• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ফাহাদ হত্যাকাণ্ড

শামীমের ট্রাকচালক বাবার অঝর কান্না, এত ত্যাগের কী মূল্য রইল!

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৮:৩৩
আবরার ফাহাদ
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার আসামি শামীম বিল্লাহ (ছবি : সংগৃহীত)

আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি বুয়েটের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র শামীম বিল্লাহ। তাকে গ্রেফতারের পর আদালত রিমান্ডে পাঠিয়েছেন। ট্রাকচালক বাবার অভাবের সংসারে দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে পড়াশোনা চালিয়েছেন এ শামীম। এসব কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার বাবা ট্রাকচালক আমিনুর রহমান ওরফে বাবলু সরদার।

শামীমের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের ইছাকুড় গ্রামে। তার একমাত্র বোন শ্যামনগর আতরজান মহিলা কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। শামীম রাজধানীতে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ জোগাতেন। গ্রামের খুবই মেধাবী ছেলেটিই আবরার হত্যা মামলার আসামি, এটা ভাবতেই শিউরে উঠছেন তার বাবা ও গ্রামবাসী।

শামীম বিল্লাহর বাবা আমিনুর রহমান জানান, শামীমের জন্ম সাল ১৯৯৮। সে ২০১৫ সালে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস পায়। পরে ঢাকায় সেন্ট জোসেফে ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালে এইচএসসিতেও গোল্ডেন এ প্লাস পায়। এরপর বুয়েটে ভর্তি হয়। শামীম পঞ্চম শ্রেণি সমাপনীতে সেরা ফলাফল ও অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পায়।

আমিনুর রহমান বলেন, ‘আমি ট্রাকের ড্রাইভার, অভাবের সংসার। এরপরও তাকে লেখাপড়া করাতে আমার তেমন একটা কষ্ট হতো না। তাকে গরিব ও মেধাবী হিসেবে ডাচ বাংলা ব্যাংক আর্থিক সহায়তা দেয়। ছেলে আমার ঢাকায় এক সচিবের বাসায় টিউশনি করে, আরও এক বাসায় টিউশনি করত। টিউশনির টাকা দিয়ে নিজের খরচ চালিয়েও সে আমাদের দিত। ছেলেটা ছোট বেলা থেকেই অনেক কষ্ট করেছে, কিন্তু এত ত্যাগের কী মূল্য রইল।’ এসব বলেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

শামীম বিল্লাহর মা মোসা. সালিমা বলেন, ‘ছেলেটি আমার কোনো দিন কারও সঙ্গে ঝগড়াও করেনি। গ্রামে এলে স্থানীয় শিক্ষার্থীরা তার কাছে পড়ালেখার বিষয়ে পরামর্শ চাইত। আমরা তো তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি। স্বপ্নেও ভাবিনি ছেলেটা আমার এমন বিপদে পড়বে।’

শামীমের বাবা আরও বলেন, ‘আমরা দরিদ্র মানুষ। আমার বাবা এখনো ইটের ভাটায় কাজ করেন, আমি ট্রাকের ড্রাইভার। আমার আরেক ভাই লাভলু মিয়া ঢাকা পরিবহনের ড্রাইভার। আমরা সবাই শামীমকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি, এমন সময় আমাদের মাথায় যেন পাহাড় ভেঙে পড়ল।’

তিনি বলেন, ‘আবরারকে যারা খুন করেছে, আমি একজন বাবা হিসেবে এ খুনের বিচার চাই। তাদের শাস্তি হোক।’

শামীম টিউশনির টাকা জমিয়ে এফজেড মোটরসাইকেল, ল্যাপটপ ও স্মার্টফোন কিনেছে বলেও জানান তিনি।

শামীমের গ্রামবাসীরা বলেন, শামীম নিরীহ প্রকৃতির ছেলে ছিল। সে ছাত্র রাজনীতি করত বলে জানা ছিল না, আবরারের হত্যার পর জেনেছি। গ্রামের কোনো অসাধু লোক বা কাজের সঙ্গেও তাকে দেখিনি। শামীমের পরিবারও খুব নিরীহ। কিন্তু কীভাবে এমন নৃশংসকাণ্ডে সে জড়াল তা ভাবতেও পারছি না।

শামীম শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকালে শ্যামনগর উপজেলার ভূরুলিয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে তার দূরসম্পর্কের ফুফুর বাড়ি থেকে গ্রেফতার হয়। শামীম বুয়েটের মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭তম ব্যাচে পড়েন। তিনি আবরার হত্যা মামলার এজাহার ভুক্ত ১৪ নম্বর আসামি।

গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে বুয়েটের শেরে বাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠায়। নিহত আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শের-ই বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

ওডি/এমআর

আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইল করুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড