশু কুমার রায় সিংহ বলেন, এমপিওভুক্তির বিষয়ে আমাদের কোনো ভূমিকা নেই। এমপি-সচিব ও মন্ত্রীরা কিভাবে এমপিওভুক্তির তালিকা দিয়েছেন তা তারাই ভাল জানেন।
ওডি/ এফইউ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড