সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের কেজাউরা গ্রামে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৫ বছরের শিশু তুহিন। এ ঘটনায় শিশুর বাবাসহ ৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) সকালে উপজেলার রাজানগর ইউনিয়নের গচিয়া কেজাউড়া গ্রাম থেকে শিশু তুহিনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তুহিন রাজানগর ইউনিয়নের গচিয়া কেজাউড়া গ্রামের আবদুল বাছির মিয়ার ছেলে।
পুলিশ জানায়, হত্যাকারীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে শিশুটির কান, গলা ও পুরুষাঙ্গ কেটে পাশবিক কায়দায় হত্যা করে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। শিশুটির পেটে বিদ্ধ ছিল দুটি ধারালো ছুরি। তবে কে বা কারা, কী কারণে এ শিশুকে পাশবিক কায়দায় হত্যা করেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। শিশুর মরদেহে বিদ্ধ দুটি ছুরিতে সোলেমান ও সালাতুলের নাম লেখা রয়েছে। এ নাম দুটি নিয়ে শিশু হত্যার রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, অনেক ক্লু আমাদের হাতে এসেছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর বাবা-চাচা, চাচিসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
এ দিকে দুপুর ২টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান, ডিআইও ওয়ান সুনামগঞ্জ আনোয়ার হোসেন মৃধা, ডিবির ওসি মুক্তাদির আহমদসহ সিআইডির ফরেনসিক বিভাগের সদস্যরা।
এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার কিছু ক্লু আমাদের হাতে এসেছে, তদন্তের স্বার্থে আমরা এখনই কিছু বলতে চাচ্ছি না। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুর বাবা বাছির, চাচা আবদুল মোচাব্বির, জমশেদ, নাছির ও জাকিরুলসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। আসামিদের শিগগির গ্রেফতার করা হবে।
এ দিকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান দিরাইয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে নৃশংস এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে পারিবারিকভাবে নৃশংস ও ভয়াবহ এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে শিশু তুহিন।
কেন তাকে মারা হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কেন তাকে মারা হয়েছে, কীভাবে মারা হয়েছে, কতজন এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে সবই আমরা পেয়েছি। তবে তদন্তের স্বার্থে আমরা এখনই সবকিছু বলতে চাচ্ছি না। আটককৃত স্বজনদের মধ্যে ৩-৪ জনের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে।
তিনি জানান, গ্রামের দীর্ঘদিনের বিরোধ ও একাধিক মামলায় প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে এ হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা করা হয়েছে। নিহত শিশুর দেহে বিদ্ধ ছুরির হাতলে লেখা সোলেমান ও সালাতুলের নাম রয়েছে। তারা অন্য মামলার আসামি। তাদের ফাসাঁনোর জন্য তাদের নাম লেখা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া নিহত তুহিনের বাবাও একটি হত্যা মামলার আসামি হিসেবে আছেন।
স্বজনরা জানান, রবিবার রাতে খাবার খেয়ে পরিবারের সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। রাত ১২টার দিকে শিশু তুহিন প্রকৃতির ডাকে উঠলে তার মা বাহিরে নিয়ে যান। এরপর তাকে এনে আবার ঘুম পাড়িয়ে দেন। রাত ৩টার দিকে শিশুর মা-বাবা হঠাৎ দরজা খোলার শব্দ শুনে ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখেন তুহিন ঘরে নেই। এরপর পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা বাড়ির পাশে রক্ত দেখতে পান। এরপর কিছু দূরে সুফিয়ান মোল্লার উঠানে মসজিদের পাশে গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় তুহিনের গলাকাটা মরদেহ দেখতে পান তারা।
নিহত শিশুর বাবা আবদুল বাছির মিয়া জানান, গ্রাম্য বিরোধ থাকলেও আমার এই ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হবে আমি তা বিশ্বাস করি না।
স্থানীয়রা জানায়, ৪ বছর আগে গ্রামের গিয়াসউদ্দিনের স্ত্রী নিলুফা হত্যার ঘটনায় কেজাউরা গ্রাম দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এক পক্ষ এলাছ মিয়া ও নিহত শিশুর বাবা আবদুল বাছির গং এবং অন্য পক্ষ হলো আনোয়ার মেম্বার গং। সোমবার নিলুফা হত্যা মামলা আপোষ মীমাংসার জন্য নির্ধারিত তারিখ ছিল। কিন্তু নিহত শিশুর বাবা বাছির মিয়া আপোষের পক্ষে থাকলেও এলাছ মিয়াসহ কয়েকজন আপোষ মানতে রাজি ছিলেন না। বিরোধকে ঘিরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা তাদের।
ওডি/এসএএফ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড