রাজু আহমেদ, রাজশাহী
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী বাজার এলাকার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ছয়টি স্কুলের শতাধিক শিক্ষার্থীকে প্রতিদিনই মাত্র ৫ টাকা মূল্যে খাবার খাওয়াচ্ছেন স্থানীয় এক হোটেল ব্যবসায়ী। তবে শর্ত একটাই শিশু কিশোরদের পরনে থাকতে হবে স্কুলের ইউনিফর্ম। অন্নপূর্ণা নামের এই হোটেলটির মালিক বিপ্লব সরকার (৩৫)। আর এই ব্যবস্থার ফলে স্কুল গুলোতেও সাড়া পড়েছে ব্যাপক।
বিপ্লবের এই হোটেলের সুনাম এরই মধ্যে এলাকার গণ্ডি পেরিয়েছে। দুপুরে স্কুল ইউনিফর্ম পরে বিপ্লবের অন্নপূর্ণায় বসলেই মাত্র ৫ টাকায় মেলে দুপুরের আহার। স্থানীয়দের ভাষায় এটি ‘৫ টাকর প্যাকেজ’।
বিপ্লব সরকারের বাবা শ্যামল সরকারই মূলত এই হোটেলের মালিক। তবে শিক্ষার্থীদের জন্য নেওয়া উদ্যোগটা বিপ্লবের নিজের। তাঁর বাবা বিকালে বসেন। এর আগে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিপ্লব সরকারকে দায়িত্ব পালন করতে হয়। বুধবার (২৩ অক্টোবর) ওই হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, হোটেলের প্রায় সব কাজই নিজ হাতে করছেন বিপ্লব।
নিজের স্কুল জীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিপ্লব জানান, সকালে খেয়ে যেতেন স্কুলে। বিকাল পর্যন্ত থাকতেন অভুক্ত। খিদে পেটে শ্রেণিকক্ষে মনোযোগ ঠিক থাকতো না। নিজ বাল্য জীবনের এমন বাস্তব অভিজ্ঞতায় স্কুল পড়ুয়াদের জন্য পাঁচ টাকায় দুপুরের খাবার দিচ্ছেন বিপ্লব। তার লক্ষ্য শিশুরা পাঠে হোক মনোযোগী। এ উদ্যোগে দরিদ্র কিংবা স্বচ্ছল সব শিক্ষার্থী দারুণ খুশি।
নিজের কিশোর জীবনের গল্প শুনিয়ে এক গাল হেসে বিপ্লব আরও জানালেন, গ্রামের অধিকাংশ বাচ্চাই বাড়ি থেকে টিফিন নিয়ে আসে না। অনেকের বেশি টাকা দিয়ে হোটেলে দুপুরের খাবার কিনে খাওয়ার মতো সামর্থ্যও নেই। তারা স্কুলে এসে টিফিনের সময় আশপাশের দোকান থেকে মুখরোচক কিছু একটা কিনে খায়। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্যও ক্ষতিকর। অথচ দুপুরে এক প্লেট ভাত খেতে পারলে তাদের শরীরটা ভালো থাকে। এই চিন্তা থেকেই বাবার অগোচরে পাঁচ বছর আগেই তিনি এই প্যাকেজ চালু করেন। তখন থেকেই বাচ্চারা খেতে আসতে শুরু করে। তবে তাঁর বাবা দুই বছর পর বিষয়টি জানতে পারেন। তবে তিনি এতে বাধা দেননি।
বিপ্লব সরকার বলেন, বাচ্চাদের তিনি কয়েকটি শর্তে খেতে দেন। তার প্যাকেজ খেতে হলে অবশ্যই স্কুল ড্রেস পরে আসতে হবে। আর খাবার আগে বা পরে বাইরের দোকানে অন্য কোনো মুখরোচক খাবার খাওয়া যাবে না। তিনি বলেন, তিনি দেখেছেন বেশির ভাগ বাচ্চাই এক প্লেটের বেশি ভাত খেতে পারে না। তিনি ভাতের সঙ্গে সবজি আর ডাল দিয়ে একটি প্যাকেজ তৈরি করেছেন। খাবার সময় তিনি খেয়াল করেন, কোনো বাচ্চা যেন সবজি নষ্ট না করে। শরীরের জন্য সবজির বড় প্রয়োজন। তিনি তাদের সবজি খেতে বাধ্য করেন। টমেটোর মৌসুমে টমেটোর সালাদ খেতে বাধ্য করেন। এই প্যাকেজ তিনি পাঁচ টাকায় দেন। তবে পাশাপাশি খেতে বসে কোনো বাচ্চা যদি বেশি টাকা দিয়ে মুরগির মাংস খেতে চায়। তাহলে তিনি পাশের বাচ্চাটাকেও ছোট এক টুকরা মুরগির মাংস ও একটু ঝোল দেন। যাতে তার মন খারাপ না হয়।
তিনি মনের আনন্দে এটা করছেন। সেবার মানসিকতা থেকে করছেন। কারণ, তাঁর এসএসসি পরীক্ষাটা দেওয়া হয়নি। লেখাপড়া না করে কী ভুল করেছেন এখন তিনি বুঝতে পারেন। এ জন্য যে বাচ্চারা লেখাপড়া শিখছে, তারা যেন শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারে, তার জন্য তিনি তাঁর সাধ্যের মধ্যে যতটুকু পারছেন, সহযোগিতা করছেন।
এলাকার স্কুল শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নামমাত্র মূল্যে খাবারের ব্যবস্থার ফলে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমেছে স্কুল কামাই ও টিফিন পিরিয়ডে শিক্ষার্থী পালানোর হার। এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে তারা আরও জানান, বাচ্চাদের বিরাট উপকার হচ্ছে। পূর্বের তুলনায় ছাত্রছাত্রীর স্কুল পালানো হ্রাস হয়েছে। একই সঙ্গে বাড়িতে মায়েরাও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছে।
ওডি/এএসএল
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড