• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মামলার রায় কাল

নুসরাতের বাড়িতে সুনসান নীরবতা, দরজায় পুলিশ 

  এস এম ইউসুফ আলী, ফেনী

২৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৭:০৪
নুসরাত হত্যা
রাজপথে নুসরাত হত্যার বিচার দাবি (ফাইল ফটো)

‘এক সিরাজের (মাদরাসার অধ্যক্ষ) বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ায় আমার মেয়েকে তারা পুড়িয়ে মেরেছে। এখন তো ১৬ জন আসামি। সুতরাং আমরা কেমন চাপে আছি আপনারা বুঝে নিন।’ ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় ঘোষণার আগের দিন ঠিক এভাবেই অজানা আতঙ্কের কথা জানান নুসরাতের মা শিরীন আক্তার।

মাত্র সাড়ে ৬ মাসের মাথায় নিষ্পত্তি হতে চলেছে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ঘোষণা করা হবে রায়।

এ দিকে রায়কে কেন্দ্র করে নুসরাতের পরিবারে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাবা ও ভাইয়েরা সংবাদ মাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন। মা শিরীন আক্তারও মেয়ের শোকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) বিকালে পৌর শহরের উত্তর চরছান্দিয়ায় গেলে দেখা যায়, বাড়ি ঘিরে সুনসান নীরবতা। বাড়ির দরজায় যথারীতি পুলিশ পাহারা রয়েছে।

নুসরাতে মা শিরীন আক্তার বলেন, তিনি হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। তবে গত কিছুদিন ধরে তারা আতঙ্কগ্রস্ত বলেও জানান তিনি।

নুসরাতে মা বলেন, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহের চেষ্টা করলেও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পিবিআই প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে। একই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে মামলাটির বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে আসায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

তিনি বলেন, এ ঘটনায় দোষীদের এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে আর কোনো নুসরাত যেন এমন বর্বরতার শিকার না হয়। এছাড়া রায় কার্যকর পর্যন্ত বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তা আরো বাড়ানোর জন্যও দাবি জানান তিনি।

সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মঈন উদ্দিন আহমেদ বলেন, আলোচিত এ হত্যা মামলার রায়কে কেন্দ্র করে নুসরাতের বাড়িতে আরও নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। এছাড়া যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক রয়েছে।

নুসরাতের বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তা (ছবি : দৈনিক অধিকার)

অপরদিকে মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু বলেন, মাত্র ৬১ কার্যদিবসে বহুল আলোচিত এ হত্যা মামলার নিষ্পত্তি হতে চলেছে। যা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহম্মদ বলেন, ৮৮ জন সাক্ষীর স্বাক্ষ্য, মামলার আলামত উপস্থাপন ও আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে এ হত্যা মামলার প্রকৃত চিত্র আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে। আসামিদের প্রত্যেকের সর্বোচ্চ সাজা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলার কার্যালয়ে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি যৌন হয়রানির শিকার হন। এ ঘটনায় তার মা শিরীন আক্তার বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন। ওইদিনই স্থানীয়দের সহযোগিতায় পুলিশ সিরাজকে গ্রেফতার করে জেল-হাজতে প্রেরণ করে। ঘটনায় সিরাজের পক্ষে-বিপক্ষে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নেয় মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

সিরাজের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা তুলে নিতে নুসরাতের পরিবারকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। এক পর্যায়ে ৬ এপ্রিল পরীক্ষা কক্ষ থেকে ডেকে মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে কেরোসিন দিয়ে শরীরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় নুসরাতের। তার শোর চিৎকারে মাদরাসার শিক্ষক-কর্মচারী ও সেখানে কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যরা এগিয়ে এসে উদ্ধার করে দগ্ধ নুসরাতকে নেওয়া হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখান থেকে তাকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে কর্তব্যরত চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) প্রেরণ করেন।

ঢামেকের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান ৮ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তের জন্য প্রথমে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন পরবর্তীতে পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। এ মামলায় মোট ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মো. শাহআলম এ ঘটনায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। তদন্তে সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় পিবিআই অন্য ৫ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করলে আদালত তা অনুমোদন করেন। গত ২৭ জুন মামলার বাদী ও প্রথম সাক্ষী নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়।

হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি : এ মামলায় গ্রেফতারকৃত সোনাগাজী ইসলামিয় ফাজিল মাদরাসা অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা, স্থানীয় ছাত্রদল নেতা নূর উদ্দিন, ওই মাদরাসা শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি শাহাদাত হোসেন শামীম, নুসরাতের সহপাঠী উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম শরীফ, হেফজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর চার আসামি হলেন- উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন সভাপতি রুহুল আমিন, সোনাগাজী পৌর আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও কাউন্সিলর মাকসুদ আলম, মাদরাসার প্রভাষক নুরুল আবছার, মোহাম্মদ শামীম।

ওডি/এসএ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড