• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

১১ বছর বয়সেই পুরো পরিবারের দায়িত্ব নিল আশিক

  শাকিল রেজা, মেহেরপুর

১৭ অক্টোবর ২০১৯, ১৯:৩৫
চা বিক্রি করছে আশিক
দোকানে চা বিক্রি করছে আশিক ( ছবি : দৈনিক অধিকার )

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কষবা গ্রামের মো. রাশিদুল ইসলামের ছেলে আশিক আহাম্মেদ। বয়স মাত্র ১১ বছর। যে সময় বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার কথা ছিল সেই সময় পরিবারের বোঝা মাথায় নিতে হয়েছে আশিকের। সকাল আর সন্ধ্যা কাটে চা বিক্রির মধ্য দিয়ে। তার ছোট ভাই মুস্তাকিম, রিয়াজ ও বোন কুলছুমের মুখে হাসি ফোটাতে দাদার চায়ের দোকানকে এখন উপার্জনের উৎস হিসেবে নিয়েছে সে।

যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল সেই বয়সে ছোট ভাইদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে সংসারের বোঝা কাঁধে তুলে নিয়েছে কিশোর আশিক। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চা বিক্রি করে লেখা পড়া করাচ্ছেন ছোট ভাইদের। মা-বাবাহীন কিশোর আশিক সরকারি কোনো সহযোগিতা এর আগে না পেলেও গণমাধ্যমে তাকে নিয়ে লেখালেখির পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা সহযোগিতার আশার বাণী শোনা গেছে।

নিজের ভবিষ্যতকে নষ্ট করে ছোট ভাই বোনদের ভবিষ্যৎ গড়ার স্বপ্ন দেখে আশিক। প্রায় ৭ বছর আগে পরকীয়ায় জড়িয়ে স্ত্রী ও চার শিশু সন্তান রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করে আশিকের বাবা রাশিদুল। সে সময় ছেলে মেয়েদের নিয়ে চরম বিপাকে পড়েন আশিকের মা সানোয়ারা। রাশিদুল প্রতিবেশীদের চাপে প্রথম স্ত্রী ও চার সন্তানের দেখাশোনা করলেও তিন বছর আগে পথম স্ত্রী সানোয়ারা মারা গেলে সন্তানের সব দায়িত্ব ছেড়ে দেয় রাশিদুল।

চার শিশু সন্তানের মুখে ভাত তুলে দেওয়ার জন্য দাদা লালন তার পুরনো চায়ের দোকানটি চালু করেন। বৃদ্ধ দাদার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সব স্বপ্ন শেষ করে সংসারের বোঝা মাথায় তুলে নেয় কিশোর আশিক।

আশিকের দাদা লালন জানান, ছোট বেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিল আশিক। গ্রামের পাঠশালায় তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে সে। স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ হবে। কিন্তু সে স্বপ্ন ভেঙে গেছে তার।

বাবার দ্বিতীয় বিয়ে ও মায়ের মৃত্যু সব কিছু নিঃশেষ করে দিয়েছে আশিকের স্বপ্ন। বাবা-মা না থাকায় একদিকে যেমন খাবারের কষ্ট, অন্যদিকে বাসা নিয়ে থাকার সমস্যাও প্রকট। একটি ঝুপড়ি ঘরে স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে তাদের বসবাস।

ধানখোলা ইউপি চেয়ারম্যান আখেল আলী জানান, পাষণ্ড বাবার নৈতিকতার জন্য চারটি সন্তানের আজ এই দুর্দশা। একই গ্রামে বসবাস অথচ দ্বিতীয় স্ত্রীর প্ররোচনায় সন্তানদের কোনো খোঁজ খবর রাখে না বাবা রাশিদুল। কোনো কোনো দিন সন্তানেরা না খেয়ে থাকে। প্রতিবেশীরা এসব এতিমদের খবর নিলেও বাবা তাদের খোঁজ নেন না। মানবিক দৃষ্টিতে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াতে সকলের প্রতি আহ্বান তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দিলারা রহমান জানান, আমি বিষয়টি শুনেছি। যত দ্রুত সম্ভব তাদের সকল ধরনের সহায়তা প্রদান করা হবে।

ওডি/এসএএফ

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড